প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসায়িক সেতুবন্ধ গড়বে বাংলাদেশ —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন, তারা যে শুধু এখানকার বাজার পাবেন তা নয়। দক্ষিণ এশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলো ধরার সেখানে রফতানি করারও সুযোগ পাবেন তারা। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ প্রাচ্য পাশ্চাত্যের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগাযোগের একটি সেতুবন্ধ হিসেবেই গড়ে উঠবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল সপ্তাহব্যাপী বাংলাদেশ বাণিজ্য বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২১-এর উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা বলেন। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।

বক্তব্যে বিশ্ববাজারে রফতানির লক্ষ্যে নতুন নতুন পণ্য নিয়ে গবেষণায় গুরুত্ব বাড়ানোর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নতুন নতুন আর কী কী পণ্য আমরা উৎপাদন রফতানি করতে পারি, সেটা গবেষণার মাধ্যমে বের করতে হবে। কোন দেশে কী পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা অনুধাবন করে সেগুলো বাংলাদেশে উৎপাদন করতে পারি কিনা সেটাও বিবেচনা করতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বেসরকারি খাতে যারা ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের অনুরোধ জানাব, আপনারা বিষয়টির দিকে বিশেষভাবে নজর দেবেন। কারণ আমাদের রফতানিপণ্যের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

বিনিয়োগ সম্মেলন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বিশ্বাস সম্মেলনের মাধ্যমে বাণিজ্য বিনিয়োগের জন্য দেশী-বিদেশী শিল্প উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের ব্যবসা খাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশী পণ্যের নব নব দ্বার উন্মোচন হবে। রফতানি বাড়বে এবং বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, কোন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ কতটা উন্নত, তা বোঝাতে বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্স ব্যবহার করা হয়। ২০১৯ সালের ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের ১৭৬ থেকে ১৬৮- উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসার বিভিন্ন সূচক উন্নয়নে বিশ্বের সর্বোচ্চ ২০টি সংস্কারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অংকে অর্থাৎ ১০০-এর নিচে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্যে বিশেষায়িত দল গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সব সেবা সমন্বিত করে একই প্লাটফর্ম থেকে দেয়ার জন্য ২০১৯ সাল থেকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টাল ব্যবস্থার প্রচলন করা হয়। সেই থেকে বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সেবা ওই পোর্টালে পর্যায়ক্রমে যুক্ত করা হয়েছে।

সরকার বাণিজ্যিক কূটনীতি জোরদার করার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোয় ২৩টি বাণিজ্যিক উইং খুলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় (বিপিটিএ) আঞ্চলিক অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (আরপিটিএ), মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) সম্পাদনের লক্ষ্যে ২৩টি দেশের সঙ্গে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৮টি দেশে একতরফা শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পাচ্ছে। আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক বাণিজ্যিক জোটের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী . কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল সম্মেলন আয়োজন করেছে।

সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের ৩৮টি দেশের ৫৫২টি উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার সম্ভাবনা তৈরি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়াস থেকে সম্মেলনটি আয়োজন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন