ট্রেজারি বিল-বন্ড

ডিসেম্বরেই সেকেন্ডারি মার্কেট চালু করতে চায় সরকার

মেসবাহুল হক

সরকারি সিকিউরিটিজ তথা বিল-বন্ড ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম শক্তিশালী করতে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সেকেন্ডারি মার্কেট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পরীক্ষামূলকভাবে একটি সরকারি (ট্রেজারি) বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এটি সফল হলে আগামী মাস থেকে দেশের দুই পুঁজিবাজারে পুরোদমে কার্যক্রম চালু হবে।

সম্প্রতি স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং প্লাটফর্মে ট্রেজারি বিল বন্ড ক্রয়-বিক্রয় বাস্তবায়নের অগ্রগতিবিষয়ক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট সামষ্টিক অর্থনীতি) মো. এখলাছুর রহমান। সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি সিকিউরিটিজগুলোর চাহিদা থাকলেও কার্যক্রম শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সম্পাদনা হচ্ছে। ফলে সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি ট্রেডিং এখনো আশানুরূপভাবে সম্প্রসারিত হয়নি। বন্ড মর্কেটের সম্প্রসারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং একটি মার্কেট বেইজড ইল্ড কার্ভের জন্য সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি ট্রেডিং আরো বিস্তৃত করা প্রয়োজন বলে সভায় আলোচনা করা হয়।

অর্থ বিভাগ বলছে, আন্তর্জাতিক সুচর্চা অনুসরণে বাংলাদেশের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সেকেন্ডারি প্লাটফর্মে ট্রেজারি বিল বন্ডের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাই সরকারি বিল-বন্ডগুলো সেকেন্ডারি মার্কেটে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। কার্যক্রম শুরু করতে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ যেকোনো সিকিউরিটিজ লিস্টিংয়ের পর তা ট্রেডিংয়ের জন্য তাদের ডিপোজিটরি সংস্থা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) সঙ্গেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাটাবেজের লিংক করতে হবে।

প্রসঙ্গে বৈঠকে বিএসইসির পক্ষে বলা হয়েছে, কার্যক্রমটি বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ সময়ব্যাপী তারা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে কাজ করছে। তবে তারা একটি সমন্বিত রূপরেখা তৈরি করতে পারেনি। তাই সভায় একটি সমন্বিত রূপরেখা প্রতিষ্ঠা করার ওপর জোর দেয়া হয়। এক্ষেত্রে বিএসইসিতে অন্তর্ভুক্ত বেনিফিসিয়ারি ওনার আইডি (বিওআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিজনেস পার্টনার আইডি (বিপিআইডি) হিসাবগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসি টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করেছে। যাতে প্রাথমিক জটিলতা নিরসন করা হয়েছে। সিডিবিএলের তথ্যাবলি বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয়ের লক্ষ্যে এর কারিগরি দিকগুলো পর্যালোচনা করেছে। প্রয়োজনে আরো একাধিকবার বৈঠক করে বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হবে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে বন্ড খুব বেশি পরিচিত নয়। দেশে বন্ড মার্কেট এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি। যে কারণে মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতা খুবই কম থাকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রয়োজনে বন্ড সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করা যায় না। যার জন্য বিনিয়োগকারীরা বন্ড কিনতে আগ্রহ দেখায় না। তবে আগামীতে টাকার অংকে বন্ডের ইউনিট ছোট স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে লেনদেনযোগ্য হওয়ায়, বন্ড মার্কেটে বিপুল অর্থের বিনিয়োগ আসবে।

প্রসঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, এরই মধ্যে গত অক্টোবরে একটি সরকারি বন্ডের লেনদেন প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইতে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে। বন্ডের ক্রয়-বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত সুবিধা-অসুবিধা পর্যালোচনার পর আগামী মাস থেকে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হবে।

উল্লেখ্য, ১৬ বছর পর গত ১৪ অক্টোবর ডিএসইতে সরকারি (ট্রেজারি) বন্ডের পরীক্ষামূলক লেনদেন হয়। এর আগে ২০০৫ সালে ট্রেজারি বন্ডের সেকেন্ডারি বাজারের কার্যক্রম উদ্বোধনের দিনে একটি লেনদেন হয়েছিল। এরপর -২০ বছর মেয়াদি ২২২টি বন্ড তালিকাভুক্ত হলেও কখনই বাজারে এসব বন্ডের লেনদেন হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু ছিল। দেশের বিনিয়োগকারীদের ফিক্সড ইনকাম খাতে বিনিয়োগের সুযোগ করে দিতে সাত বছর ধরে ট্রেজারি বন্ড বাজারে কার্যকরভাবে চালুর চেষ্টা করছে ডিএসই। নিয়ে দফায় দফায় বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, ১৪ অক্টোবর বেসরকারি সিটি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দুই ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের এক হাজার বন্ড ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে কেনাবেচা হয়েছে। যার বাজারমূল্য ছিল লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা। লেনদেন ছিল পরীক্ষামূলক। গত ১৬ বছরে ডিএসইতে ২২২টি ট্রেজারি বন্ড তালিকাভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে ৯৫টির মেয়াদ রয়েছে। বাকি ১২৭টির মেয়াদ শেষ। ১৪ অক্টোবর লেনদেন শুরু হওয়া ১০ বছর মেয়াদি বন্ডটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ২০ জানুয়ারি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন