ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ৭১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ

পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাননি নিরীক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের শেয়ার বন্ডে ৭১৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে পর্যাপ্ত যথাযথ তথ্যপ্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন কোম্পানিটির নিরীক্ষক। এছাড়া জমি নির্মাণ বাবদ ২৯০ কোটি টাকার অগ্রিমের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণের ঘাটতি রয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০২০ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে বিষয়ে কোয়ালিফায়েড অপিনিয়ন দিয়েছে কোম্পানিটির নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেয়া নিরীক্ষককের মতামতে বলা হয়েছে, ৭১৮ কোটি টাকার বিনিয়োগ আগের বছরগুলোতে করা হয়েছে এবং এসব বিনিয়োগ থেকে কোম্পানির কোনো আয় হচ্ছে না। তাছাড়া বাংলালায়ন কমিউনিকেশনস লিমিটেডের বন্ডে ৯৮ কোটি টাকা এবং পিএফআই সিকিউরিটিজের বন্ডে ১৮৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের মূল্য কমে যাওয়ার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে সেটিও আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়নি। আইনি মতামতের ভিত্তিতে কোম্পানি ক্ষতি দেখায়নি বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। আর্থিক প্রতিবেদনে অন্যান্য অগ্রিম খাতে থাকা ১২২ কোটি টাকার বিষয়টি নিরীক্ষকের পক্ষে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জমি নির্মাণ খাতের অগ্রিম অর্থের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও যাচাই করতে পারেননি নিরীক্ষক।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের আর্থিক প্রতিবেদনে ১৮৩ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন বাবদ স্থায়ী সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থ এফআইএলআইসি কোঅপারেটিভ এবং পিআইএলআইসি কোঅপারেটিভের অনুকূলে সমন্বয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে এফআইএলআইসি কোঅপারেটিভের নামে নিবন্ধিত ৭১ কোটি টাকা পিআইএলআইসি কোঅপারেটিভের ঋণ হিসেবে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে ১০১ কোটি টাকা ২০১৩ সাল থেকে বেশ কয়েক দফায় এফআইএলআইসি কোঅপারেটিভের অনুকূলে অগ্রিম হিসেবে সমন্বয় করা হয়েছে। এসব ঋণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পর্যাপ্ত যথাযথ তথ্যপ্রমাণ পাননি নিরীক্ষক।

নিরীক্ষক তার মতামতে আরো জানিয়েছেন, কোম্পানিটি ভবনের পুনর্মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবচয় ধার্য করেনি। অবচয় ধার্য করা হলে ভবনের পুনর্মূল্যায়নের পরিমাণ ১১৭ কোটি টাকা এবং গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে জীবন বীমা তহবিলের পরিমাণ ১১৭ কোটি টাকা কমে যেত।

নিরীক্ষককের এসব মতামতের বিষয়ে জানতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী আলমগীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আর্থিক অনিয়মের কারণে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গত বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। বিশেষ নিরীক্ষায় আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিও উঠে আসে। ফলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে আরো যাচাই-বাছাইয়ের স্বার্থে বছরের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সদস্যদের সমন্বয়ে একটি যৌথ অনুসন্ধান তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বছরের সেস্টেম্বরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্সের পর্ষদ পুনর্গঠন করে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় কমিশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক . মো. রহমত উল্লাহকে পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। কোম্পানিটির পর্ষদে নিয়োগ পাওয়া অন্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী প্রধান পরামর্শক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক . মো. রফিকুল ইসলাম, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিকরুল হক এবং নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চৌধুরী।

পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ আগামী ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠনের পাশাপাশি নগদ অর্থ সম্পদ ফেরত আনতে বলা হয়েছে। এছাড়া যারা গত ১০ বছরে কোম্পানিটিতে আর্থিক অপরাধ মানি লন্ডারিং করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সর্বশেষ নানা অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ হেমায়েত উল্লাহকে অপসারণ করেছে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন