বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্লকচেইনে প্রথম বাণিজ্য সম্পন্ন

বণিক বার্তা ডেস্ক

বাংলাদেশের ইস্পাত খাতের অন্যতম একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রথমবারের মতো কাগজবিহীন রফতানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে ভারতের টাটা স্টিল। এ প্রক্রিয়ায় ব্যবহার হয়েছে ব্লকচেইন প্রযুক্তি। বাংলাদেশ ও ভারতের কোনো কোম্পানির মধ্যে কাগজবিহীন বাণিজ্য সম্পন্নের ঘটনা এটিই প্রথম। খবর মিন্ট ও ইউএনআই। 

জানা গেছে, ইস্পাত শিল্পে এর আগে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার করেছিল টাটা স্টিল। চলতি বছরের এপ্রিলে এইচএসবিসি দ্বারা পরিচালিত ব্লকচেইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে এ ধরণের লেনদেন করে টাটা স্টিল। এসময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি কোম্পানির সঙ্গে বাণিজ্য অর্থায়ন সংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন করে প্রতিষ্ঠানটি। 

বাংলাদেশি কোম্পানির সঙ্গে সর্বশেষ লেনদেনটি সম্পন্ন করতে সহযোগীতা করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ইন্ডিয়া। এটি পরিচালিত করা হয় কনট্যুর ব্লকচেইচ ট্রেড প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। এ পদ্ধতিতে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ব্যাংক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক অংশীদাররা পরস্পর লেনদেন সম্পন্ন করতে পারে। 

এ লেনদেন সম্পন্ন করতে টাটা স্টিলের পক্ষে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কর্তৃক পরামর্শ ও লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) ইস্যু করা হয়েছে। ফলে কনট্যুরের নির্দেশনাবলী অনুসরণে ক্রেতা ব্যাংকের কাছে প্লাটফর্মটি ব্যবহার করে টাটা স্টিলের পক্ষে প্রয়োজনীয় নথিপত্র দাখিল করা সহজ হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে সামগ্রিক টার্ন-অ্যারাউন্ড-টাইম সপ্তাহ থেকে কমিয়ে দিনে নামিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি বিভিন্ন অসঙ্গতি কমিয়ে আনাও সহজ হয়ে উঠে। 

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ট্রেড অ্যান্ড ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হেড গৌরভ ভাটনগর বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হলো বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহত্ ব্যবসায়িক অংশীদার ভারত। টাটা স্টিল ও বাংলাদেশি কোম্পানির মধ্যকার এমন অসাধারণ লেনদেনের অংশীদার হতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। সামনের দিনগুলোতে আমরা ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায়িক লেনদেনে আরো প্রসার দেখতে পারবো বলে আশা করছি। 

টাটা স্টিলের দেয়া তথ্যমতে, এ পদ্ধতি ব্যবহার করার ফলে খুব সহজেই এলসি হস্তান্তর করা যায়। একইসঙ্গে দুইটি ভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র ডিজিটাল মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়। প্লাটফর্মটি ব্যবহার করে দুইপ্রান্তে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে নথি দাখিল করার সুবিধা বিভিন্ন কাগজপত্রের প্রক্রিয়াকরণ এবং সময় সাশ্রয় করে। পাশাপাশি এটি পরিচালন দক্ষতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকাও রাখে।  

টাটা স্টিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফ্লাট প্রোডাক্টস) রাজিব সিঙ্গাল বলেন, আমরা এখন আগের তুলনায় অনেক আত্মবিশ্বাসী। আমরা প্রথমবারের মতো বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করতে পেরেছি। এ প্রযুক্তির পাশাপাশি টাটা স্টিলের উদ্যম ব্যবসায়িক কাজে দক্ষতা আরো বাড়াবে। একই সঙ্গে এটি গ্রাহকদের নিকট প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি আরো উন্নতি করতে সক্ষম হবে। 

তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারীকালীন আমরা বুঝতে পেরেছি যে সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার এ লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এরমাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন ডিজিটালাইজেশন করার প্রক্রিয়া আরো ত্বরান্বিত হবে। 

টাটা স্টিলের তথ্যমতে, ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে উভয় পক্ষই রিয়েল টাইমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম। এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা রিয়েল টাইম লেনদেনও সম্পন্ন করতে পারে। 

এক বিজ্ঞপ্তিতে টাটা স্টিল জানায়, এলসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে নথিপত্র প্রস্তুতে সময় কমিয়ে আনা এবং পরিচালন অদক্ষতা বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত নিয়মে এলসি সংক্রান্ত নথিপত্র প্রস্তুতে যে সময় ব্যয় করা হয় এতে তার চেয়ে অনেক কম সময়ে লেনদেন করা সম্ভব। এছাড়াও এ প্রযুক্তির ব্যবহার লেনদেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে। এ প্লাটফর্মের মাধ্যমে কেবলমাত্র অপরপ্রান্তের থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠনের সঙ্গে তথ্য লেনদেন করা যায়, যা অপরিবর্তনীয়। ফলে তথ্য বিভ্রান্তির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে। পাশাপাশি সকল পক্ষ সংযুক্ত থাকার ফলে তথ্য জালিয়াতির ঝুঁকি হ্রাস ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন