অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগ

বিদেশে আটক বাংলাদেশীদের ফেরত আনার উদ্যোগ

মনজুরুল ইসলাম

ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে অবস্থানের জন্য আটক হয়েছেন বহু বাংলাদেশী। তাদের মধ্যে অনেকেই এখনো এসব দেশে বন্দি। এসব বাংলাদেশীর কেউ কেউ অবৈধভাবে ওইসব দেশে প্রবেশ করেছেন, আবার কেউ বৈধ পন্থায় গিয়েও পরবর্তী সময়ে অবৈধ হয়েছেন। অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নিতে বাংলাদেশকে বারবারই আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। আবার অবৈধ নাগরিকদের ফেরত নেয়ার চাপ রয়েছে বৈধ বাংলাদেশী কর্মী অধ্যুষিত দেশগুলো থেকেও। অবস্থায় নাগরিকত্ব যাচাই সাপেক্ষে বিভিন্ন দেশে আটক বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র তথ্য নিশ্চিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার কল্যাণ অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবর নভেম্বর মাসের কর্মপরিকল্পনায় বিভিন্ন দেশে আটক বাংলাদেশীদের পরিচয় যাচাইপূর্বক দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের জেলে বন্দি বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনেরও ব্যবস্থা করবে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে তিউনিসিয়া থেকে ৬১ জন মাল্টা থেকে ৩৫ জন বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া নেপাল থেকে একজন স্পেন থেকে চারজনকেও দেশে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশী নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য বিভিন্ন মিশন থেকে যেসব আবেদন আসছে, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। সম্প্রতি এমন ৭৫ জনের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৫ বাংলাদেশীর নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রতিবেদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেগুলো সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোতে পাঠিয়ে এরপর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রক্রিয়া চলবে। তিনি বলেন, এর আগে অবৈধভাবে গিয়ে আটকা পড়া ৫০০ জনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিতে বলেছিল জার্মানি। পরে বিভিন্ন সময় যাচাই-বাছাই করে তাদের মধ্য থেকে অনেককেই ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের কাছে প্রায় এক হাজার অবৈধ বাংলাদেশীর তালিকা পাঠায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যার বড় একটি অংশই আটক রয়েছে জার্মানিতে। এসব বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে না আনায় সম্প্রতি বাংলাদেশীদের ভিসা দেয়া সাময়িক বন্ধের প্রস্তাব করেছে ইইউ কমিশন। অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিকদের ফেরত নিতে অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে ইউরোপীয় কাউন্সিলে প্রস্তাব করা হয়।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশীদের ফেরাতে সেখানে থাকা দূতাবাসগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৈঠক থেকে জানা যায়, ইইউর দেয়া তালিকার মধ্যে ৯৫০ জনের মতো বাংলাদেশীর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ বা ৫৫০ জন বাংলাদেশী হিসেবে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। পর্যায়ক্রমে ইইউতে অবৈধভাবে থাকা সব বাংলাদেশীকে ফেরত আনার বিষয়েও সে সময় সিদ্ধান্ত হয়।

সম্প্রতি জার্মানিতে অবৈধভাবে অবস্থানের কারণে ৮০০ বাংলাদেশী নাগরিককে আটকের তথ্য জানিয়েছে জার্মানি। তাদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে চাপ দিচ্ছে দেশটি। আটককৃতদের ফেরত আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তও দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ফেরত আনার আগে প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক কিনা সে তথ্য যাচাই করতে চায় বাংলাদেশ। কারণ মনে করা হচ্ছে যে আটক ৮০০ জনের সবাই বাংলাদেশী নয়। এর মধ্যে রোহিঙ্গা অন্য দেশের নাগরিকও থাকতে পারে।

আটক অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে গত বছর থেকেই একাধিকবার অনুরোধ এসেছে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে। সম্প্রতি বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ ইইউ অনুবিভাগের সঙ্গে বৈঠকও করে ইইউ ঢাকা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। বৈঠকে জার্মানিতে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে চাপ দেয়া হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বিভিন্ন সময়ে ইইউতে যাদের বাংলাদেশী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশী নয়। তাদের মধ্যে অনেকেই রোহিঙ্গা। আবার অন্য দেশের নাগরিকদেরও বাংলাদেশী বলে দাবি করা হয়। তাই পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাই না করে কাউকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে নিজেদের নাগরিক নিশ্চিত হওয়ার পর অনেক বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ইইউ বাংলাদেশের মধ্যে যে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) রয়েছে, তার আওতায় যাচাই-বাছাই করে সেসব বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হয়েছিল। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। আটককৃত ব্যক্তিদের যে তালিকা পাওয়া গেছে, সেখান থেকে শতাধিক ব্যক্তির তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, বেশির ভাগই বাংলাদেশী নয়। তবে যেসব বাংলাদেশী শনাক্ত হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ইইউ কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয়, যেসব দেশ তাদের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেবে না, তাদের ভিসা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী ২০১৬ সালেই ইইউর সঙ্গে এসওপি সই করে বাংলাদেশ। এতে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নিজ নাগরিককে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি দেয় বাংলাদেশ।

ইইউর পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে ইইউতে ৯৩ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অবস্থায় ছিল। সংখ্যা এখন লক্ষাধিক। গত দুই বছরে প্রায় ২৩ হাজার ৭০০ বাংলাদেশী ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন