সময়ের ভাবনা

গর্ভবতী মায়েদের নিবন্ধীকরণের আওতায় আনতে হবে

আবু তাহের মো. সানাউল্লাহ নূরী

বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ। লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশে ১৭-১৮ কোটি মানুষের বসবাস। স্বাধীনতার সময় দেশের জনসংখ্যা সাত কোটি থাকলেও গত ৫০ বছরে জনসংখ্যা বেড়ে আজকের অবস্থায় চলে এসেছে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্য, অপুষ্টি, বেকারত্ব, দুর্নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্বল কৃষি ব্যবস্থাপনাসহ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, গার্মেন্ট শিল্পের উত্থান এবং পাশ্চাত্য কৃষিতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে আজকে একটি উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিগণিত হচ্ছে।

উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে থাকা পরিস্থিতি থেকে অনুকূল একটি পরিবেশে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতিই হচ্ছে উন্নয়ন। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় এবং গড় আয়ুষ্কাল ছিল যথাক্রমে ১২৯ মার্কিন ডলার এবং ৫৯ বছর। মাঝখানে সামরিক শাসনের সময়টুকু ব্যতিরেকে দুর্নীতি অব্যবস্থাপনা কমিয়ে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ একটি উন্নয়নশীল দেশ।

মা শিশু স্বাস্থ্য বলতে সাধারণত গর্ভাবস্থায় মায়ের যত্ন, নিরাপদ প্রসব সেবা, প্রসব-পরবর্তী সেবা এবং নবজাতকসহ পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের সেবা গ্রহণসংক্রান্ত বিষয়গুলোকে বুঝিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত প্রসব-পূর্ব সেবা গ্রহণের হার, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা গ্রহণের হার, প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের হার এবং সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিসহ (ইপিআই) শিশুদের বিভিন্ন সেবা গ্রহণের হারকে সূচক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে মা শিশুস্বাস্থ্যের সেবা প্রদানের বিষয়টিকে নিয়ে আলোচনা করতে গেলে -সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকটি বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা একান্ত আবশ্যক।

স্বল্প মেয়াদে আমাদের দেশের প্রতিটি গর্ভবতী মায়েদের একটি নিবন্ধীকরণ পদ্ধতির আওতায় আনা যেতে পারে। পরবর্তী সময়ে নিবন্ধিত প্রতিটি মাকে একটি মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় এনে সঠিক সময়ে সেবা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশে গত এক দশকে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে চারবার সেবা (এএসসি) গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়ে থাকে। চার সেবা সাধারণত গর্ভের চতুর্থ থেকে পঞ্চম মাস, পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ মাস, অষ্টম মাস এবং নবম মাসের শুরুতে সেবা গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভের (বিডিএইচএস) সর্বশেষ প্রকাশিত রিপোর্ট ২০১৭-১৮ অনুযায়ী, শতকরা ৯২ ভাগ গর্ভবতী মা কোনো না কোনো চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত সেবা প্রদানকারীর কাছ হতে প্রসব-পূর্ব সেবা গ্রহণ করেছেন, যা ২০০৭ সালে ছিল শতকরা ৬৩ দশমিক ভাগ। আর নিয়মানুযায়ী মোট চারটি এএনসি সেবা গ্রহণ করেছেন এমন মায়েদের শতকরা হার ছিল মাত্র ৪৩ দশমিক ভাগ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বা পাকিস্তান অথবা নেপালের সঙ্গে তুলনা করলে এটা হয়তো কিছুটা তুলনামূলক বেশি হতে পারে। কিন্তু আমরা যদি হার শ্রীলংকার সঙ্গে তুলনা করতে যাই, তাহলেই লজ্জায় পড়তে হবে।

প্রসব সেবা

বিডিএইচএস রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৭ সালেও মাত্র ২১ শতাংশ মায়েদের প্রসব সেবা প্রশিক্ষিত সেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হতো। তবে এক যুগ ধরে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে শতকরা ৫০ ভাগ মা কোনো না কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে প্রসব সেবা গ্রহণ করেছেন। তবে এখানে আরেকটা বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে, সরকারি সেবাকেন্দ্রগুলো হতে মাত্র ১৪ দশমিক শতাংশ সেবা গ্রহণকারী প্রসব সেবা গ্রহণ করেছেন, যেখানে ৩১ দশমিক শতাংশ গর্ভবতী বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে সেবা গ্রহণ করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাত্র ১০ দশমিক শতাংশ গর্ভবতী মা সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে প্রসব সেবা গ্রহণ করেছেন। আর সেবা গ্রহণের বিভাগওয়ারি তুলনা করলে দেখা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা গ্রহণে বরিশাল ময়মনসিংহ বিভাগ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে।

মা শিশু বা নবজাতকের মৃত্যু রোধে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব এবং প্রসব-পরবর্তী সময়ে মা নবজাতকের সেবা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় হতে সেবা গ্রহণে খুব একটা গুরুত্ব দেয়া না হলেও বর্তমান সময়ে সেবা প্রদান আলাদা একটি গুরুত্ব বহন করে আসছে। ২০১৭-১৮ সালে একটি শিশুর জন্মের দুিদনের মধ্যে শতকরা ৫২ ভাগ মা শিশুই কোনো না কোনো প্রশিক্ষিত সেবা প্রদানকারীর কাছ থেকে প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণ করে থাকে।

কয়েক বছর ধরেই মেয়েদের প্রথম গর্ভধারণের বয়স বৃদ্ধি, গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবারসহ প্রসবপূর্ব চেকআপ, প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা গ্রহণের জন্য নবজাতকের মৃত্যুসহ সব ধরনের শিশুমৃত্যুর হার অনেকাংশেই কমে এসেছে। গর্ভধারণজনিত মায়ের মৃত্যু গত কয়েকটি দশকে উল্লেখযোগ্য হারে কমলেও বর্তমান সময়ে এটি একটি স্থির অবস্থায় এসে আটকে রয়েছে। গর্ভকালীন বা প্রসবের সময় বা প্রসব-পরবর্তী ৪২ দিনের মধ্যে গর্ভধারণ-সংক্রান্ত কারণে কোনো মায়ের মৃত্যু হলে তাকে মাতৃমৃত্যু বলা হয়ে থাকে। ১৯৯০ সালের দিকে সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে প্রতি এক লাখে ৩৯৯ জন মা মারা যেতেন। আর মারা যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসাবে প্রসবকালীন রক্তপাত, অনিরাপদ গর্ভপাত, গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ, প্রসবকালীন সংক্রমণ এবং অন্যান্য কারণে এসব মা মারা যান। ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় মায়ের মৃত্যুহার কমে প্রতি লাখে ১৭০-এর কাছাকাছি রয়েছে। তবে এখানে বিপজ্জনক বিষয় হলো, বর্তমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মায়ের মৃত্যুহার খানিকটা বেড়ে গেছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই নবজাতকের মৃত্যুও খানিকটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সাধারণত জন্মের পর পরই শিশুমৃত্যুর হারটা সবচেয়ে বেশি থাকে। ফলে প্রসব-পরবর্তী সময়ে যত অধিক সময় পর্যন্ত একটি নবজাতককে বাঁচিয়ে রাখা যায়, ঠিক ততটাই দ্রুতভাবে নবজাতকের মৃত্যুর হারটা কমে আসে। বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এজন্য নিরাপদ প্রসব সেবা নিশ্চিতকরণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করে আসছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ২৪ নিরাপদ প্রসব সেবা নিশ্চিত এবং উপজেলা পর্যায়ে সিজারিয়ান সেকশন সেবা প্রদান নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে একটু একটু করে সরকারি সেবাকেন্দ্রগুলো থেকে প্রসব সেবা প্রদানের হার বাড়ছে। ফলে বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি প্রসব সেবা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সেবাকেন্দ্র এবং প্রশিক্ষিত জনবলের মাধ্যমেই দেয়া হচ্ছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা গ্রহণে শহরাঞ্চল গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিয়ে আনা খুব জরুরি।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা প্রদানের হার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে নবজাতক শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সফলতা লাভ করেছে। সাধারণত একটি শিশু জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা গেলে তাকে নবজাতকের মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। আর পাঁচ বছর বয়সের নিচে কোনো শিশু মারা গেলে তাকে শিশুমৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ্বে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয়, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আর এসব নবজাতকের মৃত্যুর পেছনের মূল কারণগুলো হচ্ছে অপরিণত অবস্থায় জন্ম, ইনফেকশন, শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা এবং অনিরাপদ প্রসব সেবা গ্রহণ। বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি হাজার জীবিত জন্মে পাঁচ বছর বয়সের নিচে ৪৫টি শিশু মারা যায়। যার মধ্যে ৩০টি শিশুই জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে মারা যায় অর্থাৎ নবজাতকের মৃত্যু মোট শিশুমৃত্যুর দু্ই-তৃতীয়াংশ। শিশুমৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য।

আমাদের চ্যালেঞ্জ করণীয়

কৈশোরকালীন সেবা বাল্যবিবাহ

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময় অর্থাৎ ১৯৭১-পরবর্তী সময় থেকে আমাদের দেশের মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ছিল ১০ থেকে ১১ বছর। শিক্ষায় অনগ্রসরতা, দারিদ্র্য কুসংস্কার, মেয়েদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেয়ার সুযোগের অপ্রতুলতার কারণে একটি পরিবারে মেয়েদের বোঝা হিসেবে মনে করা হতো। ফলে পিতা-মাতারা অল্প বয়সেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইতেন। ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে বয়সটা খুব ধীর লয়ে বাড়লেও আজ পর্যন্ত ১৮ বছরের ঘরেই রয়ে গেছে। মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়লেও বিয়ের গড় বয়সটা তেমন একটা বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৪ সালের মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকসের ফলাফল অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স ১৮ দশমিক বছর এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৫ দশমিক বছর। এখানে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে যে এটা গড় বয়স। অর্থাৎ এই মেয়েদের একটা বড় অংশেরই ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আর শারীরিকভাবে একটি মেয়ে ২০ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণের জন্য উপযুক্ত হয়ে ওঠে না। ফলে মা শিশু দুজনই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতাসহ মৃত্যু ঝুঁকিতে থেকেই যায়। একই সঙ্গে আমাদের দেশের মায়েদের জন্য একটি গুপ্তঘাতক হচ্ছে অপুষ্টি। কমবেশি আমাদের মেয়েদের বা মায়েদের শতকরা ৯০ ভাগের বেশি অপুষ্টিতে ভুগে থাকে। অপুষ্টির মাত্রাটি পরিমাপ করা হয় তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখে। 

নারীর শিক্ষা ক্ষমতায়ন

তবে ১৯৯০-পরবর্তী সময়গুলোতে মেয়েদের প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান শুরু করে। ফলে একটু একটু করে আমাদের মেয়েদের শিক্ষার হার ক্রমে বাড়ছে এবং আমরা ক্রমে একটু একটু করে শিক্ষিত মায়েদের পাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে একটি ধনাত্মক প্রভাব পড়ছে। ১৯৭৯ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে পোলিও নির্মূলের জন্য টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও বর্তমান বাংলাদেশে ১০টি রোগের জন্য শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে এবং বর্তমানে শতকরা ৮২ ভাগের চাইতে বেশি শিশু তাদের জন্মের দুই বছরের মধ্যে সবগুলো টিকা পেয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশে ২০১৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, শতকরা ৯০ দশমিক ভাগ শিশু প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হয়, যার মধ্যে শতকরা ৫০ দশমিক ভাগই মেয়ে।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা

আমরা জানি, স্বাস্থ্য খাতের যেকোনো ব্যবস্থাপনায় দুটি ধারা বিরাজমান রয়েছে। এর একটি হচ্ছে প্রতিরোধমূলক সেবা এবং আরেকটি প্রতিকারমূলক সেবা। আমাদের দেশে মূল দুটি ধারার ক্ষেত্রে খোলা চোখে প্রতিকারমূলক সেবাগুলোই আমাদের চোখে পড়ে বেশি। আমরা খেয়াল করি, কতগুলো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র হতে সেবা প্রদান করা হচ্ছে বা কী পরিমাণ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রতিরোধমূলক সেবাগুলো অনেক ব্যয়সাশ্রয়ী কার্যকর। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিরোধমূলক সেবা প্রদান পদ্ধতিগুলো অনেকটাই অবহেলিত। আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যেকোনো স্বাস্থ্য সমস্যাকে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিবেচনা করি না। মা শিশু স্বাস্থ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করলে আমাদের সমস্যাকে চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে সামাজিক বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা উচিত। একটি মেয়ে শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। আমাদের পারিবারিক জীবনে তারা একটি ছেলে শিশুর তুলনায় কম খাবার, কম পড়াশোনা বা কম সুযোগ-সুবিধায় বড় হতে থাকে। ফলে অপুষ্টি, অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, অল্প বয়সেই মাতৃত্ব, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগের অপর্যাপ্ততাসহ বিভিন্ন সরকারি বা বেসরকারি সেবা গ্রহণে বঞ্চিত হয়ে থাকে। মায়ের স্বাস্থ্যে উন্নয়ন করতে হলে অনেক লম্বা সময় নিয়ে অধিক হারে বিনিয়োগ করতে হবে। মেয়েদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, আয় হয় এমন কাজে নিয়োজিত হওয়া, নিজের জীবনের ওপর সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, সন্তান গ্রহণে নিজের সিদ্ধান্ত বা মতামত প্রকাশ, পর্যাপ্ত খাবার বিশ্রামের প্রতি নজর দিতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বিনিয়োগ

বাংলাদেশে বিরাজমান স্বাস্থ্য খাতে অর্থায়নের পদ্ধতিটিকে আউট অব পকেট কস্ট মডেল হিসেবে বলা হয়ে থাকে। পদ্ধতিটিতে কাউকে কোনো স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গেলে নিজ পকেট থেকে টাকা বের করে সেবা গ্রহণ করতে হয়। পকেট স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০১৫ হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বেসরকারি সব ব্যয় মিলিয়ে মোট ৪৫২ বিলিয়ন টাকা ব্যয় করা হয়, যা দেশে জনপ্রতি হাজার ৮৮২ টাকা এবং আমাদের জিডিপির মাত্র শতাংশ। ১৯৯৭ সালে হার ছিল মাত্র শতাংশ। আর ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ! বাকি ৭৭ শতাংশের মধ্যে শতাংশ ছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুদান এবং ৭০ শতাংশ টাকাই জনগণ তার নিজ পকেট থেকে প্রদান করে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করছে।

 

আবু তাহের মো. সানাউল্লাহ নূরী: উপপরিচালক (এমআইএস-উন্নয়ন)

এমআইএস ইউনিট, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন