ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও টেকসই সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ৮ কোটি ডলার বরাদ্দের সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক পর্ষদ। ফিলিস্তিনে সহায়তার লক্ষ্যে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা এ তহবিলের অর্থ বিশ্বব্যাংকের আয়ের অংশ থেকে দেয়া হবে। তহবিলের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ গাজা ও পশ্চিম তীরের জন্য নির্দিষ্ট ট্রাস্ট ফান্ডে সরাসরি স্থানান্তর করা হবে। গতকাল বিশ্বব্যাংকের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।
পশ্চিম তীর ও গাজায় বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর কাঁথন শঙ্কর বলেন, এটি বিশ্বব্যাপী কভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় বর্ষ চলছে। চলতি বছরের মে মাসে গাজায় সংঘাতের ফলে আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা যখন এ সংকট মোকাবেলায় অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লড়াই করছে, তখনই বিশ্বব্যাংক অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে এ অনুদান নিয়ে আসছে।
ইউনাইটেড নেশন্স কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) তথ্য অনুসারে, তিন দশকের মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছে ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি দখলদারিত্বে থাকা দেশটিতে কভিড-১৯-এর ধাক্কায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
২০২০ সালে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ১১ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়। ১৯৯৪ সালে ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষ গঠনের পর এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সংকোচনের পরিমাণ। ইউএনসিটিএডির তথ্যমতে, ২০১৯ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
ইউএনসিটিএডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর দেশটিতে অর্থনৈতিক কার্যক্রম এক ধরনের স্থবির হয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি তাদের চাকরি হারায় এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়ে ২৬ শতাংশে পৌঁছে যায়। ২০২০ সালে ফিলিস্তিনের অর্থনীতিতে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৪১ শতাংশে। ২০১৯ সালে দেশটিতে শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের পরিমাণ ছিল ৪৪ শতাংশ। অর্থনৈতিক এ সংকট দেশটির পর্যটন, নির্মাণ, পরিষেবা, শিল্প-কারখানা ও কৃষিসহ সব অর্থনৈতিক খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
চলতি বছরের মে মাসে ফিলিস্তিনের জন্য একটি চার বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বিশ্বব্যাংক। মূলত কভিড-১৯ মহামারী থেকে উত্তরণে দেশটিতে স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত নিরাপত্তা দেয়াসহ কর্মসংস্থান তৈরি করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা গৃহীত হয়। চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাংক জানায়, ২০২১ সালে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি ৩ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, ৮ কোটি ডলারের এ তহবিল ব্যাংকের সহায়তা কৌশলকে সমর্থন করে। স্থিতিস্থাপকতা জোরদার ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য প্রদানের লক্ষ্যে এ তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি এ তহবিল গাজায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমকে সহায়তার লক্ষ্যে কাজের বিনিময়ে অর্থ আয়ের সুযোগ বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি এ তহবিল আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাজারে সংযুক্ত ফিলিস্তিনি অর্থনীতিকে জ্বালানি ও ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। প্রযুক্তি উদ্যোগগুলো ও তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাতের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ তহবিল ভূমিকা রাখবে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।