খাসজমি বণ্টন নীতিমালায় নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক বিধান পরিবর্তন করতে হবে

সাংগাত বাংলাদেশ বণিক বার্তার যৌথ উদ্যোগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সম্পত্তিতে নারীর অবস্থান (খাসজমি নারীরা) শীর্ষক একটি অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচকদের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে ক্রোড়পত্র 


কোহিনুর বেগম

ভূমিহীন নারী

সাঘাটা, গাইবান্ধা

১৯৮৮ সালের বন্যার আগে ভূমিহীন সমিতির সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলাম। অনেক সভা-সম্মেলন আয়োজন করেছি। ভূমিহীন মানুষের ভূমিপ্রাপ্তির আন্দোলন সংঘটিত করেছি। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর সরকার ঘোষণা দিলভূমিহীন মানুষ খাসজমি পাবে। তার জন্য আবেদন করতে হবে। ১৯৯০ সালে স্বামীসহ যৌথভাবে খাসজমির জন্য আবেদন করি। আবেদনের তিন বছর পর আমরা ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট (ডিসিআর) পাই। অনেক দেনদরবার কষ্টের পর ২০০৭ সালে জমির দলিল বুঝে পাই। তবে দলিল পেলেও তাতে লাভ হয়নি। কারণ দলিল থাকা সত্ত্বেও দখল পাইনি।

প্রভাবশালীরা জমির দখল ছাড়েনি। তারা বলে, নারীদের আবার কিসের দাবি! তারা তো কোনো জমি পাবে না। তারা বিভিন্ন সময়ে আমার স্বামী, ছেলেমেয়েদের অত্যাচার করে। আবাদ করলে ফসল তুলে নিয়ে যায়। আমরা প্রশাসনকে জানাই। তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে অনেক লোক মিলে সাঘাটা থানা ঘেরাও করি, আন্দোলন করি। অবশেষে অনেক সংগ্রামের পর খাসজমির দখল পাই। ওই জমির একাংশে বাড়িঘর তুলি, বাকি অংশে আবাদ করি। অনেক মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। তবু জমির দখল ছাড়িনি। এখনো এভাবে টিকে আছি।

 

ফিরোজা বেগম

ভূমিহীন নারী

সুবর্ণচর, নোয়াখালী

নদীভাঙনে আমরা ঘরবাড়ি হারাই। ভূমিহারা হই। থাকার জায়গা নেই, চাষের জমি নেই। আমাদের অনেক কষ্ট। সে কারণে আমরা সরকারের খাসজমি পেতে আবেদন করি। এজন্য ২০-২৫ জন মিলে একেকটা দল করে ভূমিহীন সমিতি করি। খোঁজখবর নিয়ে এসিল্যান্ড অফিসে যাই। কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করি। তিনি আশ্বাস দেন, কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা। পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আমরা খাসজমি পাই। চরে আমাদের জায়গা দেয়া হয়। সেটি হাতিয়ায়। সেখানে ছোট একটা ঘর বাঁধি। হাঁস-মুরগি পালন করি, শাকসবজি আবাদ করি। দাঙ্গাবাজরা, প্রভাবশালীরা এখনো আমাদের নানা হুমকি-ধমকি দেয়। বলে, এটা তোমাদের জায়গা নয়। তারা বলে, পুত্রসন্তানহীন নারীর ভূমি অধিকার নেই। আমি বলি, আমি একজন কৃষক। ধান আবাদ করি, ফসল ফলাই। ভূমিতে আমার অধিকার আছে। আমরা সমিতির লোকজন একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করি। সে কারণে তারা খুব একটা পেরে ওঠে না। নানা লড়াই-সংগ্রাম করে আমরা খাসজমির দখল এখনো বজায় রাখতে পেরেছি।

 

ভারতী কুজুর

আদিবাসী নারী

মিঠাপুকুর, রংপুর

আমি ওরাওঁ আদিবাসীভুক্ত একজন নারী। আমরা যে খাসজমি দখল করে এখন বসবাস করছি, সেটি আগে জোতদারের অধীনে ছিল। সে আমাদের মাছ নিয়ে যেত, ধান কেটে নিয়ে যেত। তার বাড়ি অনেক দূরে, তার পরও আমাদের পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যেত। আমাদের নামতে দিত না। তখন জরিপে দেখা গেল এটা খাসজমি। তার পরে আমরা এটা বন্দোবস্তের ব্যাপারে খোঁজখবর নিলাম। জরিপকারীরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, কীভাবে আমরা এটা দখল করতে পারব। ভাবলাম, আমরা তো ভূমিহীন। আমাদের জায়গাজমি নেই। জায়গার দখল পেলে আমাদের অনেকের উপকার হবে। নিজেরা করিসহ কিছু সংগঠন আমাদের পাশে ছিল। তারা বলে দিল যে এভাবে দখল করা যাবে। তখন নিয়ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করলাম। বহু সংগ্রাম করে খাসজমি পাই। দখল হওয়ার পর জোতদারের সঙ্গে সংঘাত হয়েছে। মামলাও হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সে পারেনি। আমরা জিতেছি। পরে সরকার আমাদের ঘর করে দিল। সেখানেই আমরা বাস করছি।

 

. সাদেকা হালিম

অধ্যাপক ডিন

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশের অন্যতম জটিল ইস্যু ভূমি ব্যবস্থা। ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের দেশে অনেক আইন আছে। মোটা দাগে আমরা কতগুলো বিষয় বুঝি। আমাদের নিজের নামে রেকর্ডকৃত যে ভূমি আছে, সেটি একটি। আরেকটি হলো খাসজমি। যেটিকে আমরা বলি সরকারি জমি। আবার যৌথ মালিকানার ভূমিরও একটা ব্যবস্থাপনা আছে। আমাদের আদিবাসী জনগোষ্ঠীরও যৌথ মালিকানার একটা ভূমি ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আগে থেকে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ, যশোর ময়মনসিংহএসব জায়গায় জমিদারি প্রথা চালু ছিল। সমস্যা হলো জমিদারি প্রথার সময় কোনটা জমিদারের জমি আর কোনটা খাসজমি, সেটা চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু জমিদারি প্রথা উঠে যাওয়ার পর জমিদারদের নায়েব-গোমস্তারা তাদের নামে অনেক জমি রেজিস্ট্রি করে নেয়। ফলে নানা জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে। একটা আইন ছিল, যেখানে কেউ ১২ বছর ধরে থাকলে সেখানে তারা ভোগদখলি স্বত্ব বা অধিকার পায়। অধিকারের ভিত্তিতে অনেকেই বংশপরম্পরায় থেকেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে একটি বিষয় খুব পরিষ্কার, খাসজমি তারাই পাবে; যারা হতদরিদ্র, যাদের ভূমি নেই, আয় কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। তারা পাঁচ শতক খাসজমি পাবে। ধরনের একটি সরকারি নীতি রয়েছে। আমাদের সরকার নারীদেরও সরকারি খাসজমি বরাদ্দের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু নীতিমালায় যে শর্তটা দেয়া হচ্ছে তা বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত আপত্তিকর। সেখানে বলা আছে, যার সক্ষম পুত্র আছে তাকে খাসজমি দিতে হবে। কিন্তু যার সক্ষম কন্যা আছে তার কী হবে? আবার যার সন্তানই নেই, সে কী দোষ করেছে? পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের দেশে প্রায় ১৫ শতাংশ নারীপ্রধান খানা আছে। তারা পরিবার এককভাবে চালাচ্ছেন। হয় তারা বিধবা, নতুবা স্বামী চলে গেছে কিংবা কোনো ঘটনায় তারা একক হয়ে গেছেন। আগামী জনশুমারিতে আমরা হয়তো দেখব সংখ্যাটা আরো বেড়েছে। তাহলে খাসজমিতে কেন তাদের অধিকার থাকবে না? অথচ সংবিধানে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ সবাই আইনের চোখে সমান। সবাই সমান অধিকার পাবে। সেক্ষেত্রে সংবিধানের আলোকে খাসজমি বণ্টন নীতিমালা সঠিক নয়। তাই বৈষম্যপূর্ণ নীতিমালাগুলো অবশ্যই বদলানো প্রয়োজন। ভূমিহীন নারীদের খাসজমি প্রাপ্তি নিশ্চিতে বিভিন্ন বেসরকারি অধিকার সুরক্ষা সংগঠনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কতটুকু খাসজমি আছে, সেই তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নোটিস বোর্ডে নিয়মিত তুলে ধরতে হবে, যাতে মানুষ সঠিক তথ্যটা পায়। জায়গাগুলোয় লক্ষ রাখতে হবে।

 

সুরাইয়া বেগম

উপপরিচালক, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশআরআইবি

আসলে নারী খাসজমি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি নারীদের সম্পত্তিতে (স্থাবর, অস্থাবর দুটো ক্ষেত্রেই) অধিকারের ক্ষেত্রে একটা বাধার জায়গা আছে। এখানে শর্তহীন কোনো ব্যাপার দেখি না। সবসময়ই শর্তযুক্ত বা বৈষম্যযুক্ত বিভিন্ন বিষয় দেখি। এটি দুঃখজনক। কেন বৈষম্য হয় কিংবা দ্বন্দ্বগুলো কেন আছে, সে প্রশ্নটি আজ উঠেছে। আরেকটু পেছনের দিকে গেলে দেখব যে আদিমকালে শিকার ব্যবস্থার চল থাকাকালে নারী-পুরুষ শিকার করে এসে সব খাদ্য জমা করতেন, যাতে তারা সংকটকালে ব্যবহার করতে পারেন। নারীরা সন্তানসম্ভবা যখন হন, তখন তারা যেতে পারেন না। তাতে ধীরে ধীরে তাদের সম্পদের স্বত্ব কম পান। এর পরে ঘরে থাকা অবস্থায় নারীরা কৃষির আবিষ্কার করলেন। কিন্তু মনস্তত্ত্বের মধ্যে যে রয়ে গেছে নারীরা সম্পদ জমা করছেন, সুতরাং সম্পদে তাদের অধিকার কম, সেটি বজায় থেকে গেল। কৃষিভিত্তিক সমাজ যখন হলো তখন ওই মনস্তত্ত্বটা রয়েই গেল। মনস্তত্ত্বের সঙ্গে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, বংশগতি, ছেলেরাই বংশের ধারকএসব ধারণা আইনের সংযোগ আছে। আইনগুলোয় এসব ধারণাকেই সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আমরা তা আত্মস্থ করে নিয়েছি। এরই প্রতিফলন আমাদের জীবনের চলার পথে, জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি সর্বত্র দেখতে পাই। নারীর খাসজমিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও তার একটা প্রতিফলন আমরা দেখি। বলা হয়েছে, ওইসব নারীই খাসজমি পাবেন, যাদের সক্ষম পুত্রসন্তান রয়েছে। পুত্রসন্তান থাকাটা কি নারীদের হাতের মুঠোয়? চাইলেই কি পুত্রসন্তান জন্ম দেয়া যায়? যায় না। তাহলে যদি পুত্রসন্তান না হয়ে কন্যাসন্তান হয়, কিংবা কেউ যদি কৃষিকাজ করেন তাহলে কি খাসজমির অধিকার পাবেন না? পরিসংখ্যান বলে, নারীরা কৃষিতে প্রায় ৫২ ধরনের কাজ করেন। কিছু কাজ পুরুষের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে, কিছু কাজ এককভাবে করেন। এই যে ৫২ রকম কাজ নারীরা করেন, এর চেয়ে বড় বিষয় আর আছে? তারাও তো কৃষক। তাহলে কৃষিজমিতে তাদের অধিকার থাকবে না কেন? কিষানি হিসেবে তাদের অধিকার থাকবে না কেন? খাসজমিতে তাদের অধিকার থাকবে না কেন? এটা একটা বড় প্রশ্ন আমাদের সামনে চলে আসে। একটা সাধারণ প্রবণতা হলো কোনো কিছু দিয়ে না পারলে তখন নারীদের চরিত্রের ওপর কালিমা লেপন করা হয়। আমাদের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে যে কেন এটা হচ্ছে।

ঐতিহাসিকভাবে দেখেছি, উপমহাদেশে স্ত্রীধন হিসেবে নারীরা কিছু সম্পত্তি পেয়েছিলেন। তারপর মুসলিম নারীরা ভাইদের অর্ধেক হিসেবে সম্পত্তি পেলেন। কিন্তু এটা দিয়ে বেশিদূর এগোনো যাচ্ছে না। কারণ সামনে দিন বদল হচ্ছে। আমরা সামনে এগোচ্ছি। এক্ষেত্রে চিন্তাভাবনা বদল না করলে সামনে এগোতে পারব না। খাসজমি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের বিষয়টি শর্তাধীন করা যাবে না। কেননা ওইসব শর্ত ইচ্ছা করলেই পূরণ করা যায় না। নারী উন্নয়ন নীতিতে বলা হয়েছে, অতিদরিদ্রদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী। তাদের বেশির ভাগই বিধবা কিংবা তালাকপ্রাপ্ত। এমনটি হলে নারী উন্নয়ন নীতি কিংবা সংবিধানের ২৮ ধারা বাস্তবায়ন কীভাবে করতে পারব, যেখানে বলা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। অনেকেই খাসজমি কারা পাবেন, কীভাবে পাবেন, নিয়ম-কানুনগুলো কীএসব তথ্য জানেন না। এসব তথ্য প্রচারও করা হয় না। এক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, তার উপায় বের করতে হবে। তথ্য অধিকার আইনটি মানুষকে আরো জানানো দরকার। এর মাধ্যমে খাসজমিতে যেসব নারী নিজেদের অধিকার পাচ্ছেন না, সেখানে তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। নারীর ভূমি মালিকানা শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটা একটা সামাজিক মূলধন। সুতরাং এদিকটায় আমাদের নজর দিতে হবে। যদি আমরা নারী উন্নয়ন চাই, নারী নীতি বাস্তবায়ন করতে চাই, তবে খাসজমিতে নারীর অধিকারে কোনো শর্তারোপ করা যাবে না। যেসব শর্ত আছে সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। বেহাত হওয়া খাসজমি উদ্ধার করা দরকার। নারীদের সংগঠন সমিতিগুলোকে আরো শক্তিশালী করা দরকার। সর্বোপরি, তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করা গেলে খাসজমিতে নারীর প্রবেশগম্যতার বিষয়টি আরো সংগঠিতভাবে এগিয়ে নিতে পারব।

 

এমএম আকাশ

অধ্যাপক চেয়ারম্যান অর্থনীতি বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আমরা এখানে দুটো বিষয় দেখতে পেলাম। এক. খাসজমি নারীকে দেয়ার সময় বৈষম্যমূলক শর্ত দেয়া হচ্ছে। তাকে বলা হচ্ছে, পুত্রসন্তান না থাকলে সে জমি পাবে না। আমাদের সংবিধানে আইনের চোখে সব মানুষকে সমান ধরা হয়েছে। সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য বিদ্যমান, যার উৎস ধর্মীয় বিধান। এখান থেকে বের হতে হলে রাষ্ট্রকে যথার্থ অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে ইহলৌকিক বিষয়ে ইহলৌকিক ন্যায়বিচার অনসুরণ করা। আর যেগুলো ব্যক্তি পারলৌকিক বিশ্বাসের বিষয়, বিজ্ঞানের বিষয় নয়, সেগুলো সেভাবে হবে। সাংস্কৃতিক বিপ্লব আমাদের দেশে হয়নি। মেয়েরাও সম্পত্তির সমান অধিকার পাবে, ভাইবোনদের মধ্যে কেউ কম-বেশি পাবে নাআমাদের দেশে চেতনার বিকাশ হওয়া দরকার। পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন জরুরি। নারী সমাজে অধস্তন, আমরা দেখি সব অধস্তন শ্রেণী সংগ্রাম করেই তার মুক্তি আদায় করে, নারীকেও সংগ্রামের মাধ্যমে তার অধিকার আদায় করতে হবে। সংগ্রামটা তিনভাবে করতে হবেআইনের ক্ষেত্রে, জমি দখলের ক্ষেত্রে জমিকে ফলপ্রসূভাবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে। কাজে সবসময় হয়তো নারীরা রাষ্ট্রের সহযোগিতা বা কিছু পুরুষের সমর্থন পাবেন না। সুতরাং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রগতিশীলদের কর্তব্য দেশটিকে আলোকিত রাষ্ট্রে পরিণত করা, যেখানে অধস্তনরা ন্যায়বিচার অধিকার পান এবং তাদের অধিকারের সুরক্ষা হয়। অধিকারের সুরক্ষাবিষয়ক আমি কয়েকটি সুপারিশ করছি। প্রথমত, প্রতিটি জেলায় কয়টা খাসজমি আছে তা সাইনবোর্ডের মাধ্যমে প্রত্যেক এলাকায় টানিয়ে দিতে হবে। আইনে খাসজমি পাওয়ার অধিকার কার আছে, এর বৈশিষ্ট্যগুলো সেখানে উল্লেখ করতে হবে। সবার সামনে গ্রামসভা করে স্বচ্ছভাবে তা বিতরণ করতে হবে। রাষ্ট্র যদি খাসজমি বণ্টনের উদ্যোগ না নেয়, তাহলে তার দাবিতে আন্দোলন করে রাষ্ট্রকে তা বণ্টন করতে বাধ্য করতে হবে। তাছাড়া খাসজমি বণ্টনের পর তাকে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। খাসজমি দেয়ার সময় তা ব্যবহারের প্রণালি কী হবে সে-সম্পর্কিত একটি চুক্তি করতে হবে। তাছাড়া খাসজমি যদি সংযুক্ত বা পাশাপাশি হয় তাহলে সেগুলো একত্র করে সমবায় করা যেতে পারে। আমরা দাবি তুলেছিলাম খাসজমির মালিকরা জমি বিক্রি করতে পারবেন না। বিক্রির অযোগ্য শর্তে এটা বণ্টন করতে হবে। বিক্রি করলে তার চেয়ে গরিব বা তার সমান লোককে সে বিক্রি করতে পারবেএমন একটা শর্তারোপ করতে হবে। তাই যেকোনো খাসজমি যদি অন্যের দখলে থাকে তাহলে সরকার তা বাজেয়াপ্ত করার অধিকার রাখবে। কারণ আইন অনুসারে জমিটা বিক্রিযোগ্য নয়। কেউ কিনলে তা বেআইনিভাবে ক্রয় করেছে। ধরনের কতগুলো বিষয়ে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। খুশী আপা দীর্ঘদিন ধরে ইউনিভার্সাল ফ্যামিলি কোর্টের জন্য লড়াই করছেন, এটা নিয়ে আমরা আশাবাদী।

 

শরমিন্দ নীলোর্মী

সহযোগী অধ্যাপক

অর্থনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

খাসজমি বিতরণের নীতিমালা ১৯৮৭ সালে নারীপ্রধান ভূমিহীন পরিবারকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এটা সংশোধিত হয়। ১৯৯৭ সালে কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ১৯৯৬-এর ১১- ভূমিনীতিতে বলা হয়েছে যে নারী এককভাবে ভূমির মালিকানা রাখার যোগ্য নন। আমরা সে সমস্যাগুলোর কথা আলোচনা করেছি, এগুলো ছাড়া আরো কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন একজন ভূমিহীন পরিবারে যদি কর্মক্ষম পুরুষ সদস্য থাকেন এবং তারা যদি কৃষক, শ্রমিক বর্গাচাষী হন, তবে তারা খাসজমি বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। এখানেও সক্ষম নারী সদস্যকে ভূমিপ্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালায় চিরকুমারী অথবা নিঃসন্তান ভূমিহীন নারীর দরখাস্ত করার কোনো বিধান নেই। নব্বইয়ের দশকে খাসজমি স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে বরাদ্দ হওয়ার আইন হয়। সেখানে বলা আছে, স্বামী কোনো কারণে স্ত্রীকে ছেড়ে গেলে জমির পুরোটাই স্ত্রীর নামে বরাদ্দ থাকবে। কিন্তু এখনকার সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, বিচ্ছেদ হলে স্বামীর অংশ রাষ্ট্রের কাছে চলে যাবে। আমরা বলছি যে ক্রমে অগ্রসর হচ্ছি কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে সম্পত্তির বণ্টননামায়তা খাসজমিই হোক অথবা উত্তরাধিকার আইনে সম্পত্তি বণ্টনই হোকআমরা অগ্রসর তো হইনি, বরং নীতিমালাগুলো পেছনে চলে যাওয়ার কথাই বলে। কৃষি খাসজমি বণ্টন বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৭-এর অনুচ্ছেদ - জাতীয় জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কমিটিতে নারী প্রতিনিধি রাখার কোনো পদ রাখা হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে আমরা যে কমিটিগুলো করি, সেখানে স্পষ্টভাবে নারী প্রতিনিধি রাখার কথা বলি, কিন্তু এখানে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় আমরা কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে নারীর জন্য কোনো পদের ব্যবস্থা করিনি। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮-এর ধারায় বলা হয়, রাষ্ট্র গণজীবনের সর্বস্তরে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত সংবিধান সমাজ জনজীবনে নারী-পুরুষের সমতা বৈষম্য রোধের ওপর জোর দিয়েছে কিন্তু ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবন নিয়ে স্পষ্ট কোনো কথা বলেনি। তাই যখনই নারীর ব্যক্তিগত পারিবারিক কোনো সমস্যার বিষয় সামনে আসে তখনই সমাধানের জন্য বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজ নিজ ধর্মকে আশ্রয় করে প্রণীত ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আইনের আশ্রয় নেয়া হয়। কারণে দেখা যায়, ব্যক্তিগত পর্যায়ে কুৎসা রটিয়ে সমাজের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে নারীকে কোণঠাসা করে ফেলা হয়। দুটো মন্ত্রণালয় এখানে কাজ করছেআইন ভূমি মন্ত্রণালয়। খাসজমিসংক্রান্ত তথ্যগুলো যদি বোর্ডে তুলে ধরা হয় তাহলে বড় ধরনের সচেতনতা তৈরি করা হবে। আমি কয়েকটি সুপারিশ করব। এক. সক্ষম কন্যাসন্তানসহ বিধবাদের খাসজমিতে অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং নীতিমালার পরিবর্তন করতে হবে। এসব কথা বারবার বলা জরুরি। দুই. পাঠ্যপুস্তকে ভূমিসংশ্লিষ্ট বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটা যে একটি আইনি প্রক্রিয়া, সেটা জানতে হবে। যেমন একজন নারীর নাবালক পুত্রসন্তান আছে কিন্তু তার স্বামী মারা গেছে। এখন পুত্রসন্তানের বয়স ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত তাদের কোনো বক্তব্য থাকে না। অথচ সন্তানের ভরণপোষণের জন্য তার তো অর্থ প্রয়োজন। আইনের জায়গাগুলোয় সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া খাসজমি প্রসঙ্গে বলব, সেচযোগ্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে। অকৃষি খাতে উন্নয়নকাজে ভূমির যদি প্রয়োজন হয়, তার জন্য অকৃষি খাসজমি যদি পাওয়া যায়, তাহলেই কেবল খাসজমিকে প্রাধান্য দিতে হবে। খাসজমি বণ্টনের জন্য শুধু ভূমিহীন নয়, শিক্ষিত-বেকারদেরও প্রাধান্য দিতে হবে।

 

রওশন জাহান মনি

উপনির্বাহী পরিচালক

এএলআরডি

কালক্রমে খাসজমির প্রাপ্তি বণ্টনের প্রসঙ্গটাই বদলে গেছে। প্রথমত, বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য, যেটা দান-দক্ষিণার মতো করে হয়। আমরা খাসজমির প্রেক্ষাপটই বদলে দিয়েছি, যেখানে কৃষিজমিতে কৃষকের অধিকারসে নারী হোক বা পুরুষবদলে ফেলা হয়েছে। খুব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করা হয়েছে। ৩০ বা ৩৫ বছরের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এসে চূড়ান্ত প্রাপ্তিটি ঘটেছে। সংগঠিত না হলে বা সংগঠন না থাকলে এবং নিজের জ্ঞানচর্চা না বাড়ালে প্রক্রিয়ায় হাঁটা যায় না। জমি দখলের ক্ষেত্রে নারীরা অগ্রভাগে থাকেন, পরবর্তী সময়ে যখন পুরুষরা ওই স্থান ত্যাগ করে চলে যান, নারীরাই সেটা পাহারায় থাকেন, সেই সময়গুলোয় কিন্তু সবচেয়ে অধিক নির্যাতনগুলো হয়ে থাকে, অপদস্থ করার বিষয়গুলো হয়ে থাকে। আমাদের দেশে খাসজমি আছে। মূল উৎস নদী থেকে জেগে ওঠা চর। খাসজমি আছে, নীতিমালাও আছে, আগ্রহী কৃষক বা প্রকৃত কৃষকরাও রয়েছেন। নীতিমালা অনুসারে ভূমিহীন কৃষক, নারী কৃষক, পুরুষ কৃষক তারাও রয়েছেন। কিন্তু সমস্যটা হচ্ছে স্পষ্ট করে কোথাও কিছু বলা হচ্ছে না। তাই কোথায় কতটুকু খাসজমি আছে এবং কারা জমি পাবেন, তার সুনির্দিষ্ট তালিকা সাইনবোর্ড আকারে টানিয়ে দিতে হবে। দেশে বহু খাসজমি আছে, যা অনেকে বংশপরম্পরায় ব্যবহার করে আসছেন এবং তা কোনো দিন খাসজমির তালিকায়ও আসতে দেয়া হয়নি। দখলকৃত খাসজমিগুলো খুঁজে বের করার বিষয়টিও জরুরি। এরপর সেগুলো দখল করা। দখলও একটি বড় বিষয়। কেননা দখল, দাখিলাসহ আরো কিছু বিষয়ের মাধ্যমে জমিগুলোকে প্রমাণ করতে হয়। এক্ষেত্রে দখল যখন করতে হয় তখন একটা ধাক্কা সামলাতে হয়। আবার তা যদি কৃষির ক্ষেত্রে হয়, ফসল ঘরে ওঠানোর সময় বাধা সামলাতে হয়। আমরা যদি ধাপগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখি তাহলে আমাদের প্রস্তুতিও ভালো হয়। লড়াই নারী-পুরুষ সংগঠিতভাবে করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিরা জনপ্রতিনিধিত্বের জায়গায় অনেকটাই দলীয় হয়ে গেছেন। তাই খাসজমির বিষয়গুলো আরো অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তাছাড়া খামজমির নীতিমালায়ও অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। কৃষি নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। জমি না থাকলেও একজন কৃষক কৃষি কার্ড পাবেন এবং ব্যাংকে নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু ভূমিহীন নারীরা ব্যাংকে গেলে তাদের জামানতকারীর কথা বলা হচ্ছে। আইন আছে, উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে তবে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। খাসজমি চিহ্নিতকরণ একটি বড় কাজ, সরকারি উদ্যোগে প্রথম খাসজমি চিহ্নিত করতে হবে। এটা যদি নদীভাঙা বা পরবর্তী সময়ে চর জাগা জমি হয়, তবে দিয়ারা জরিপ হতে হয়। কিন্তু যতক্ষণ না জরিপ হচ্ছে, খতিয়ানভুক্ত হচ্ছে ততক্ষণ কিন্তু ভূমিহীনরা সেখানে দরখাস্ত করতে পারছেন না। এছাড়া খাসজমি নীতিমালাকে আইনে পরিবর্তন করতে হবে। আমি মনে করি, ফাঁকগুলো পূরণ করতে হবে। আর একটা বিষয় হচ্ছে, বণ্টনকৃত খাসজমিগুলো আকারে খুবই ছোট হয়। তাছাড়া জমি প্রস্তুত থেকে বীজ ক্রয়, ফসল উৎপাদনের জন্য তাদের ঋণের প্রয়োজন হয়। কৃষি এখন অনেকটাই প্যাকেজে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে সমবায়ের ভিত্তিতে কাজ করা যেতে পারে। আমাদের একটা চিন্তা কাজ করে যে সমবায় হলে সবকিছু মিলে একাকার হয়ে যাবে। বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। পাশাপাশি জমিতে একই ধরনের ফসলের চাষাবাদ হতে পারে। আবার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকা জমিগুলো সমবায়ের ভিত্তিতে একসঙ্গে চাষাবাদ করা যেতে পারে। এতে খরচ কম হবে। এছাড়া বাজারে প্রবেশগম্যতার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহূর্তে দেখা যায় ফসল বিক্রির জন্য নারীকে আবার অন্য কোনো পুরুষ সদস্য বা অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়, যেখানে তার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয় না।

 

খুশী কবির

সমন্বয়ক, নিজেরা করি

কোর কমিটি সদস্য সাংগাত

আমাদের নারীরা মাঠ থেকে সংগ্রাম করে, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, সমাজের অনেক নিয়ম ভেঙে পরিবারের পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন করে কাজ করছেন। আমরা এখানে তাদের কথা শুনলাম যে কত বছর ধরে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা সুবর্ণা আপার কথা শুনলাম। তিনি কত বছর ধরে চেষ্টা চালিয়ে জমিটা তার নামে এনেছেন। কারণ তার পুত্রসন্তান নেই। উপস্থিত নারী বক্তাদের তিনজনই বলেছেন তাদের জমিছাড়া করার জন্য প্রভাবশালী মহলের তত্পরতার কথা। তারা এখনো সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সংগঠনের মাধ্যমে জমি ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেননা সংগঠন থাকলে শক্তি থাকে। শক্তি আত্মবিশ্বাস থাকলে আমরা জিততে পারি। আমরা অনেক কিছু অতিক্রম করতে পারি। আমাদের আইন আছে, তবে যতটুকু আছে তা বাস্তবায়ন হয় না। তাছাড়া নীতিমালার মধ্যে যতটুকু আছে, সেটাও আমাদের দেয়া হয় না। আইন করলেই যে তা কার্যকর হবে, ভুক্তভোগীরা খাসজমি পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। এখানে সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে। সংগঠনের মাধ্যমে আমাদের নারীরা যখন তথ্য অধিকার আইন বা সবার তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার সম্পর্কে জানবেন তখন কিন্তু তারা বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন। অথচ দেখা যায়, খাসজমি সম্পর্কিত তথ্যগুলোই আমরা জানি না। আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, নির্বাচিত সদস্যস্থানীয় পর্যায় কিংবা জাতীয় পর্যায় হোকতাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তবে তারা তখনই তা পালন করবেন যখন তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। তাছাড়া আমরা যদি সংগঠিতভাবে কাজ করি, সচেতনতা সৃষ্টি করি তাহলে ক্রমে লক্ষ্য অর্জনে অগ্রসর হব। কৃষক সংগঠন, ক্ষেতমজুর সংগঠন করার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিতদের সংগঠিত করতে হবে। আমাদের সচেতন হতে হবে। নাগরিক হিসেবে আমাদের প্রাপ্য আদায় করে নিতে হবে। নীতিনির্ধারণের জায়গায় যারা আছেন, তারা ভূমিকা রাখতে পারেন। তাদের সঙ্গে যদি আমাদের সেতুবন্ধ হয়, তাহলে কাজটি করা সহজ হয়। আজকের আলোচনায় ভুক্তভোগী নারীরা তাদের কয়েক দশকের সংগ্রামের কথা সহজ করে কয়েক মিনিটে বলেছেন। তবে তাদের সংগ্রামের পথটা কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। আমাদের এক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এখানে আমরা যেন শ্রেণীগত, অবস্থানগত, সাংস্কৃতিক বিভাজন না দেখি, বরং আমাদের একই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আজকের আলোচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সত্যিকার অর্থে আমাদের করণীয় কী, তা নিয়ে সিদ্ধান্তে যেতে হবে।

 

শ্রুতলিখন: হুমায়ুন কবির রুহিনা ফেরদৌস


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন