করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় বিশ্বের অনেক দেশেই ধীরে ধীরে তুলে দেয়া হয়েছে লকডাউনসহ সতর্কতামূলক বিধিনিষেধ। শর্তসাপেক্ষে খুলে দেয়া হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, বিপণিবিতান ও সিনেমা হল। অনেকে সুযোগ পাচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা কিংবা দর্শনীয় স্থান ভ্রমণেরও।
১৭ অক্টোবর থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে লকডাউন তুলে নেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ২৬২ দিনের লকডাউনের সমাপ্তি টানা হয়েছে। এর আগে সিডনি, ক্যানবেরায় শিথিল করা হয় বিধিনিষেধ। অস্ট্রেলিয়ার মতো অনেক দেশই এখন কঠোর বিধিনিষেধের নীতি থেকে সরে আসছে। টিকাদানের সংখ্যা বাড়ায় প্রত্যাহার করা হচ্ছে বিধিনিষেধ। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি ফের শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোকে।
ইউরোপে টানা তৃতীয় সপ্তাহের মতো সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সতর্কবার্তা দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বুধবার দেয়া বিবৃতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, তাপমাত্রা কমে যাওয়া, কাজ, ভ্রমণ ও অবকাশকালীন কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসা এ সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ।
সংস্থাটির হিসাবে সংক্রমণ বৃদ্ধির শীর্ষে রয়েছে ছয়টি অঞ্চল। এর মধ্যে প্রথম দুটি নাম ইউরোপ ও আমেরিকা। ১৯ অক্টোবর প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, ইউরোপে গত রোববার ১৩ লাখের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহের হিসাবে ৭ শতাংশ বেশি। ব্রিটেন ও রাশিয়ায় বৃদ্ধির হার ১৫ শতাংশ। ইউরোপে বেশি আক্রান্ত অন্যতম দেশ হলো ব্রিটেন, রাশিয়া ও তুরস্ক। এদিকে তথ্য বলছে, আফ্রিকা ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সংক্রমণ নেমে এসেছে যথাক্রমে ১৮ ও ১৬ শতাংশে। আফ্রিকায় মৃতের সংখ্যা কমে গেছে এক-চতুর্থাংশ। যদিও এসব দেশে টিকার ঘাটতি প্রবল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক ডক্টর মাইকেল জোসেফ রায়ান জানান, সংক্রমণ বেড়েছে টানা তিন সপ্তাহ ধরে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত প্রশ্নোত্তর প্রদানকালে তিনি বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু যখন দিন দিন কমে আসছে তখন ইউরোপে তা টানা তিন সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। বিশেষ করে চেক রিপাবলিক, হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডে এটি সবচেয়ে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব দেশে গত সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। আর গত সপ্তাহে রাশিয়া একের পর এক সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড করে।
জোসেফ উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, এরই মধ্যে অনেক জায়গায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) শয্যার সীমাবদ্ধতা দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবায় চাপ তৈরি করেছে। তবে তিনি টিকাকরণ প্রসঙ্গে আশাবাদী। বলেন, ভালো খবর হলো বৃদ্ধির এ হার চরম উদ্বেগের নয়। সেই সঙ্গে টিকা কর্মসূচি জোরদার করা হলে আশঙ্কা অনেকটা দূর হবে।
এ অবস্থায় ফের বিধিনিষেধ ও লকডাউনের বিষয়ে ভাবতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে। এরই মধ্যে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ফের কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। গতকাল স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়। এতে রেস্টুরেন্ট ও খাদ্যপণ্য নয় এমন দোকানপাট বন্ধ রাখাসহ বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়, দৈনিক করোনা সংক্রমণ শনাক্ত ও নিহতের সংখ্যা রেকর্ড সর্বোচ্চ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
দেশটির করোনা টাস্কফোর্সের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ হাজার ৩৩৯ জন নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া মারা গেছে ১ হাজার ৩৬ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৩৮৯, যা ইউরোপের কোনো দেশে সর্বোচ্চ।
গত বুধবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করায় ৩০ অক্টোবর থেকে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। প্রেসিডেন্টের এ আহ্বানের পর মস্কোর মেয়র সার্গেই সবইয়ানিন রাজধানীতে এ বিধিনিষেধের ঘোষণা দিলেন। ঘোষণায় তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে আগামী ৭ নভেম্বর পর্যন্ত মস্কোর রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে, খাদ্যপণ্য নয় এমন দোকান, ব্যায়ামাগার, সিনেমা হল ও অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। একই সঙ্গে বন্ধ থাকবে বিদ্যালয়ও।
এদিকে ব্রিটেনের করোনা নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশটির জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। আসন্ন শীতে করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঠেকাতে তারা পুনরায় কঠোর বিধিনিষেধের দাবি জানিয়েছেন। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন করোনা মোকাবেলায় প্ল্যান বি থাকায় সরকারের অবহেলার অভিযোগ এনেছে। সাতদিন ধরে কভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়ানোর প্রেক্ষাপটে তারা এ ক্ষোভ প্রকাশ করে। যদিও ব্রিটিশ সরকার বরাবরের মতোই পুনরায় লকডাউনের বিষয় নাকচ করে দিয়েছে।
