প্রথম প্রান্তিক ২০২১

নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে এফডিআই প্রবাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস মহামারী পূর্ববর্তী সময়ে ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। ওই সময়ে দেশে নিট এফডিআই প্রবাহ বেড়ে ১০৩ কোটি ৫৫ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ওই বছরের শেষ দিন চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার খবর জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পরবর্তী সময়ে দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরে ভাইরাস। মুহূর্তেই থমকে যায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম। মহামারীর প্রভাবে কমতে শুরু করে দেশের এফডিআই প্রবাহও। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি। আবারো ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে এফডিআই প্রবাহ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে নিট এফডিআই প্রবাহ ছিল ৫৮ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। ২০১৯ সালের একই সময়ের থাকা এফডিআই প্রবাহের চেয়ে এটি ছিল ৪৩ দশমিক শতাংশ কম। অন্যদিকে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট এফডিআই প্রবাহ ছিল ৫৯ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার সমপরিমাণ, যা ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে দেখা যায়, ২০২০ সালের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি কাটিয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে দেশের এফডিআই প্রবাহ।

ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাংলাদেশে নিয়ে আসা অর্থসংক্রান্ত জরিপের ভিত্তিতেই এফডিআই প্রবাহের পরিসংখ্যান গতিপ্রকৃতির তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে নিট নিজস্ব মূলধন (ইকুইটি ক্যাপিটাল), আয়ের পুনর্বিনিয়োগ (রিইনভেস্টেড আর্নিংস) আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণ (ইন্ট্রাকোম্পানি লোন) তিন ভাগে এফডিআই প্রবাহ হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের আয়ের পুনর্বিনিয়োগ ছিল সবচেয়ে বেশি। সময়ে মোট এফডিআই প্রবাহ ৫৯ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারের মধ্যে নিট নিজস্ব মূলধন ছিল ১৪ কোটি লাখ ৭০ হাজার ডলার সমপরিমাণ। আয়ের পুনর্বিনিয়োগ ছিল ৩৮ কোটি লাখ ১০ হাজার ডলার। পাশাপাশি আন্তঃপ্রতিষ্ঠান ঋণপ্রবাহ ছিল কোটি লাখ ৭০ হাজার ডলার সমপরিমাণ।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নিট এফডিআই প্রবাহ সবচেয়ে বেশি এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে। সময়ে দেশটি থেকে আসা এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ কোটি ৫৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। এর পরেই সবচেয়ে বেশি এফডিআই প্রবাহ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাজ্য থেকে আসা এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই প্রবাহ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রথম প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এফডিআই প্রবাহের পরিমাণ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।

নিট এফডিআই প্রবাহের শীর্ষে থাকা ২০ দেশের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে, হংকং, নেদারল্যান্ডস, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরিশাস, জাপান, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডস, মাল্টা, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া বারমুডা।

বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে নিয়োজিত পোশাক কর্তৃপক্ষ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড-১৯-এর আগে থেকেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আসা দরকার ছিল তা আসেনি। এক্ষেত্রে আরো তত্পরতা সমন্বয়ের প্রয়োজন, যার ঘাটতি আছে। কভিড প্রেক্ষাপটে এখন আরো প্রস্তুতি নিয়ে পরিপূর্ণ একটি পরিকল্পনার প্রয়োজন আছে। মহামারীর কারণে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। সেই সম্ভাবনাগুলোর পরিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। কভিডের অভিঘাত কাটিয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়তে শুরু করলেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে অনেক কম। তার পরও ইতিবাচক ধারা বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন