লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে আবাদ

নওগাঁয় বিনাধান-১৭ চাষে স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা

আরমান হোসেন রুমন, নওগাঁ

নওগাঁর নিয়ামতপুরের শালাবাড়ি মাঠে বিনাধান-১৭ কাটাতে শুরু করেছেন চাষীরা ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

উচ্চফলনশীল, স্বল্পমেয়াদি জীবনকাল, সার-পানি সাশ্রয়ী, আলোক সংবেদনশীল, উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন খরাসহিষ্ণু হওয়ায় বিনাধান-১৭ চাষে স্বপ্ন দেখছেন নওগাঁর চাষীরা। বিনা উদ্ভাবিত আগাম আমন ধানে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধির অপার সম্ভাবনা থাকায় ধান চাষে আগ্রহ বাড়াতে জেলার কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ বীজ সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বছর জেলায় লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বিনাধান-১৭ জাতের আগাম আমন ধান হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়।

বিনাধান-১৭ উচ্চফলনশীল এবং ধানের জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। বিনাধান-১৭ জাতের ধান চাষে ইউরিয়া সার এক-তৃতীয়াংশ সেচ ৫০ শতাংশ কম লাগে। স্বল্প সেচসম্পন্ন হওয়ায় পানি কম লাগার কারণে একে গ্রিন সুপার রাইস নামেও অভিহিত করেছেন অনেকে। এর প্রতিটি শীষে ২০০-২৫০টি দানা থাকে এবং ফলন আশাব্যঞ্জক হওয়ায় কৃষকের জন্য জাতের ধান চাষ খুবই লাভজনক। প্রতি বিঘায় প্রায় ২২-২৭ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। অন্যান্য ধানের তুলনায় বিনাধান-১৭ চাষে প্রতি বিঘায় - হাজার টাকা খরচ কম হয়। আগের আমন ধানের তুলনায় জাতের ধানের জীবনকাল প্রায় ৩০-৪০ দিন কম হওয়ায় দ্রুত ধান ঘরে তুলতে পারেন কৃষকরা।

সরেজমিন জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার মাঠ দিবসে গিয়ে দেখা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় পানিস্বল্পতার কারণে ধান চাষ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো উপজেলার কৃষকদের। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উপকেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহযোগিতায় উপজেলার কৃষকরা বিনাধান-১৭ চাষ শুরু করেছেন। আগাম জাতের ধান ১১০-১১৫ দিনের ব্যবধানে ঘরে তুলতে পারছেন কৃষকরা। নতুন জাতের ধান কাটার পর বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ২৭ মণ পর্যন্ত ফলন পেয়েছেন উপজেলার কৃষকরা। নতুন জাতের ধানের ফলন বেশি এবং স্বল্প সেচসম্পন্ন হওয়ায় তাদের দেখে অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

নিয়ামতপুর উপজেলার শালবাড়ি গ্রামের কৃষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, ইউটিউবে বিনাধান-১৭ বিষয়ে একটি ভিডিও দেখে ধান চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলাম। পরে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উপকেন্দ্র চাঁপাইনবাবগঞ্জে যোগাযোগ করে সেখান থেকে সার বীজ সহায়তা নিয়ে চার বিঘা জমিতে বিনাধান-১৭ চাষ করেছি। যেখানে প্রতি বিঘায় খরচ খুবই কম হয়েছে। আমি যেদিন বিনাধান-১৭ রোপণ করি একই দিনে আমার পাশের জমির কৃষকরা অন্য জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যেই আমার জমির ধান পরিপক্ব হয়েছে এবং এখন তা কাটতে শুরু করেছি। বিঘাপ্রতি প্রায় ২৬ মণ পর্যন্ত ফলন পাচ্ছি। আর পাশের জমিগুলোর ধান পরিপক্ব হতে এখনো প্রায় ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। আগে স্বর্ণা- জাতের ধানের আবাদ করতাম। বছর বিনাধান চাষে বিঘাপ্রতি আমার - হাজার টাকা খরচ কম পড়েছে। উচ্চফলনশীল স্বল্পমেয়াদি বিনাধান-১৭ চাষ করা লাভজনক হওয়ায় এখন ধান চাষে আমি স্বপ্ন দেখছি। আমার দেখাদেখি অনেকেই এখন ধান চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

বদলগাছী উপজেলার ইসমাইলপুর গ্রামের কৃষক আবদুল হামিদ বলেন, উচ্চফলনশীল স্বল্পমেয়াদি আমন জাত বিনাধান-১৭ চাষের সুফল সম্পর্কে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ পেয়েছিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কৃষি অফিসের বীজ সহায়তা নিয়ে চার বিঘা জমিতে বিনাধান-১৭ চাষ করেছি। আমার দেখাদেখি আমার আশপাশের জমির কৃষকরাও তাদের ১০ বিঘা জমিতে বিনাধান-১৭ চাষ করেছেন।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক শামশুল ওয়াদুদ বণিক বার্তাকে বলেন, বিনাধান-১৭ চাষ অত্যন্ত লাভজনক এবং উচ্চফলনশীল হওয়ায় এটি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। স্বল্পমেয়াদি জীবনকাল, সার-পানি সাশ্রয়ী, আলোক সংবেদনশীল, উন্নত গুণাগুণ সম্পন্ন খরাসহিষ্ণু হওয়ায় কৃষকরা ধান চাষ করে রবিশস্য আবাদ করতে পারছেন। যেখানে দুই ফসল উৎপাদন হতো, সেখানে এখন তিন ফসল আবাদ করছেন কৃষকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন