জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা

চলতি বছরও প্রতিশ্রুত অনুদান দিতে ব্যর্থ হবে উন্নত দেশগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যে পৌঁছতে জার্মানির বার্লিনে বিক্ষোভ করে একদল মানুষ ছবি: এপি

প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার অনুদান সরবরাহের লক্ষ্য ছিল ধনী দেশগুলোর। বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় দরিদ্র দেশগুলোকে সহায়তা দেয়ার কথা। তবে এখন পর্যন্ত সে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। চলতি বছরও সহায়তার সব অর্থ পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। খবর এপি।

যুক্তরাজ্য, কানাডা জার্মানির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রত্যাশা করেছিলেন, অর্থ অনুদান নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তা হয়তো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। হয়তো জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন বা কপ২৬-এর আগেই তা হয়ে যাবে। কিন্তু সেটি হয়নি। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩ সালের আগে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছা সম্ভব নয়। অর্থাৎ অর্থ দেয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণার তিন বছর পর তা পাওয়া যেতে পারে।

চলতি মাসের শেষ দিন গ্লাসগোয় হতে যাওয়া জলবায়ু আলোচনায় যুক্তরাজ্যের পক্ষে সভাপতিত্ব করবেন সংসদ সদস্য অলোক শর্মা। তিনি বলেন, ২০২০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিতভাবেই নষ্ট হয়েছে। এর আগে প্রথম প্রতিশ্রুতি ব্যর্থ হয় ২০০৯ সালে। এরপর ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু আলোচনায় নতুন করে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। সে সময়টা ছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গভীর হতাশার।

সময়মতো অর্থায়নের ঘাটতির জন্য অলোক শর্মাকে এখন দরিদ্র দেশগুলোর হতাশার মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলছেন, সামনের বছরগুলোতে ধনী দেশগুলোকে অর্থায়ন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থায়নের বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। সময়ের সঙ্গে অনুদানের অর্থের পরিমাণও বাড়াতে হবে। ২০২৫ সাল নাগাদ অর্থ ১১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে।

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন কানাডার পরিবেশ জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী জোনাথান উইলকিনসন জার্মানির উপপরিবেশ মন্ত্রী জোসেন ফ্ল্যাশবার্থ। প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সংস্থাটি জলবায়ু খাতে বিশ্বের দেশগুলোর অর্থায়ন পর্যবেক্ষণ করে।

জাতিসংঘের জলবায়ু আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেন নাইরোবিভিত্তিক পরিবেশবিষয়ক থিংকট্যাংক পাওয়ার শিফট আফ্রিকার প্রধান মোহাম্মদ আদো। তিনি বলেন, ধনী দেশগুলোর পরিকল্পনা দরিদ্রদের সন্তুষ্ট করতে পারবে না। মূল লক্ষ্যমাত্রা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। কপ২৬ সম্মেলনে জমা দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্য যে পরিকল্পনা তৈরি করেছে তা সফলতার মুখ দেখবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

অন্যদিকে অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনালের জলবায়ুবিষয়ক নীতি সমন্বয়কারী টেরেসা অ্যান্ডারসন বলেন, ধনী দেশগুলো এখনো দরিদ্র দেশগুলোকে যে অর্থায়ন করে তার একটি বড় অংশই দেয়া হয় ঋণ হিসেবে। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগীদেরই অর্থ আবার পরিশোধ করে দিতে হয়, যা তাদের জন্য এক ধরনের চাপ। এটা উল্লেখযোগ্য বিষয় যে জলবায়ু খাতের অর্থায়নকে অবশ্যই অনুদানের আকারে আসতে হবে; ঋণ হিসেবে নয়।

অলোক শর্মা বলেন, এবারের আলোচনায় বিষয়টিও উঠে আসবে। সেই সঙ্গে দরিদ্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তহবিলের অর্ধেক অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার খাতে ব্যয় করতে হবে। এখন সবচেয়ে বেশি অংশ ব্যয় হয় কার্বন নিঃসরণ কমানোর কাজে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট বলছে, ধনী দেশগুলোর মধ্যে কেবল ফ্রান্স, জাপান, নরওয়ে, জার্মানি সুইডেন যথাসময়ে এবং নিজেদের জন্য নির্ধারিত অনুদানের অর্থ জমা দিয়েছে। অন্যদিকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণে প্রথম সারিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে পড়েছে। যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২০২৪ সাল নাগাদ জলবায়ু খাতে অনুদানের পরিমাণ দ্বিগুণ করে দেবেন তিনি। সেটিও কতটুকু পূরণ হয় তাও দেখার বিষয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন