লাল মোরগের ঝুঁটি দেখে দর্শক হতাশ হবে না

মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

জ্যোতিকা জ্যোতি

রিচালক নুরুল আলম আতিক আগেই বলেছেন, লাল মোরগের ঝুঁটিতে কোনো নায়ক-নায়িকা নেই। সময়টাই সিনেমার নায়ক। বাকিরা চরিত্র, যারা একটা সময়কে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই সময়, যে সময়টা জাতির গৌরব আর গর্জনের সুতোয় গাথা। ত্যাগ আর অর্জনের তুলিতে আঁকা। মহান বেদনার সময়টাকে যারা জীবন্ত করছেন তাদের অন্যতম জ্যোতিকা জ্যোতি। লাল মোরগের ঝুঁটিতে জ্যোতি অভিনয় করছেন দীপালি চরিত্রে। দীপালি সাহার চরিত্র নিয়ে আপাতত কিছু জানা যাচ্ছে না। দীপালি কেমন, কী বলতে চায়, জানতে যেতে হবে সিনেমা হলে। আপাতত জানা গেল সিনেমার পেছনে জ্যোতির শ্রম চেষ্টার গল্প। সিনেমার শুরুর গল্প জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ২০১৪ সালের কথা। তখন আতিক ভাইয়ের সঙ্গে আমরা স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ করতাম। তার হাতে বেশ কয়েকটা স্ক্রিপ্ট ছিল। কিন্তু প্রডিউসার পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার মনে হলো সরকারি অনুদান ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি অনুদানের জন্য প্রস্তাব জমা দিতে বললাম। আতিক ভাই অন্য একটা গল্প জমা দেয়ার কথা ভাবছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে আমি এটা জমা দিতে বলছিলাম। একেবারে শেষ দিন কাগজপত্র রেডি করে জমা দিলাম। অনুদানের জন্য মনোনীতও হলো। গল্পের যে বিশাল ক্যানভাস ছিল, সে অনুযায়ী বানাতে গেলে বাজেটে কুলাত না। ফলে গল্পের ধরন কিছুটা পরিবর্তন করে বাজেটের ভেতর আনার চেষ্টা করেছেন আতিক ভাই। এর জন্য অবশ্য জ্যোতিকে ঝাড়ি খেতে হয়েছে বলে জানান।

কয়েকদিন আগে ছবিটা দেখেছেন জ্যোতি। ছবি দেখার পর অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে নন্দিত নরকের ইয়াসমিন বলেন, কয়েকদিন আগে ছবিটা দেখলাম। আমি মুগ্ধ হয়েছি। আতিক ভাই তো আতিক ভাই-ই।

ছবিটার ধরন নিয়ে বলেন, আমি চারটা মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় অভিনয় করেছি। সেগুলো চরিত্রনির্ভর। কোনো একটা পরিবারনির্ভর। সিনেমাটা সম্পূর্ণ অন্য রকম। এটা কারো ব্যক্তিগত গল্প নয়। নির্দিষ্ট কোনো নায়ক-নায়িকার গল্প নয়। একটা এলাকার গল্প। এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা বড় কিছু ঘটলে সবার ওপর প্রভাব পড়ে। সিনেমার সব চরিত্রের ওপর গল্পের প্রভাব তেমন। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সব মানুষের গল্পের সিনেমা এটা।

সিনেমার শুটিং শুরু হয় ২০১৬ সালের মার্চে। মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০১৯ সালে আবার শুরু হয়। শেষ হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। লম্বা বিরতি নিয়ে শুটিং করলে চরিত্র নির্মাণে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন। লাল মোরগের ঝুঁটি সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে কিনা জানতে চাইলে জীবনঢুলীর নায়িকা বলেন, আমার ক্যারেক্টারের একটা বিশেষত্ব আছে, যার শারীরির পরিবর্তনটাও গল্পের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ফলে আমার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের বিষয়টা মোটেও সংকট তৈরি করেনি। একটুও বোঝা যায়নি যে লম্বা বিরতি দিয়ে শুটিং করা। এছাড়া আতিক ভাইয়ের সঙ্গে কাজ শুরু করলে খুব চাপ অনুভব করি। তিনি আমাদের চরিত্রের ভেতরে রাখেন। ফলে বিরতির কোনো প্রভাবই দেখা যাবে না।

লাল মোরগের ঝুঁটির একটা অংশের শুটিং হয়েছে জ্যোতিকা জ্যোতির নিজের এলাকায়। ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মানুষ তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সিনেমাটার জন্য, যা অভিনেত্রীর জন্য অন্য রকম এক অনুভূতি।

নুরুল আলম আতিকের সঙ্গে কাজের চ্যালেঞ্জ জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আতিক ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার বড় চ্যালেঞ্জ হলো ক্যারেক্টার হয়ে ওঠা। ক্যারেক্টার হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কাজ করা যায় না। না হলে অনেক সিন ফেলে দেন তিনি। ক্যারেক্টার হয়ে উঠলে একটা কম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রকেও গুরুত্বপূর্ণ করে দেন তিনি। পাসিং শট দিতে আসা শিল্পী ভালো করলে গল্পের ফোকাস পরিবর্তন করে সেই পাসিং শট দেয়া শিল্পীকেই হিরো বানিয়ে দেন। চরিত্রের সঙ্গে ইনভলভ হতে হয় অনেক। 

লাল মোরগের ঝুঁটি নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে গৌরীপুরের মেয়ে বলেন, আমি অনেক খুশি যে সিনেমার মাধ্যমে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হতে পেরেছি। ছবিটা দেখলে যে কারোরই ভালো লাগবে। সবাই নিজেকে খুঁজে পাবে। আমি চাই মানুষের সিনেমা দেখার অভ্যাস ফিরে আসুক। সবাই হলে যাক। ছবিটা দেখার পর কেউ হতাশ হবে না।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায় লাল মোরগের ঝুঁটি। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন নাট্যকার নির্মাতা মাতিয়া বানু শুকু। নুরুল আলম আতিকের কাহিনী, চিত্রনাট্য পরিচালনায় কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল গৌরীপুরের বিভিন্ন জায়গায় এর শুটিং হয়।

পাণ্ডুলিপি কারখানার ব্যানারে ছবিতে জ্যোতিকা জ্যোতি ছাড়াও বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন লায়লা হাসান, আহমেদ রুবেল, অশোক ব্যাপারী, আশীষ খন্দকার, জয়রাজ, শিল্পী সরকার, ইলোরা গওহর, ভাবনা, দিলরুবা দোয়েল, স্বাগতা, শাহজাহান সম্রাট, দীপক সুমন, খলিলুর রহমান কাদেরী, সৈকত, যুবায়ের, অনন্ত, মতিউল আলম, হাসিমুনসহ কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল গৌরীপুর এলাকার সাধারণ মানুষ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন