আবারো সরগরম হয়ে উঠেছে বরিশালের ইলিশ মোকাম

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বরিশাল

বরিশালের সর্ববৃহৎ মাছের আড়ত পোর্ট রোডের মোকামে আবারো ইলিশ আসতে শুরু করেছে। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে গতকাল ভোর থেকেই আসতে থাকে ইলিশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরগরম হয়ে ওঠে ইলিশ মোকাম। ক্রেতাদের ভিড়ে মুখর ছিল পুরো মোকাম এলাকা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো।  দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল এলাকাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর মেঘনাসহ কয়েকটি নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। শীত মৌসুমের শুরুতে হঠাৎ জালে এত ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরাও অবাক। এতে অঞ্চলের বৃহৎ ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডে বেচাকেনার ধুম পড়েছে। প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকায় দামও কমেছে কিছুটা। ক্রেতারাও খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সোমবার মধ্যরাতে শেষ হয়। রাত ১২টার পর থেকে নির্বিঘ্নে আবার ইলিশ শিকার শুরু করেন জেলেরা।

সরেজমিনে শহরের পোর্ট রোডের মোকাম ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা, আড়তদার মৎস্য শ্রমিকের উপচেপড়া ভিড়। ক্রয় করা ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়তের সামনে ককশিট প্যাকেটের স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

কীর্তনখোলা নদী থেকে খাল দিয়ে একের পর এক ইলিশ বোঝাই নৌকা, ট্রলার, স্পিড বোট এসে ভিড়ছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গে এসব নৌকা ঘিরে ধরছেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা। সেই ইলিশ কিনে স্তূপ করে রেখেছেন আড়তের সামনেই।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর উপকূল এলাকাসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর মেঘনা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশির ভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি। শীত মৌসুমে মেঘনায় এত ইলিশ ধরা পড়ার নজির নেই।

পাইকারি আড়তদাররা জানান, কেজি ২০০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম ওজনের মাছ কেজিপ্রতি হাজার টাকা, কেজি ৪০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছ হাজার ১০০, কেজির বেশি ওজনের মাছ ৯০০, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের মাছে ৭০০ টাকা কেজি, দুটিতে কেজি ওজনের মাছ কেজিপ্রতি ৬০০, তিনটিতে কেজি ওজনের মাছ ৫০০ এবং  -৯টিতে কেজি মাছের দাম ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতা শাফিন আহম্মেদ বলেন, দাম মোটামুটি সাধ্যের মধ্যে রয়েছে। আমার মতো অনেকেই ইলিশ কিনতে এসেছে। প্রচুর ইলিশ এসেছে, দেখে ভালোও লাগছে। অনেক দিন পর ইলিশের স্বাদ নিতে পারব।

বরিশাল পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল বলেন, কত মণ ইলিশ এসেছে তা বলতে পারব না এখনি। তবে প্রচুর ইলিশ এসেছে। দামও মধ্যম রয়েছে।

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ইলিশ প্রজনন মৌসুমের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। মাছের সাইজ যে পরিমাণ মাছ আসছে তাতে বোঝা যাচ্ছে আমরা সফল। আগামীতে আরো প্রচুর ইলিশ আসবে বলে আশা তার।

ইলিশ রক্ষা অভিযানে ৮৯৯ জনের কারাদণ্ড : গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিযান শেষ হয়েছে গত ২৫ অক্টোবর। টানা ২২ দিনে বরিশাল বিভাগে মোট ৮৯৯ জনের কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া  ১২ লাখ ৯২ হাজার দশমিক ৬৪৯ টাকার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। অভিযান পরিচালিত হয় হাজার ৬৫১টি। এসব অভিযান থেকে দশমিক ৩৭৯ টন ইলিশ উদ্ধার করা হয়। অভিযানে প্রায় ৬০ দশমিক ১৬১ লাখ মিটার দৈর্ঘ্যের কারেন্ট জাল আটক করা হয়। অভিযানে উপকূলীয় এলাকার তুলনায় বরিশাল নদী অঞ্চলে এবার বেশি জেলের কারাদণ্ড হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার তথ্য জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন