ডিএসইর শীর্ষ পর্যায়ে অস্থিরতা

সিএফওর পর সিআরওর পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের শীর্ষ পর্যায়ে অস্থিরতা চলছেই। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা (সিআরও) পদে নিয়োগ নিয়ে বিতর্কিত হয়েছে এক্সচেঞ্জটি। এবার যোগদানের দুই মাসের মাথায় এক্সচেঞ্জটির সিআরও পদত্যাগ করেছেন। এর আগে গত মাসে ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তাও (সিএফও) পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, নভেম্বর এক্সচেঞ্জটির এমডি তারিক আমিন ভূঁইয়ার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন সিআরও মো. শওকত জাহান খান। পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। নিয়মানুসারে ডিএসইর রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটিতে (আরএসি) সিআরওর পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. সাইফুর রহমান মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সিআরও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি দুই সপ্তাহের ছুটিতে রয়েছেন। তার পদ্যতাগের বিষয়ে বিধিমালা অনুসারে আরএসি কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

পদত্যাগপত্রে ব্যক্তিগত কারণের কথা উল্লেখ করা হলেও ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এক্সচেঞ্জটিতে কাজের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন না নতুন সিআরও। এক্সচেঞ্জটিতে তিনি তার প্রত্যাশিত সম্মান মর্যাদা পাচ্ছিলেন না বলেও তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছে জানিয়েছিলেন।

এর আগে বছরের অক্টোবর ডিএসইর সিএফও আব্দুল মতিন পাটোয়ারি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তার পদত্যাগ কার্যকর হবে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে। তিনিও ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। যদিও ডিএসই সূত্র বলছে, সম্প্রতি ডিএসইর পর্ষদ সি লেভেলের কর্মকর্তাদের পদ স্থায়ী থেকে চুক্তিভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত মানতে না পেরেই সিএফও পদত্যাগ করেছেন।

২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর অসুস্থতার কারণে ডিএসইর তত্কালীন সিআরও একেএম জিয়াউল হাসান খান পদত্যাগ করার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত সিআরও দিয়ে চলছিল এক্সচেঞ্জটির কার্যক্রম। কয়েক দফা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও সিআরও পদে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারছিল না এক্সচেঞ্জটি। সিআরও পদে নিয়োগ নিয়েও কম নাটক হয়নি এক্সচেঞ্জটিতে। ডিএসইর একজন প্রভাবশালী পরিচালকের ছেলের বন্ধু হওয়ার সুবাদে যোগ্যতা, দক্ষতা পেশাগত অভিজ্ঞতায় ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এম আশিক রহমানকে এমডি পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে এক্সচেঞ্জটির পর্ষদ। যদিও শেষ পর্যন্ত তার নিয়োগ অনুমোদন করেনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পরবর্তী সময়ে তাকে এক্সচেঞ্জটির সিআরও হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে ডিএসইর পর্ষদ। যদিও এবারো তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এক্সচেঞ্জটির মানবসম্পদ বিভাগ। তবে তা সত্ত্বেও তাকেই সিআরও হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে এক্সচেঞ্জটির পর্ষদ। ডিএসইর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই আশিক রহমানকে শর্তসাপেক্ষে সিআরও পদে নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি।

অবশ্য এরপর নিয়োগ কাণ্ডে আরো নাটকীয় মোড় নেয়। ডিএসইর সিআরও হিসেবে নিয়োগ প্রস্তাব পাওয়ার পর এম আশিক রহমান এক্সচেঞ্জটির কাছে যোগদানের আগে বিলাসবহুল গাড়িসহ আরো বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন। বেতন-সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া তার অন্যান্য দাবি পূরণ করা ডিএসইর পক্ষে অনেকাংশেই সম্ভব ছিল না। এমনকি তিনি তার পদের নাম পরিবর্তনেরও দাবি জানিয়েছিলেন, যা পূরণের জন্য আইন বিধিবিধানেও পরিবর্তন আনতে হবে। এসব কারণে ডিএসইর পর্ষদ সিআরও হিসেবে এম আশিক রহমানের নিয়োগের বিষয়টি বাতিল করে দেয়। এর পরিবর্তে রূপালী ব্যাংকের তত্কালীন সিএফও শওকত জাহান খানকে সিআরও হিসেবে নিয়োগের জন্য কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। কমিশন ডিএসইর প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাস আগে এক্সচেঞ্জটিতে সিআরও পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন