সরবরাহ চেইনের প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত

রেকর্ড চাহিদা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটিশ কারখানাগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

১৯৭৭ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে শক্তিশালী চাহিদার মুখোমুখি হয়েছে ব্রিটিশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছবি: রয়টার্স

কভিডজনিত বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্রিটিশ অর্থনীতি। বিধিনিষেধ শিথিলে খুলে দেয়া হয়েছে পাব, রেস্তোরাঁ থেকে খুচরা বিক্রির দোকানগুলো। দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি অবস্থা শেষ হওয়ায় রেকর্ড পরিমাণ ভোক্তা চাহিদা তৈরি হয়েছে। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ দিচ্ছে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে সে অনুযায়ী পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হচ্ছে ব্রিটিশ কারখানাগুলো। মূলত সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধকতা, জ্বালানি সংকট কর্মী ঘাটতির কারণে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, পণ্যের রেকর্ড চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাজ্যের কারখানাগুলো। সরবরাহ চেইনে তীব্র সীমাবদ্ধতা উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত করছে। দ্য কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রি (সিবিআই) জানিয়েছে, ১৯৭৭ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে শক্তিশালী চাহিদার মুখোমুখি হয়েছে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। চাহিদা মেটাতে নির্মাতারা তৈরি পণ্যের মজুদ কমিয়ে দিচ্ছেন।

মাসভিত্তিক সমীক্ষায় সিবিআই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতিরও চাপ রয়েছে। তৈরি হওয়া পণ্যের প্রাপ্ততা ১৯৭৭ সালের পর সবচেয়ে দুর্বল ছিল।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৬ শতাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকের চেয়ে কম ক্রয়াদেশের কথা জানিয়েছে। রফতানি ক্রয়াদেশের পরিমাণ ২০১৯ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। এক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিকের চেয়ে কম ক্রয়াদেশের বিষয়টি জানিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ বিদেশী বাজার থেকে শক্তিশালী চাহিদা মেটাতে সংস্থাগুলো উৎপাদন কার্যক্রম বাড়িয়েছে। কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতিগুলো পুনরুদ্ধার হওয়ায় জোরালো চাহিদা দেখা দিয়েছে। গত তিন মাসে ৩৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বাড়ার কথা জানিয়েছে। সময়ে ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমেছে।

সিবিআইয়ের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ আনা লিচ বলেন, শীতকালীন মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পোৎপাদন খাতে শক্তিশালী ক্রয়াদেশ এবং উৎপাদন দেখতে পাওয়া ভালো। উৎপাদন বৃদ্ধি তিন মাস ধরে স্থির রয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদি গড় থেকে এগিয়ে রয়েছে। তবে সরবরাহ চেইনে তীব্র চ্যালেঞ্জ চাহিদা মেটাতে সংস্থাগুলোর সক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। রেকর্ড পরিমাণ ক্রয়াদেশের পাশাপাশি চলতি মাসে মজুদের পরিমাণও রেকর্ড নিম্ন স্তরে চলে গেছে।

তিনি বলেন, মাত্র শতাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের মজুদের পরিমাণ নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল। অন্যদিকে ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আগামী তিন মাসে দেশীয় গ্রাহকদের জন্য দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

সিবিআইয়ের তথ্য মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার সর্বশেষ প্রমাণ। এটি ১৬ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় ব্যাংক অব ইংল্যান্ড তার মুদ্রানীতি কমিটির পরবর্তী সভায় সুদের হার বাড়ানোর জল্পনাকে উসকে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

মাসের শুরুতে থ্রেডনিডল স্ট্রিট রেকর্ড নিম্ন সুদের হার দশমিক শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছিল। তবে চাকরির বাজার শক্তিশালী থাকলে আগামী মাসগুলোয় সুদের হার বাড়ানোর ইংগিত দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

প্যানথিয়ন ম্যাক্রোর প্রধান ব্রিটিশ বিশ্লেষক স্যামুয়ের টম্বস বলেন, সিবিআইয়ের দামের পূর্বাভাস জানুয়ারির মধ্যে পাইকারি পণ্যের দাম শতাংশ বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

কারখানা পর্যায়ের দাম কয়েক মাস পর ভোক্তা পণ্যের দামকে নির্দেশ করে। টম্বস বলেন, কারখানা পর্যায়ে শতাংশ দাম বৃদ্ধির অর্থ হলো, আগামী বসন্তে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি শতাংশের উপরে উঠছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন