এমিরেটস সিমেন্ট ও পাওয়ার একীভূতকরণ

হাইকোর্টের অনুমতি পেয়েছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

এমিরেটস সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড এমিরেটস পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে একীভূতকরণের জন্য হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের করা আবেদনের পক্ষে অনুমতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর আগে কোম্পানি দুটিকে একীভূতকরণ স্কিমে শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে অনুমোদন নেয় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিটি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আল্ট্রাটেক সিমেন্ট মিডল ইস্ট ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের কাছ থেকে এমিরেটস সিমেন্ট এমিরেটস পাওয়ারের শতভাগ শেয়ার কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। এক্ষেত্রে মূল্য ধরা হয় কোটি ১৫ লাখ ১৮ হাজার ৬৮৪ ডলার বা ১৮২ কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ৩৮৪ টাকা। এরপর গত বছরের অক্টোবরে হাইডেলবার্গের পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানি দুটিকে একীভূতকরণের খসড়া স্কিমে অনুমোদন দেয়। ধরনের স্কিম চূড়ান্ত বাস্তবায়নের আগে হাইকোর্ট শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একীভূতকরণ স্কিমে অনুমোদন পেতে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, এমিরেটস সিমেন্ট এমিরেটস পাওয়ার ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২২৮ ২২৯ ধারার অধীনে উচ্চ আদালত বরাবর যৌথভাবে আবেদন করে। উচ্চ আদালত বছরের ফেব্রুয়ারিতে একীভূতকরণ স্কিমে অনুমোদন দেন। উচ্চ আদালতের অনুমোদন লাভের পর বছরের মে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) আহ্বান করে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেয় হাইডেলবার্গ সিমেন্ট।

২০১০ সালে ভারতীয় আদিত্য বিরলা গ্রুপ কর্তৃক ইটিএ স্টার সিমেন্টকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাজারে আল্ট্রাটেক সিমেন্টের উৎপাদন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে আদিত্য বিরলা গ্রুপ বাংলাদেশে এমিরেটস সিমেন্ট নামে সাবসিডিয়ারি কোম্পানি গঠন করে কার্যক্রম চালায়। এমিরেটস সিমেন্টের মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে একটি গ্রাইন্ডিং প্লান্ট রয়েছে। অন্যদিকে কাঁচপুর চট্টগ্রামে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দুটি গ্রাইন্ডিং প্লান্ট রয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের সিমেন্টের বাজারে একসময় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রাধান্য ছিল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়েও দেশের চাহিদা ৯৫ শতাংশ সিমেন্ট আমদানির মাধ্যমে মেটানো হতো। কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এর পর থেকেই স্থানীয় উদ্যোক্তারা সিমেন্ট খাতে বিনিয়োগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে এসে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সিমেন্টের বাজারের দখল নিয়ে নেয় স্থানীয় উৎপাদকরা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমিরেটস সিমেন্ট বাংলাদেশে ব্যবসায়িকভাবে চাপে পড়ে যায়। এতে তারা বাংলাদেশের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে স্থানীয় উৎপাদকদের আগ্রাসী ব্যবসায়িক কৌশলের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাওয়া হাইডেলবার্গ সিমেন্ট বাজারে নিজেদের হিস্যা ধরে রাখতে ব্যবসা সম্প্রসারণে নজর দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বাংলাদেশে এমিরেটস সিমেন্ট পাওয়ারকে কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে ব্যবসা সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে গত বছর মেঘনা এনার্জি লিমিটেডকেও অধিগ্রহণ করে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। মেঘনা এনার্জির ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ বা ৪০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫৭টি শেয়ার প্রিমিয়ামসহ কিনতে কোম্পানিটির ব্যয় হয় ৯১ কোটি লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ধরা হয় ১০০ টাকা। আর প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ১২৪ টাকা ৫২ পয়সা।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২১ হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ভালো ব্যবসা করেছে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায়। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা হয়েছে ৫৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে লোকসান ছিল ১৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে হাইডেলবার্গ সিমেন্টের বিক্রি হয়েছে হাজার ২৬৬ কোটির টাকা। যেখানে গত বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৮১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি বেড়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৯৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে পরিচালন মুনাফা ছিল ১৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।

চলতি হিসাব বছরের তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে টাকা ৮৮ পয়সা। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল টাকা পয়সা। বছরের ৩০ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৬ টাকা পয়সা।

অন্যদিকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) হাইডেলবার্গ সিমেন্টের বিক্রি হয়েছে ৩০৬ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ২৫১ কোটি টাকা। সময় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যা ছিল কোটি ২২ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কর-পরবর্তী লোকসান ছিল ১০ কোটি টাকার বেশি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন