কর্ণফুলী টানেলের ছোঁয়ায় আনোয়ারায় পরিবর্তনের হাওয়া

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, আনোয়ারা

হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু টানেল। দেশের প্রথম টানেলের ছোঁয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। টানেলের নির্মাণকাজ যতই এগিয়ে যাচ্ছে, আনোয়ারার মানুষের স্বপ্নও যেন ততই বড় হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকে কেন্দ্র করে আনোয়ারায় জমির মূল্য দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠতে শুরু করেছে নতুন নতুন স্থাপনা, দোকানপাট, শপিংমল অসংখ্য অভিজাত রেস্টুরেন্ট। আনোয়ারার অবস্থান ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় কয়েক দশক আগে থেকেই দেশী-বিদেশী অর্থায়নে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে কাফকো (কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড), সিইউএফএল (চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড), কেইপিজেড (কোরিয়ান রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল), সা মূসা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ দেশী-বিদেশী বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। তাই টানেলের কাজ সম্পন্ন হলে নতুন করে আর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি শিল্পায়নের গতি আরো বেগবান হবে বলে আশা সচেতন মহলের।

দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি নগরের পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮-৩১ মিটার গভীর সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়াল সেতু পিএবি সড়কে মিলিত হবে। ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য চট্টগ্রামের শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালা বিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটারের একটি সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। এর মাধ্যমে ঢাকা-কক্সবাজারের দূরত্ব কমে আসবে ৫০ কিলোমিটার। এছাড়া টানেল হয়ে আনোয়ারা-বাঁশখালী-পেকুয়া হয়ে কক্সবাজার সদর পর্যন্ত কক্সবাজার বিকল্প সড়ক নামে আরো একটি সড়ক প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে।

আনোয়ারায় সরকারের নেয়া কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান। যার মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে জিটুজি পদ্ধতিতে গহিরায় ৭৭৪ একর জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চায়না ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন প্রকল্পের কাজ চলছে। এতে ৩৭১টি শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। প্রায় এক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

চলছে পারকি সমুদ্র সৈকতের পাশে বিশ্বমানের পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণকাজও। পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৩ দশমিক ৩৬ একর জমিতে ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে পর্যটন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। এটির নির্মাণকাজ শেষ হলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে পারকি সমুদ্র সৈকত। এছাড়া গত বছরের ১৩ নভেম্বর আনোয়ারায় ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

টানেলের কাজের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রথম সুড়ঙ্গ খনন করতে লেগেছিল ১৭ মাস এবং দ্বিতীয় সুড়ঙ্গ খননে লেগেছে ১০ মাস। খননকাজ শেষ হওয়ার পর প্রথম সুড়ঙ্গে এখন সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। এরই মধ্যে হাজার ৬২৩ মিটার স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে উড়াল সেতুর কাজও শেষ পর্যায়ে। এছাড়া পতেঙ্গা আনোয়ারা প্রান্তে দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজও চলছে।

আনোয়ারায় টানেল সংলগ্ন বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, উপজেলার শিল্প জোনের প্রাণকেন্দ্র বৈরাগ ইউনিয়ন। এখানে রয়েছে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কেইপিজেডসহ নানা শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এখন আবার চলমান রয়েছে চায়না ইকোনমিক জোনের কাজ। টানেলের সংযোগ সড়ক ইউনিয়নের ওপর হওয়ায় এখানকার মানুষের জীবনমান অনেক বছর এগিয়ে গেছে।

আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই উন্নয়নবান্ধব। আনোয়ারার অভিভাবক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সুদক্ষ নেতৃত্ব আনোয়ারাকে বদলে দিয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর আনোয়ারাকে বিশ্ববাজারের স্পট বানানোর জন্য যে কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যান তিনি, টানেল নির্মাণ প্রকল্প তারই একটি অংশ। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আনোয়ারা একটি আন্তর্জাতিক বাজারে পরিণত হবে।

উল্লেখ্য, চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেলের কাজ করছে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এখন পর্যন্ত টানেলের প্রায় ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন