বাজেটের নিয়ম পুনর্বিবেচনা করতে চায় ইইউ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপীয় কমিশনের সদর দপ্তর ছবি: রয়টার্স

কভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জীবনযাপনে বিশ্বের মানুষকে নানা ধরনের নতুন নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়েছে। একইভাবে পরিবর্তন এসেছে অর্থনীতিতে। মহামারী-পরবর্তী জীবনের সঙ্গে মানিয়ে চলতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) তাদের জাতীয় বাজেট নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করার কথা ভাবছে। যাতে মহামারী-পরবর্তী বাস্তবতা, উচ্চঋণ শূন্য কার্বন নিঃসরণ অর্থনীতির সঙ্গে মানিয়ে চলা যায়।

বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ইইউ জোটভুক্ত দেশগুলোর সরকার, অর্থনীতিবিদ শিক্ষাবিদরা এখন ভাবছেন কীভাবে স্থিতিশীলতা উন্নয়ন চুক্তিকে আরো সহজ করা যায় তা নিয়ে। বিষয়টি এত জটিল হয়ে উঠেছে যে অনেক মানুষের পক্ষে এটি বুঝতে পারা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

১৯৯৭ সালে ইইউ জোটগুলোর বাজেটে অন্তর্ভুক্ত ছিল দুটি আইন একটি রেজল্যুউশন। যার আকার ছিল ১২ পৃষ্ঠার মতো। সেই থেকে পর্যন্ত এর আকার বহুবার বদলেছে। এখন এতে যুক্ত হয়েছে ১০৮ পৃষ্ঠার ব্যবহারকারী ম্যানুয়াল। ইউরোপীয় কমিশন যেটি প্রতি বছর আধুনিক রূপ দেয়।

চুক্তির প্রধান লক্ষ্য হলো সরকারের ঋণের পরিমাণ কমিয়ে ইউরোর মূল্য রক্ষা করা। কারণ গোটা ইউরোজোনের একটিই মুদ্রানীতি রয়েছে। তবে ইউরোভুক্ত অনেক দেশেরই নিজস্ব বাজেট নীতি আছে। যে কারণে এখন পর্যন্ত নানা ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। ২০০২ সালে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট রোমানো প্রোডি চুক্তিকে অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছিলেন। এখনো তিনি নিজের সে মন্তব্যে অটল। তিনি বলেন, এটি আমাকে একই সঙ্গে নানা ধরনের সংকটের মুখোমুখি করেছিল। পরে অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। অনেকেই আমাকে বলেছেন, আমিই সঠিক ছিলাম।

একক মুদ্রার সঙ্গে জাতীয় মুদ্রানীতি পরিচালনার সমস্যাগুলো প্রথম সামনে আসে ২০১০ সালে। যখন ইইউ পরিসংখ্যান অফিসের অগোচরে গ্রিস অতিরিক্ত ঋণ নিতে এবং কমিশন তাদের নিয়মকানুন খাটাতে শুরু করে। তাতে সংকট আরো ঘনীভূত হয় এবং মুদ্রাবাজার প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড়ায়।

এখন পর্যন্ত তিনবার চুক্তিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবার ২০০৫ সালে। যখন ফ্রান্স জার্মানি নিজেদের ক্ষেত্রে নিয়মগুলো পালন করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ২০১১ ২০১৩ সালে। যখন ঋণসংক্রান্ত সমস্যা চলছিল।

এখন যে পরিবর্তন আনার কথা আলোচনা হচ্ছে, সেটি কোনো সংকট তৈরি করবে কিনা তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। এবারের চিন্তা অবশ্য কভিড-১৯ মহামারীসংক্রান্ত। মহামারীর কারণে ইউরোজোনের গড় ঋণের পরিমাণ বেড়ে জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ১০০ শতাংশ হয়েছে। নিয়মগুলোর যখন খসড়া করা হয়, তখন এর পরিমাণ ছিল ৬০-৭০ শতাংশ।

নিয়ম বহালের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ২৭ দেশের ইইউ জোটের ২০৫০ সালের কার্বন নিরপেক্ষ হতে হলে শত শত বিলিয়ন ইউরো প্রয়োজন। থিংক ট্যাংক ব্রুগেলের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, জলবায়ুসংক্রান্ত অর্থের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। তাই বাজেট নীতিমালায় বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়েও শিগগির আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইইউ। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, চুক্তিটি এখনই যথেষ্ট নমনীয়। আরো বেশি শিথিল করার চেষ্টা করা হলে তা উল্টো সংকট তৈরি করতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন