থাইরয়েড সমস্যার লক্ষণ ও চিকিৎসা

বণিক বার্তা অনলাইন

ছবি-ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সম্প্রতি কি আপনার ওজন হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গেছে? দীর্ঘসময় ক্লান্ত বোধ করা, ঠাণ্ডা অনুভব করা, ত্বকের শুষ্কতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বল মনোযোগের মতো ঘটনাও ঘটছে। তাহলে নিজের থাইরয়েড কার্যক্রম ঠিকঠাক আছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। 

ভারতের তামিল নাড়ুর ট্রিচির ড. ভিগনেস এন্ডোক্রাইন অ্যান্ড ডায়াবেটিস সেন্টারের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ড. জি ভিগনেস এই পরামর্শ দেন। 

থাইরয়েড মূলত একটি প্রজাপতি আকৃতির অন্তঃস্রাবী গ্রন্থি যেটা আমাদের গলার কাছে থাকে। এটা থাইরক্সিন নামে একটি থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে শরীরের বিপাকীয় (কার্যকরী) প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। 

কয়েক ধরনের থাইরয়েড সমস্যা দেখা যায়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে , থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হওয়া (হাইপোথাইরয়েড), এই হরমোন বেশি নি:সরণ হওয়া (হাইপারথাইরয়েড), থাইরয়েড ফোলা, থাইরয়েড টিউমার ও থাইরয়েড ক্যানসার। শরীরে থাকা টিস্যুগুলোর বিরুদ্ধে শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য হাইপো আর হাইপার থাইরয়েডই সাধারণত বেশি হতে দেখা যায়। মূলত নারীরাই এই সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন।

ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, ত্বকের শুষ্কতা ছাড়াও হাইপোথাইরয়েড হলে নারীদের ঋতুচক্রে ও গর্ভধারণে অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। শিশুদের বৃদ্ধিতে বাধা ও বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হওয়ার সমস্যাও দেখা দেয় এ কারণে। 

অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডের সমস্যায় হঠাৎ করেই কমে যেতে পারে ওজন। দেখা দিতে পারে কাঁপুনি, উদ্বেগ, অত্যাধিক ঘাম এবং ঋতুচক্রে কম রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা। 

তাই এসব সমস্যা দেখা দিলেই টিএসএইচ, টি৪ ও টি৩ পরীক্ষা করার করার পরামর্শ এই বিশেষজ্ঞের। 

হাইপোথাইয়েডের চিকিৎসাটা একটু দীর্ঘ। প্রতি ৬ মাস বা একবছর পর পর থাইরয়েডের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হয়। নিশ্চিত থাকুন, সঠিক ডোজে দীর্ঘসময় ওষুধ গ্রহণ করলেও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। হাইপার থাইরয়েডের ক্ষেত্রে অ্যান্টি থাইরয়েড ওষুধ দিয়ে সেটার উৎপাদন বন্ধ করা হয়। ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ১৮ মাস থেকে ২ বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তাতেও সমস্যার সমাধান না হলে রেডিও আয়োডিন বিমোচন বা সার্জারি করার দরকার পড়ে বলেই জানান ড. ভিগনেস।

থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন স্বাভাবিক করার জন্য আয়োডিনের গুরুত্ব অনেক। খাবারে আয়োডিন কম থাকলে থাইরয়েড কম উৎপন্ন হবে অথবা থাইরয়েড ফুলে যাবে। সেই ফুলে যাওয়াকেই বলা হয় গলগণ্ড রোগ। সেজন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া খুব জরুরি। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণ লবণকে ছাড়িয়ে হিমালয়ান পিংক সল্টের কোনো বাড়তি সুবিধা নেই বলেই মন্তব্য গবেষকদের।

এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাবার দাবার, ব্যয়াম ও যোগব্যায়ামের কোনো প্রভাব নেই। তাই এই সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের কোনো খাবারে বাধ্যবাধকতাও নেই। 

গর্ভে ভ্রুণের মস্তিস্ক গঠনে বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে বড় ভূমিকা রাখে থাইরক্সিন। এই সময়ে যাদের থাইরক্সিনের ঘাটতি থাকে তাদের ওষুধের ডোজ বাড়িয়ে দেয়া হয়। সেজন্য গর্ভধারণ নিশ্চিত হওয়া সাথে সাথেই এন্ডোক্রিনোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ ড. ভিগনেসের।

দীর্ঘ সময়ের চিকিৎসা হওয়ায় একটু ধৈর্য নিয়েই রাশ টানতে হবে থাইরয়েড সমস্যার।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন