লন্ডনে রোড শোতে সালমান এফ রহমান

দেশে বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত সুবিধা তৈরি করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে বিএসইসি ও বিডা আয়োজিত রোড শোতে উপস্থিত অতিথিরা ছবি: পিআইডি

বাংলদেশ বর্তমানে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। এজন্য প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। এই বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হচ্ছে। বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি গতকাল যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বিনিয়োগ সম্মেলনে প্যানেল আলোচক হিসেবে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, দূরদর্শী নেতৃত্ব, বেসরকারি খাত ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের কারণে গত এক দশকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগ সহযোগী। যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে আমরা সবুজ অর্থায়ন, অবকাঠামো খাতের মেগা প্রকল্পের জন্য বিকল্প অর্থায়ন, করপোরেট বন্ড, মিউনিসিপল বন্ড, শরিয়াহ বন্ড, গ্রিন বন্ড ব্লু বন্ডে বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছি। বাংলাদেশে ইলেকট্রিক গাড়ির শিল্প গড়ে তুলতে যুক্তরাজ্যের সহায়তা প্রয়োজন। এছাড়া কৃষিপণ্য রফতানি, সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ হাইড্রোজেনভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণেও দেশটির সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু করেছে। তবে আমাদের যাত্রা খুব একটা মসৃণ ছিল না। অনেক সমস্যা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে আজকের অবস্থানে পৌঁছতে হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, স্বাক্ষরতার নিম্নহার, লিঙ্গবৈষম্য, বিদ্যুৎ ঘাটতি প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকার মতো বেশকিছু মান্ধাতার আমলের ধ্যান-ধারণা এখনো বিশ্বব্যাপী রয়ে গেছে। অথচ এই প্রত্যেকটি সূচকেই স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমরা অনেক উন্নতি করেছি। অন্যান্য সামাজিক আর্থিক সূচকেও আমরা অনেক এগিয়েছি। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে আমরা এগিয়ে আছি। ডব্লিইএইচও, আইএলও, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড এইচএসবিসি আমাদের উন্নতির বিষয়ে উচ্চকিত প্রশংসা করছে। ফিঞ্চ, মুডি স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের মতো ঋণমান সংস্থা আমাদের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন দিচ্ছে। তাই আপনারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যনীতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পেনি মরডেন্ট বলেন, অঞ্চলে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমরা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক অংশীদার হতে চাই।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান . হোসে ভিনালস বলেন, অতিমারীর প্রভাব বিশ্বে এখনো বিদ্যমান। অবস্থায়ও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা দেশটির অর্থনীতির সহনশীলতার পরিচয় বহন করে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের প্রক্ষেপণ অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

প্যানেল আলোচক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা বর্তমানে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে উন্নীত হওয়ার পর্যায়ে রয়েছি। এজন্য আমাদের বেশকিছু ইস্যু বিষয় রয়েছে, যেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাদের প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। আজকের অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যও তা-ই। এই বিনিয়োগ আকর্ষণে আমরা দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা তৈরি করছি। কপ-২৬ সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশের একটি। টেকসই প্রবৃদ্ধি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক। বিশ্বের ১০টির মধ্যে আটটি সবুজ কারখানাই আমাদের। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পর আমাদের নতুন জিএসপি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের মুদ্রা বিনিময় হার অনেক স্থিতিশীল। এক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকলেও সেটি অনেক কম।

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশে আটটি ইপিজেড রয়েছে। আরেকটি নির্মাণাধীন রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ ঝামেলামুক্ত বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো তৈরি করেছি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নেয়ার সুযোগ রয়েছে আমাদের। বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের মধ্যে আমরা বিশ্বাস তৈরি করতে চাই।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন