দিনাজপুরে বাফার গুদাম

জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার ক্রয়ে বাধ্য হচ্ছেন ডিলার-কৃষক

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, দিনাজপুর

দিনাজপুরের বাফার গুদাম থেকে জমাট বাঁধা ইউরিয়া সরবরাহ করা হচ্ছে ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

দিনাজপুরে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) গুদামে প্রায় পাঁচ হাজার টন ইউরিয়া সার বস্তায় জমাট বেঁধে আছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ডিলারদের নতুন সারের সঙ্গে ২০ শতাংশ জমাট বাঁধা ইউরিয়া কিনতে বাধ্য করছে গুদাম কর্তৃপক্ষ। ডিলারদের অভিযোগ, জমাট বাঁধা ইউরিয়া কিনতে রাজি হচ্ছেন না কৃষকরা।

ডিলাররা বলছেন, সাধারণত এক বস্তা ইউরিয়া বিক্রি করে ১০০ টাকা লাভ হয়। কিন্তু জমাট বাঁধা ইউরিয়া বিক্রি করতে বস্তাপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা ছাড় দিতে হচ্ছে তাদের। তার পরও কৃষকরা জমাট বাঁধা সার নিতে চান না। অন্যদিকে কৃষকরা বলছেন, ডিলারদের কাছ থেকে জমাট বাঁধা সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কারণ মৌসুমের শুরুতে ডিলারদের কাছ থেকে বাকিতে সার কেনেন প্রান্তিক কৃষকরা। ফসল তোলার পর সেই টাকা পরিশোধ করেন। এখন ডিলার জমাট বাঁধা সার দিলেও তা নিতে হচ্ছে তাদের।

দিনাজপুর সদর উপজেলার শিকদার হাট গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ছয়-সাত বছর আগের সার। বস্তার মধ্যে জমাট বেঁধে গেছে। সেই জমাট বাঁধা সারের খণ্ড ভাঙলেও একেবারে গুঁড়ো হয় না। দলা দলা থেকে যায়। জমিতে সমানভাবে সার ছিটানো যায় না।

জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. ইদ্রিস আলী প্রতি বছর জমিতে আগাম আলুর আবাদ করেন। তিনি এসেছেন উপজেলার রানীরবন্দর বাজারে ইউরিয়া সার কেনার জন্য। তিনি জানান, ১০ বস্তা ইউরিয়া সার কিনলে দুই বস্তা জমাট বাঁধা ইউরিয়া সার নেয়া লাগে। সব ডিলারের কাছে একই অবস্থা। সারের বড় গুটি গাছের গোড়ায় পড়লে তাড়াতাড়ি গলে না, অনেক ক্ষেত্রে গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

দিনাজপুর জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, জেলায় বিসিআইসির নিবন্ধনকৃত ডিলার রয়েছেন ১৩৩ জন এবং বিএডিসির নিবন্ধনকৃত ডিলার সংখ্যা ১৭১। ডিলাররা সরকার নির্ধারিত ৭০০ টাকা দরে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ইউরিয়া ক্রয় ৮০০ টাকা দরে তা বিক্রি করেন।

বেশি দামে সার বিক্রির কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, জেলায় ইউরিয়া সারের কোনো ঘাটতি নেই। এমনিতেই আমন মৌসুমে ইউরিয়া সারের চাহিদা কম থাকে। তার ওপর বিসিআইসি গুদাম থেকে সার উত্তোলন করতে গেলে বাধ্যতামূলক ২০ শতাংশ জমাট বাঁধা পুরনো বস্তা নিতে হচ্ছে, যা কৃষকরা কিনতে চান না। বাধ্য হয়ে বস্তাপ্রতি ১০-২০ টাকা ছাড়ে বিক্রি করতে হয়।

তিনি আরো জানান, গুদামের ধারণক্ষমতা ছয় হাজার টন। কয়েক বছর আগে ২০-২২ হাজার টন ইউরিয়া আমদানি করা হয়। ধারণক্ষমতার বেশি সার আমদানির ফলে বাইরে খোলা জায়গায় তা রাখা হয়। ২০১৭ সালের বন্যা বৃষ্টির পানিতে ভিজে জমাট বাঁধে। সেই সার এখনো বিক্রি হচ্ছে।

দিনাজপুর শহরের পুলহাট এলাকায় বাফার গুদাম ঘুরে দেখা যায়, গুদাম ভর্তি কয়েক হাজার ইউরিয়ার বস্তা জমাট বেঁধে আছে। জমাট বাঁধা সার গুদামে শ্রমিকদের দিয়ে রি-প্যাকিং করা হয়। বিসিআইসি গুদাম থেকে সার নিতে আসা ডিলারদের নতুন বস্তার সঙ্গে পুরনো সারও গাড়িতে সরবরাহ করছেন শ্রমিকরা।

দিনাজপুর বিসিআইসি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় ইউরিয়া সারের বরাদ্দ ছিল লাখ ১৮ হাজার ৭৪ টন। বুধবার পর্যন্ত বাফার গুদামে ইউরিয়া সারের মজুদ আছে হাজার ৭৫০ টন। জেলা বাফার গুদামের উপপ্রধান (রাসায়নিক) দ্বিজেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বর্তমানে জেলায় ইউরিয়া সারের সংকট নেই। ডিলার পয়েন্টেও সাড়ে চার হাজার টনের অধিক সার মজুদ আছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের সার সরবরাহ করা হয়েছে।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সারের গুণাগুণ ঠিক থাকবে কিনা, তা পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব না। তবে জমাট বাঁধা সার জমিতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কৃষকের।

তিনি বলেন, যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইউরিয়া গাছের গোড়ায় পড়ে, সেক্ষেত্রে গাছ মারাও যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন