যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল

শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার পাঁচগুণ বেশি রোগী

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, যশোর

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে হঠাৎ শিশু রোগী বেড়েছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ২৪টি শয্যার বিপরীতে এখন রোগী রয়েছে ১২০ জন। জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। শুধু যশোর নয়, নড়াইল, মাগুরা ঝিনাইদহ জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিয়ে থাকে।

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে বহির্বিভাগে একদিকে যেমন শিশু রোগীর ভিড় বাড়ছে, তেমনি ওয়ার্ডে ঠাঁই হচ্ছে না শিশুদের। পাঁচ গুণ বেশি রোগী হওয়ায় শিশুরা শয্যা না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন তার ১০ মাস বয়সী কন্যা তাবাসসুমকে চিকিৎসা করাতে আসেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত তার সন্তান। একই উপজেলার হামিদপুর গ্রামের স্বপন হোসেনের পাঁচদিন বয়সী নবজাতক ইয়াসমিনকে আনা হয় বহির্বিভাগে। তিনি জানান, তার কন্যার ঠাণ্ডা লেগেছে। তাই চিকিৎসকের কাছে এনেছি। শুধু ওই দুই শিশু নয়, ১৫০ জন শিশুকে হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। কোনো কোনো দিন বহির্বিভাগ থেকে আরো বেশি শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে।

গত সেপ্টেম্বরে বহির্বিভাগ থেকে হাজার ৭৩৭ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। জুনে চিকিৎসা নিয়েছে হাজার ৪৭৮ জন। তিন মাসের ব্যবধানে হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগে রোগী বেড়েছে হাজার ২৫৯ জন। তাদের ভেতর অনেকেই জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। যাকে বলা হচ্ছে ভাইরাস ফ্লু অনুরূপভাবে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ শিশু ওয়ার্ডে রোগী কানায় কানায় ভর্তি। ২৪টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১২০ শিশু। অর্থাৎ পাঁচ গুণ বেশি। তারা সবাই ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত। বেডে জায়গা না হওয়ায় অতিরিক্ত শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীর ভিড়ে শিশু ওয়ার্ডে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়েছে। সারাক্ষণ শিশুদের কান্না আর চিত্কারে পরিবেশ ভারী হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, মাত্র একটি নেবুলাইজার মেশিনে সব শিশুর চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। নেবুলাইজারের সুবিধা দেয়ার জন্য শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করছেন। ঠাণ্ডা শ্বাসকষ্ট হলেই শিশুদের নেবুলাইজার দেয়া হয়।

সূত্র জানিয়েছে, শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিষয়টি নিয়ে খোদ চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পরিস্থিতি ভাইরাল ফ্লুতে রূপ নিয়েছে।

হাসপাতালের বহির্বিভাগের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া বলেন, শিশু বহির্বিভাগে এত বেশি রোগী আসছে যে তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিশু তাদের অভিভাবকদের ভিড়ে অনেক সময় হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। শিশুরা জ্বর-শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানান, এখন শিশুরা ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হচ্ছে। অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। এখন যে আবহাওয়া তা শিশুদের জন্য প্রতিকূল। পরিস্থিতিতে শিশুদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছেন, ঠাণ্ডা কিংবা গরম পরিবেশে শিশুদের রাখা যাবে না। সময়োপযোগী জামাকাপড় ব্যবহার করতে হবে।

ব্যাপারে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকতারুজ্জামান জানান, আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে শিশু রোগীর হার বেড়েছে। আমরা নিবিড়ভাবে শিশুদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে গড়ে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন