প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়নের জন্য কমপ্লায়েন্সের চর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

মুনিরুজ্জামান শেখ বাংলালিংকের চিফ এথিকস অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স অফিসার। এর আগে তিনি বাংলালিংকের হেড অব ইন্টারনাল অডিট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি দেশের করপোরেট খাতে নীতি-নৈতিকতা কমপ্লায়েন্স চর্চার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন সুমন আফসার

সার্বিকভাবে দেশের করপোরেট খাতে কমপ্লায়েন্স চর্চার কতটা অগ্রগতি হয়েছে বলে আপনি মনে করেন

দেশের করপোরেট খাতে কমপ্লায়েন্স চর্চা ক্রমেই উন্নত হচ্ছে। বর্তমানে মূলত দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোয় কমপ্লায়েন্সের কার্যক্রম সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়। বেশির ভাগ দেশীয় প্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে এর চর্চা তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়। তবে দেশীয় কোম্পানিগুলোয়ও কমপ্লায়েন্সের চর্চা ধীরে ধীরে প্রসার লাভ করছে। কারণ বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশগুলোর কমপ্লায়েন্স চর্চা এবং দেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম দেখে তারাও কমপ্লায়েন্স চর্চার গুরুত্ব পরিধি সম্পর্কে জানতে পারছে। তাছাড়া অনেক দেশী কোম্পানিকে ব্যবসায়িক কারণে বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে কাজ করতে হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে তাদের শর্ত অনুযায়ী দেশী কোম্পানিগুলোকে কমপ্লায়েন্সের ওপর গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।

নীতি-নৈতিকতা রক্ষার পাশাপাশি কমপ্লায়েন্স একটি প্রতিষ্ঠানে আর কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্য সেটির ভাবমূর্তি করপোরেট কালচারের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর ভাবমূর্তি সামগ্রিক করপোরেট কালচারকে সমুন্নত রাখা কমপ্লায়েন্সের একটি প্রধান কাজ। একটি কোম্পানির কমপ্লায়েন্স রক্ষার দায়িত্ব যে শুধু কমপ্লায়েন্স বিভাগের, বিষয়টি তেমন নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কমপ্লায়েন্সের জন্য মূলত একটি সংস্কৃতি বা করপোরেট কালচার গড়ে তুলতে হয়। একটি প্রতিষ্ঠানে এমন সংস্কৃতি প্রয়োজন, যেখানে প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্মচারী আপসহীনভাবে নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে চাইবেন। এটি নিশ্চিত করা গেলে তারা সেখানে কাজ করতে গর্বিত বোধ করেন এবং প্রতিষ্ঠানের সুনামও বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এর ফলে প্রতিষ্ঠানের বাইরের দক্ষ পেশাজীবীরাও সেখানে কাজ করতে আগ্রহ বোধ করেন।

কমপ্লায়েন্স চর্চা কি কোনোভাবে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের গতি ব্যাহত করে?

সঠিকভাবে কমপ্লায়েন্স চর্চা করতে গেলে অবশ্যই কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে এর ফলে একটি প্রতিষ্ঠান যতটা উপকৃত হতে পারে, তা বিবেচনায় আনলে সময় ব্যয়কে যৌক্তিক বলেই মনে হবে। তাছাড়া কর্মপদ্ধতির কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে সময়টা কমিয়ে আনা সম্ভব। মাত্র একটি ত্রুটির কারণে প্রতিষ্ঠানের বছরের পর বছর ধরে গড়া সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে। তাই সবসময়ই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। আর এটি করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে কমপ্লায়েন্স চর্চা। যেমন কোনো থার্ড পার্টির সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের আগে আমরা সেটির বর্তমান অতীতের কার্যক্রম যাচাই-বাছাই করে দেখি। এখানে আপসের কোনো সুযোগ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করে হলেও আমরা এগুলো করে থাকি। তবে কীভাবে কাজগুলো আরো দক্ষতার সঙ্গে কম সময়ে করা সম্ভব, তা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা চালিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে আমরা যথাযথভাবে কমপ্লায়েন্স চর্চাও যেমন করেছি, তেমনি ব্যবসায়িকভাবে আগের তুলনায় সফলও হয়েছি। কমপ্লায়েন্সের চর্চা একটি প্রতিষ্ঠানের টেকসই উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকা অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নীতি বা আইনগত অভিযোগ উঠলে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন? কমপ্লায়েন্স বিভাগ এক্ষেত্রে বাড়তি কী ভূমিকা রাখে?

আমাদের প্রথম কাজ হলো সঠিকভাবে বিষয়টির তদন্ত করা। একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ব্যাপারে নানা কারণে অভিযোগ উঠতেই পারে। আমাদের তদন্তের উদ্দেশ্য হলো অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখা। তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের ত্রুটির মাত্রা ধরন নির্ধারণ করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমাদের একটি বিশেষ কমিটি রয়েছে। বাংলালিংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে কমপ্লায়েন্স বিভাগ থাকলে কাজগুলো আরো বেশি সুষ্ঠুভাবে দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করা যায়।

বাংলালিংকের কর্মীদের কমপ্লায়েন্স সম্পর্কে সচেতন করার জন্য আপনাদের কী কী কার্যক্রম রয়েছে?

বাংলালিংকে আমরা প্রতিনিয়ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কমপ্লায়েন্সের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করি। চাকরির শুরুতেই আমাদের কোড অব কনডাক্ট সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পাশাপাশি বছরব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের কমপ্লায়েন্সের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবগত করা হয়। নির্দিষ্ট একটি সপ্তাহকে আমরা কমপ্লায়েন্স উইক হিসেবেও পালন করি। পেশাগত কাজের নৈতিকতার বিষয়ে তারা যেকোনো সময় আমাদের জানাতে পারেন এবং সেই ব্যাপারে আমাদের পরামর্শ নিতে পারেন।

কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কোন ধরনের পদক্ষেপ বেশি জরুরি? রিঅ্যাকটিভ না প্রোঅ্যাকটিভ?

প্রোঅ্যাকটিভ অ্যাপ্রোচ অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বড় ধরনের কোনো সমস্যা এড়াতে হলে অবশ্যই আগে থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ সমস্যা সৃষ্টি হলে সেটি তদন্ত করে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আর তেমন কিছু করার সুযোগ থাকে না। তাই কোনো নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা সবসময় সজাগ থাকার চেষ্টা করি। কর্মকর্তা কর্মচারীরাও যেন একই মনোভাব নিয়ে কাজ করেন, তাও নিশ্চিত করার চেষ্টা করি আমরা।

করোনা মহামারীর সময় বাংলালিংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক ফ্রম হোম পদ্ধতিতে কাজ করছে। এর ফলে কি কমপ্লায়েন্স চর্চা কোনোভাবে ব্যাহত হচ্ছে?

করোনা পরিস্থিতিতে আমরা মূলত হাইব্রিড মডেলে কাজ করেছি। যাদের কাজ অফিসে না এলেও করা সম্ভব, তাদের বাড়িতে থেকেই কাজ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কাজের ধরনের কারণে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিত অফিসে আসতে হয়েছে। এখন সবাই সময়সূচি মেনে সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিন অফিস করছেন। আমাদের কমপ্লায়েন্স চর্চা এসবের কারণে তেমন প্রভাবিত হয়নি। যেসব কাজ আমরা সরাসরি অফিসে করতাম সেগুলো ভার্চুয়ালি করতে হয়েছে। প্রথম দিকে কিছুটা জটিলতা থাকলেও এখন সবাই এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। যেমন করোনা মহামারীর আগে কমপ্লায়েন্স  সেশনগুলো আমরা টাইগার্স ডেনের টাউন হলে করতাম। এখন কাজটা ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে করা হয়। সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতিতে আমরা কমপ্লায়েন্স কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পেরেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন