হাতবদল হলো আরো এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

সাইফ সুজন

সাড়ে আট একর জমিসহ সম্প্রতি হাতবদল হয়েছে দি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেই গত বছর রাজধানীর বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয় পরিচালনার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রিভেরি গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে, নিয়ম না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি হাতবদলের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিকভাবে মোটা অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছে। এর আগে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই চট্টগ্রামভিত্তিক একটি বড় শিল্প গ্রুপের কাছে বিক্রি হয় রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।

২০১৫ সালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স। পরের বছরই  শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সে হিসেবে কার্যক্রম শুরুর মাত্র চার বছরের মধ্যেই হাতবদল হলো বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া প্রাক্তন ট্রাস্টিরা বলছেন, শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়াসহ সার্বিক ব্যয়ভার চালিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে হয়েছে তাদের। প্রসঙ্গে প্রাক্তন একজন ট্রাস্টি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বণিক বার্তাকে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় অংকের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। এত অর্থ ভর্তুকি দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই পরিচালনার সামর্থ্য রয়েছে, এমন একটি গ্রুপকে বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট আরেক দল অভিযোগ করে বলছেন, শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ লাভের উদ্দেশ্য ছিল প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টিদের। এর ধারাবাহিকতায়ই গত বছর বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি রিভেরি পাওয়ার অ্যান্ড অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক কর্মরত অন্তত ২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা রিভেরি গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যদিও তাদের কেউই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাকালীন একজন শীর্ষ পর‍্যায়ের কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন পাওয়ার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নারায়ণগঞ্জে সাড়ে আট একর জমির বন্দোবস্ত দেয়া হয়। ২০১৭ সাল থেকে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) পক্ষ থেকে জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিক্রি করে দেয়ার জন্য জোরেশোরে উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অন্তত ২০-২৫টি পক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়। ২০১৯ সালের দিকে উত্তরবঙ্গভিত্তিক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩২ কোটি টাকায় বিক্রি করার কথা প্রায় চূড়ান্ত পর‍্যায়ে ছিল। সর্বশেষ জানা যায়, রিভেরি গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে এটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েক ধাপে ৩৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ লেনদেন হওয়ার কথা শুনেছেন বলেও জানান কর্মকর্তা।

তবে বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের বিওটি চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ হাবিব। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে আইনসম্মত উপায়ে ট্রাস্ট পুনর্গঠনের সুযোগ রয়েছে, আমরা সেটিই করেছি। এখানে কোনো ধরনের লেনদেন হয়নি। এছাড়া আমি নিজে এখনো বিওটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছি। বিক্রি করে দিলে তো আমার পদে থাকার কথা নয়।

তবে রিভেরি গ্রুপ যে বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে এবং ফরিদ হাবিবকে কেবল অনারারি চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়েছে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

হাতবদলের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের ট্রাস্টি বোর্ডের পুনর্গঠন শুরু হয়েছে। নিয়ন্ত্রণ নেয়া রিভেরি গ্রুপের চারজন পরিচালক এরই মধ্যে বিওটির সদস্য হয়েছেন। তারা হলেন এসএম ফয়সাল, মো. আরিফুল হক, মো. জাহাঙ্গীর আল জিলানি আবু বকর সিদ্দিক। এছাড়া রিভেরি গ্রুপের বাকি দুই পরিচালকের বিওটির সদস্য হওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। রিভেরি গ্রুপের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম নিয়মিত দেখভাল করছেন মো. আরিফুল হক। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টি কিনেছি কথা যারা বলছেন, সেটি ভুল। বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনা করতে গিয়ে আগের বিওটি সদস্যরা আর্থিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। 

রিভেরি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাসও স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নতুন ঠিকানা রাজধানীর বনানীতে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের নতুন ক্যাম্পাসে পরিদর্শনে গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) একটি প্রতিনিধি দল। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার পরিবেশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য প্রফেসর . বিশ্বজিৎ চন্দ বণিক বার্তাকে বলেন, নতুন ঠিকানার অনুমোদন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শন করা হয়। নতুন ক্যাম্পাসে গিয়ে আমরা শিক্ষার চমত্কার পরিবেশ দেখতে পেরেছি। পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে পরবর্তী নির্দেশনা জানিয়ে দেয়া হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিক্রি হওয়ার কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।

নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সন্তোষ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, হস্তান্তরের পর চাকরি নিয়ে আমরা অনেকেই ভয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, নেতৃত্বে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কল্যাণকর। আমরা এখন নিয়মিত বেতন পাচ্ছি। এছাড়া গত এক বছরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রেই ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন