পদ্মা ও মেঘনা নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি —প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ছবি: পিআইডি

ফরিদপুর এর আশপাশের জেলা নিয়ে পদ্মা এবং কুমিল্লা এর আশপাশের জেলা নিয়ে মেঘনা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিভাগের বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দুটি নদীর নামে দুটি বিভাগ বানাব। একটি পদ্মা, অন্যটি মেঘনা। ফরিদপুর বিভাগ হবে পদ্মা নামে। আর কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনা নামে। কুমিল্লা নাম দেয়া হবে না। গতকাল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে কুমিল্লা নামে বিভাগ দেয়ার দাবি জানান জেলা সদর আসনের সংসদ সদস্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন বাহার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার নাম নিলেই মোশতাকের নাম মনে পড়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য জেলাও চাইবে তাদের নামে বিভাগ হোক। তাই কুমিল্লা বিভাগের নাম হবে মেঘনা। এটি আমার প্রস্তাব। তাছাড়া ফরিদপুরের নামেও বিভাগ দিচ্ছি না। ফরিদপুর বিভাগের নাম হবে পদ্মা।

অনুষ্ঠানে শারদীয় দুর্গাপূজার সময় ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সব ধর্মের লোকদের সম্প্রীতি নিয়ে বাস করতে হবে। যুগ যুগ ধরেই কিন্তু সব ধর্মের মানুষ আমরা একসঙ্গে বসবাস করে আসছি।

তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন সেখানে কিন্তু কোনো ধর্ম দেখে না। যারা রক্ত দিয়েছেন তাদের সবার রক্ত, যে যে ধর্মের হোক একাকার হয়ে মিশে গেছে। কাজেই এটা সবার মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব শ্রেণী-পেশার মানুষের। সবাই একটা মর্যাদা নিয়ে চলবে, সম্মান নিয়ে চলবে, সেটা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে।

কুমিল্লার ঘটনাটি দুঃখজনক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানবধর্মকে সম্মান করা এটা ইসলামের শিক্ষা। নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার আছে, অন্যের ধর্মকেও কেউ হেয় করতে পারে না। এটা ইসলাম শিক্ষা দেয় না। আর নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়। অন্যের ধর্মকে যদি হেয় করা হয়, তাহলে নিজের ধর্মকে অসম্মান করা হয়।

আইন নিজের হাতে তুলে না নিতেও সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আরেকটি কথা, আইন কেউ হাত তুলে নেবে না। কেউ যদি অপরাধ করে সে যে- হোক অপরাধীদের বিচার হবে। আমাদের সরকার সেই বিচার করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নবী করিম (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না। আমাদের সবারই সে কথাটা মেনে চলতে হবে। সে কথাটা স্মরণ করতে হবে। সেই কথাটা জানতে হবে। তাহলেই আমাদের ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাটা পাব। প্রতিটি ধর্মই শান্তির বাণীর কথা বলে। সবাই শান্তি চায়।

অনুষ্ঠানে কুমিল্লা প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার-এর উদ্বোধন

রাজধানীর পূর্বাচলে বাণিজ্য মেলার স্থায়ী ঠিকানা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার-এর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন সরকারপ্রধান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মনীতির আওতায় যেসব বিকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সেগুলো আমরা নেব, নিতে পারব। কাজেই আমার মনে হয় এখানে কোনো অসুবিধা হবে না। অনেকের হয়তো একটু সন্দেহ থাকতে পারে, উন্নয়নশীল দেশ হলে বোধ হয় অনেক সুবিধাবঞ্চিত হব। সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার থেকেও সুবিধা অর্জন করতে পারব আরো অনেক বেশি।

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাইরে বিনিয়োগের সম্ভাবনাও সরকার তৈরি করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক দেশে আমরাও বিনিয়োগ করতে পারি। আমাদের ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন। বেসরকারি খাতও বিনিয়োগ করতে পারবে। আমি ভবিষ্যতে সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করব। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

অনুষ্ঠানে রফতানি বাজারে টিকে থাকতে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা তৈরির ওপরও তাগিদ দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, যখনই আপনারা কোনো পণ্য উৎপাদন করবেন সময়ের চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে বা কোন দেশের জন্য করছেন, সেখানকার চাহিদার সঙ্গে মিলিয়ে উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করতে হবে। সেখানে কিন্তু কিপ্টামি করলে চলবে না। কাজেই সেটা যদি করতে পারেন, বাজারে টিকে থাকতে পারবেন।

তিনি বলেন, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো তাদের সবাইকে আমি অনুরোধটা করব, আপনারা চেষ্টাটা করবেন; আমাদের পণ্যের আরো বহুমুখীকরণ করা, রফতানি বাস্কেটটা আরো বাড়ানোা এবং কোন ধরনের পণ্য কোন দেশে আমরা রফতানি করতে পারি, সে বিষয়টার ওপর আরো গুরুত্ব দেয়া এবং সেভাবে পণ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা নেয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন