ব্যক্তিমালিকানাধীন পাট শিল্প

নিম্নতম মজুরি ৮০% বাড়িয়ে ৮০০০ টাকা করার সুপারিশ

বদরুল আলম

ব্যক্তিমালিকানাধীন পাট শিল্পের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি কাঠামো সর্বশেষ নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর তা আবারো পর্যালোচনার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০১৯ সালের জুনে। কভিডের অভিঘাতে প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলেও অবশেষে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। -সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পাটকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চলমান কাঠামোর চেয়ে ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে মাসে হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড।

২০১৯ সালের জুনে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হার পর্যালোচনায় গঠিত বোর্ডে মালিক শ্রমিক প্রতিনিধির নাম ঘোষণা করে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে উভয় পক্ষ মজুরি নিয়ে দরকষাকষির প্রস্তুতি নেয়। ব্যক্তি খাতের পাটকল শ্রমিক প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীনস্থ পাটকল শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত কাঠামোর চেয়ে বেশি মজুরি প্রস্তাবের জন্য মনস্থির করেছিলেন।

জানা গিয়েছে, মজুরি বোর্ডে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকলের শ্রমিক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে দেয়া প্রথম প্রস্তাব ছিল ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণের। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দীর্ঘ আলোচনা শেষে শ্রমিক প্রতিনিধিরা ১০ হাজার টাকায় নেমে আসেন। পরবর্তী সময়ে দেশের সবচেয়ে শ্রমঘন পোশাক শিল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হাজার টাকা নির্ধারণে সম্মত হয় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

সব পক্ষের -সংক্রান্ত মতামতের ভিত্তিতে নতুন কাঠামোর সুপারিশ করেছে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় অধীনস্থ নিম্নতম মজুরি বোর্ড। বিষয়ে কোনো পক্ষের আপত্তি বা সুপারিশ থাকলে তা প্রজ্ঞাপন প্রকাশের দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে লিখিত আকারে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। বিষয়ে কোনো আপত্তি বা সুপারিশ না থাকলে খসড়া সুপারিশ চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে বলে বোর্ড জানিয়েছে।

১২ অক্টোবর চূড়ান্ত হওয়া মজুরি বোর্ডের সুপারিশ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ পেয়েছে ১৮ অক্টোবর। সেখানে দেখা গিয়েছে, সর্বনিম্ন গ্রেডের শ্রমিকদের মূল মজুরি নির্ধারণ হয়েছে হাজার টাকা। এর ৪০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়ার পরিমাণ হাজার টাকা। এছাড়া চিকিৎসা ভাতা যাতায়াত ভাতা যথাক্রমে ৭০০ ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে সর্বনিম্ন মোট মজুরি দাঁড়াচ্ছে হাজার টাকায়, যা সর্বশেষ কাঠামোর নিম্নতম মোট মজুরির চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি।

ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকলের মজুরি কাঠামো সর্বশেষ পর্যালোচনা হয় ২০১৩ সালে। সে বছর নির্ধারিত কাঠামোর সর্বনিম্ন গ্রেডে শ্রমিকের মূল মজুরি ধরা হয় হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া বাড়িভাড়া হাজার ৮০ টাকা, চিকিৎসা ৪০০ যাতায়াত ২০০ টাকা ভাতাসহ নিম্নতম মোট মজুরির পরিমাণ দাঁড়ায় হাজার ৩৮০ টাকায়।

২০১৯ সালের ১৩ জুন এক প্রজ্ঞাপনে ব্যক্তিমালিকানাধীন পাটকল মালিক প্রতিনিধি হিসেবে রাজবাড়ী জুট মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন এবং শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে মহসেন জুট মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্য মো. শহীদুল্লাহ খাঁর নাম ঘোষণা করে শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে রাজবাড়ী জুট মিলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন বণিক বার্তাকে বলেন, দীর্ঘ আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে নিম্নতম মজুরি কাঠামোর চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। কভিড মহামারীসহ নানা কারণে নতুন মজুরি হার বাস্তবায়নে বেগ পেতে হবে শিল্প মালিকদের। তার পরও সার্বিক দিক বিবেচনায় পোশাক খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চূড়ান্ত সুপারিশে সম্মত হয়েছেন বোর্ড সদস্যরা।

মজুরি বোর্ডের সদস্য শ্রমিক প্রতিনিধি মো. শহীদুল্লাহ খাঁ বণিক বার্তাকে বলেন, বিদ্যমান মজুরি কাঠামো বর্তমান চাহিদার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের দাবি ছিল মূল মজুরি হাজার ৩০০ টাকা করার। কিন্তু মজুরি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট সবাই মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাই এখন মূল মজুরি হাজার ৩৮০ থেকে হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বোর্ডের আগামী সভায় নতুন কাঠামোর বিষয়ে আমাদের আপত্তি লিখিতভাবে জানানো হবে।

পাটকল মালিক প্রতিনিধিরা বলছেন, শ্রমিকপক্ষ যতটা প্রস্তাব করবে, ততটা দেয়ার সক্ষমতা শিল্পের মালিকদের বর্তমানে আছে কিনা সেগুলো যাচাই করেই চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতেই বর্তমানে শিল্প সক্ষমতা অনেক দুর্বল।

জানা গিয়েছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট পাটকল ইউনিটের সংখ্যা প্রায় ৩০০। এর মধ্যে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সদস্য সক্রিয় পাটকল ইউনিট আছে প্রায় ২৪০টি। মিলগুলোয় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা লাখ ৪০ হাজারেরও বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন