বেশ কয়েক বছর পতনের পর নাগরিক অধিকার ও কমিউনিটি অ্যাকশনের মতো দাতব্য কাজে মার্কিন নাগরিকদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। বিশেষ করে মহামারীকালে এ আস্থা বেশ স্থিতিশীল থাকতে দেখা গেছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। সেখানে বলা হচ্ছে, মহামারীকালে লাখো মার্কিনি দাতব্য সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং এগুলোর ওপর আস্থা রেখেছেন।
গিভ ডট অর্গ সংগঠনের ব্যবস্থাপক ও গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক এলভিয়া ক্যাস্ট্রো বলেন, জাতিগত অধিকার আন্দোলন হঠাৎ করেই বিভিন্ন অলাভজনক সংগঠনের প্রতি মার্কিনিদের বিশ্বাসকে পরিবর্তন করেছিল। গবেষণায় এমন তথ্যও উঠে এসেছে যে, মানুষের গায়ের রঙের ওপর নির্ভর করে অনুদান দেয়া বা চাওয়ার পরিমাণ।
গিভ ডট অর্গের এ গবেষণার জন্য ২ হাজার ১০০ মার্কিন নাগরিকের মতামত নেয়া হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ জরিপ চালানো হয়। গবেষণায় তহবিল সংগ্রহকারীদের জন্য একটি বিশেষ তথ্য চিহ্নিত করা হয়েছে। সেটি হলো, শ্বেতাঙ্গ বাদে অন্য রঙের মানুষের কাছ থেকে দাতব্যের অর্থ সংগ্রহ তুলনামূলক সহজ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জরিপে অংশ নেয়া ২২ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান ও হিস্পানিকরা জানিয়েছেন, তাদের কাছে দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্থ দেয়ার জন্য অনেক বেশি অনুরোধ আসে। শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এ হার ৯ শতাংশ। এশীয় আমেরিকানদের হার ১১ শতাংশ।
আফ্রিকান আমেরিকান, হিস্পানিক ও এশীয় আমেরিকানদের ২৮ শতাংশ মনে করেন, তাদের কাছে যদি আরো সহায়তা চাওয়া হতো, তারা সেটি দিতেন। একই কথা বলেছেন শ্বেতাঙ্গদের ১৬ শতাংশ। আবার প্রতিবেদনে এটাও উঠে এসেছে যে, বহু মার্কিন নাগরিক এখনো দাতব্য খাতে অনুদান দিতে চান না।
জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ধর্মীয়, পশুকল্যাণ, শিক্ষা, আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা, যুব উন্নয়নের মতো খাতে তুলনামূলক কম অর্থ অনুদান পাওয়া গেছে। এ সময় বেড়েছে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, নাগরিক অধিকার ও কমিউনিটি অ্যাকশন সম্পর্কিত সংস্থাগুলোয় অনুদানের পরিমাণ।
আবার দেখা গেছে, ৫১ শতাংশ আফ্রিকান আমেরিকান এমন সংগঠনকে অনুদান দিতে পছন্দ করেন যেগুলো কৃষ্ণাঙ্গদের উন্নয়নে কাজ করে।
জ্যাকসন ল্যাবরেটরির ডাইভারসিটি গিভিং অফিসার স্যাম গ্র্যাডি বলেন, নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোকে সমস্যা সমাধানকারী হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন দাতারা। তাছাড়া গত কয়েক বছরে এ খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের বিপুল আগ্রহও তৈরি হয়েছে। অলাভজনক দাতব্য সংগঠনগুলোর প্রতি মানুষের বিশ্বাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারা এগুলোকেই সমাধানের বিষয় বলে মনে করছেন।
স্যাম গ্র্যাডি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেন তারা মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রের গবেষণা কাজে সহায়তা করতে দাতাদের বুঝিয়ে বলে। এছাড়া বিভিন্ন বৃত্তি খাতে অর্থের জোগান দিতেও তাদের উৎসাহ দেয়া হয়।
জরিপে দেখা যায়, ২০২০ সালে ১৮ শতাংশ মানুষের দাতব্য সংস্থার ওপর উচ্চ আস্থা ছিল। ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ হার ছিল ১৭ থেকে ১৯ শতাংশ। একই সময়ে কিছু মানুষ বলছে যে, দাতব্য খাতের ওপর আস্থা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
বিষয়টি নিয়ে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমেরিটাস অব পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ও ফিলানথ্রপিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক লেসলি লেংকওস্কি বলেন, গত কয়েক বছরে বহু মানুষ দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা রেখেছে। তবে সব অভিজ্ঞতা ইতিবাচক ছিল না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, খাদ্য ব্যাংকগুলোর সামনে দীর্ঘ সারি দাতব্য প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রভাব ফেলেছে।