বাংলাদেশি ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারদের গল্প

বণিক বার্তা অনলাইন

উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন- অনেকটা এমন স্বপ্ন নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের পথচলা। আর এই পরিবর্তন ঘটাবে যুবসমাজ, সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের বিস্তার রয়েছে। চেঞ্জ মেকাররা কাজ করে যাচ্ছেন জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে। 

‘বদলে দেবো নিজেকে, বদলে দেবো পৃথিবী’ এ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলছেন ইয়ুথ চেঞ্জ মেকাররা। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য তথা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) হলো জাতিসংঘ ঘোষিত বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্য; যার মাধ্যমে বিশ্বের কোনো অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে ও একমাত্র বাসযোগ্য গ্রহ পৃথিবীকে সুরক্ষা দেয়া হবে।

এ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ১৩টি, যার মধ্যে আছে দারিদ্র বিমোচন, খাদ্যের অভাব দূর করা, সবার জন্য সুস্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিত করা, পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তন রোধ, প্রত্যেক প্রাণীর জীবনকে আশংকামুক্ত রাখার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য।

ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের প্রতিষ্ঠাতা জনাব সজীব খন্দকার জানান, বিশ্বের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তারা দক্ষ ও দায়িত্বশীল যুবসমাজ সৃষ্টিতে এবং একটি যুববান্ধব সংগঠনে রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নিয়ে বরিশাল জেলায় কমিটি গঠনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। তাদের প্রথম প্রজেক্ট পথশিশুদের ঈদের পোষাক বিতরণ যার মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত অবহেলিত শিশু নতুন পোষাকে ঈদ উদযাপন করে। সমাজের প্রতি নিবেদিত প্রাণ এই সেচ্ছাসেবীরা জনসহযোগীতা, আশ্রায়ণ, দূর্যোগে সহযোগীতা, জনসচেতনতার মতো উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নেযন। এর দ্বারা দেশের আনাচে-কানাচে অনেক সেচ্ছাসেবী তৈরি হয় যারা ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকারের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। ২০১৬ সালে গোটা বাংলাদেশে সেচ্ছাসেবী কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির সদস্যরা নিজ জেলার সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

তিনি আরো জানান, আইওয়াইসিএম এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে সব তরুন এবং শিশুরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে। তরুণ এবং শিশুদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। 

বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার বাংলাদেশের ১৩টি জেলায় আলাদা আলাদাভাবে টিম গঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জেলা টিমগুলো তাদের জেলায় দূর্যোগে সাহায্য, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, বৃক্ষায়ণ ,দরিদ্রদের সহায়তা, অসহায়দের ঈদ উপহার বিতরণ ও পথশিশুদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি প্রজেক্টও রয়েছে তাদের। 

২০১৮ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা টিম ৬০ জন শিশুর পড়াশোনাসহ প্রাসঙ্গিক যাবতীয় খরচ বহন করছে এবং তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছে। করোনা মহামারিতেও থেমে নেই সংগঠনটির কাজ। করোনা প্রকোট বাড়ার সাথে সাথে ২০১৯ সাল থেকে করোনা মোকাবিলা তারুণ্যের পদক্ষেপ নামে একটা ইভেন্ট’র মাধ্যম হতদরিদ্রের নিয়মিত খাবার বিতরণ করছে সংগঠনটি। ২০২১ সালে পুরো জুলাই মাস জুড়ে তারা বাংলাদেশে ১৫টি জেলায়  প্রায় বিশ হাজার মাস্ক বিতরণ করছে।

ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার’র কার্যক্রম কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের সত্তরটিরও বেশি দেশে প্রায় পাঁচ শতাধিক সেচ্ছাসেবী তাদের রয়েছে যারা নিজ নিজ স্থান থেকে সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

তারা খুব দ্রুত শিশু সুরক্ষা অলিম্পিয়াড আয়োজন করতে যাচ্ছে এবং এই বিষয়ে ইউনিসেফ বাংলাদেশ’র কাছে প্রস্তাবনা প্রেরণ করেছে। 

ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার’র কো-ফাউন্ডার লাবিবা সুলতানা জানান, বাংলাদেশের নারী সমাজের গুটি কয়েকজন ছাড়া সমাজে কাজ করার সুযোগ পান না। স্বনির্ভর হওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হতে পারেন না। বিভিন্ন কুসংস্কারের কারণে যারা গ্রাম বা মফস্বল এ থাকেন। আমি এমন একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই যেখানে সকলের যোগ্যতা দেখা হবে, সমাজের কাজে সকলেই অংশ নিতে পারবে, লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে না আর নারীরা চিরাচরিত কুসংস্কার থেকে বেডরিয়ে এসে একটি সুস্থ জীবন গ্রহণ করবে।

ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার’র উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত আছেন এডিসি, ডিএমপি জনাব ইফতেখায়রুল ইসলাম, বরিশাল জেলার সাবেক জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকতা জনাব পঙ্কজ রায় চৌধুরী; রোচাস রেস্টুরেন্ট শ্যামলীর ডিরেক্টর তাহমিনা পারভীন; মাছরাঙা টেলিভিশনের বগুড়া প্রতিনিধি খোরশেদ আলম; ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন, উত্তরবঙ্গের  ব্যুরো চীফ হাসিবুর রহমান বিলু , বগুড়ার সদর স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা, ডা. সামির হোসেন মিশু ; বগুড়া-ইউএনএফপিএ’র জেলা অফিসার মাসুদা ইসলাম;আল -কাদেরিয়া লিমিটেড এর চেয়ারম্যান মো:ফিরোজ আলম সুমন, এবং খুলনা জেলার সমাজকর্মী মেরিনা জুথী।

সেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে এমন সম্মাননা অর্জন করছে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ চেঞ্জ মেকার। 

আইওয়াইসিএম বরিশাল জেলা ইউনিট সদস্য রাবেয়া বশরী মিনা মিডিয়া এওয়ার্ড অনুষ্ঠানে সেরা শিশু সাংবাদিক নির্বাচিত হন। সেই বছরই আইওয়াইসিএম ফাউন্ডার সজীব খন্দকার জুনায়েদ প্ল্যানড পার্টনারহুড ফেযারেশন সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অফিস’র (আইপিপিএসএআরও)ARO) আয়োজনে বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির (এফপিএবি) সহযোগিতায় ব্যাংককে পাঁচ দিনের  ইয়ুথ কনসালটেশনে অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া সার্ক তরুণ সম্মেলনে আইওয়াইসিএমকে উপস্থাপন করেন তিনি। ২০১৮ সালে পোলেন্ড এবং ২০১৯ সালে স্পেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে তরুনদের পক্ষ হয়ে আইওয়াইসিএম প্রতিনিধিত্ব করেন। সম্প্রতি সংগঠনটি বাংলাদেশ ডিজিটাল সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন