বাড়ছে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ভ্রমণ চাহিদা

এবার যন্ত্রাংশ ঘাটতিতে পড়েছে বৈশ্বিক এভিয়েশন খাত

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিলের পর ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের চাহিদা বেড়েছে। টেক্সটনের নতুন সেসনা এম২ ও এক্সএলএস+জেন২ জেট ছবি: রয়টার্স

কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকেই বৈশ্বিক সরবরাহ চেইনে দেখা দেয় জটিলতা। ঘাটতি তৈরি হয় বিভিন্ন পণ্যের। আর বিধিনিষেধ শিথিলের পর তুমুল চাহিদা সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কম্পিউটার থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাতা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যন্ত্রাংশ ঘাটতিতে বিপর্যস্ত অবস্থা পার করছে। এবার এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে বৈশ্বিক এভিয়েশন খাতও। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে যন্ত্রাংশ পাচ্ছে না করপোরেট উড়োজাহাজ নির্মাতা সরবরাহকারীরা।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিডের সংক্রমণ কমায় সীমান্ত খুলে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ। দীর্ঘদিন পর ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল চাহিদা। এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত এভিয়েশন খাতে পর্বতসম চাপ তৈরি করেছে। ব্যাঘাতগুলো বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচলকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থাগুলোর পুনরুদ্ধারে ঝুঁকি তৈরি করেছে।

চলতি বছর ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ভ্রমণ ২০১৯ সালের স্তরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত বিজনেস জো শোতে সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাত নিয়ে সতর্ক করেছে করপোরেট উড়োজাহাজ নির্মাতা যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীরা।

সম্প্রতি এয়ারবাসের প্রধান নির্বাহী গিয়ুম ফৌরিও বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের সরবরাহ চেইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে বোয়িং এয়ারবাস মহামারীর আগের তুলনায় কম জেট উৎপাদন করায় সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাত প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুব বেশি স্পর্শ করতে পারেনি। যদিও চিপ ঘাটতির কারণে বছরজুড়ে গাড়ি উৎপাদন কমাচ্ছে অটোমোবাইল শিল্প। তবে ছোট উড়োজাহাজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরবরাহ চেইনের ব্যাঘাত ক্রমবর্ধমানভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায় ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ ভ্রমণের চাহিদা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। এমন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ছোট জেট নির্মাতারা উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে যন্ত্রাংশ পাইলট ঘাটতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সে প্রচেষ্টা ব্যাহত হচ্ছে।

সেসনা বিজনেস জেট নির্মাতা টেক্সট্রন ইনকরপোরেটেডের উড়োজাহাজগুলো ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি পরিষেবা দিচ্ছে। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন করতে পারছে না মার্কিন সংস্থাটি। এজন্য টেক্সট্রন যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের ওপর অনবরত চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

এভিয়েশন খাতের পরামর্শক সংস্থা অ্যালিক্সপার্টনারস এলএলপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক বার্নাডিনি বলেন, মহাকাশ সংস্থাগুলো সেমিকন্ডাক্টর চিপ প্লাস্টিকের ঘাটতি অনুভব করছে এবং ইস্পাত অ্যালুমিনিয়ামের মতো কাঁচামালের জন্য অনেক বেশি ব্যয় করছে।

ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি এমন সময়ে ঘটছে যখন এভিয়েশন খাত মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। যন্ত্রাংশ নির্মাতা তাদের সরবরাহকারীদের ওপর বাড়তি ব্যয়ের চাপ সময়মতো সরবরাহ পাওয়া কঠিন করে তুলছে।

অ্যালিক্সপার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, কাঁচামালের জন্য এভিয়েশন শিল্প চলতি বছরের প্রথমার্ধে গত বছরের তুলনায় গড়ে ২৭ থেকে ৪৪ শতাংশ বেশি ব্যয় করছে। ফলে শিল্পের জন্য মুনাফা করা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। একদিকে কোম্পানিগুলো দক্ষ কর্মী পেতে হিমশিম খাচ্ছে এবং অন্যদিকে সংস্থাগুলোকে শিপিং বিলম্বের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।

বিওসি এভিয়েশনের প্রধান নির্বাহী রবার্ট মার্টিন বলেন, ২০২২ ২০২৩ সালের প্রত্যাশিত উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি জেট সরবরাহে বিলম্বের সৃষ্টি করতে পারে।

সরবরাহ চেইনের চাপ মোকাবেলায় এরই মধ্যে ব্রাজিলিয়ান উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমব্রেয়ার এসএ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ মজুদ করতে শুরু করেছে। উচ্চমূল্য বাড়তি পরিবহন ব্যয় সত্ত্বেও পদক্ষেপ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

টেক্সট্রনের প্রধান নির্বাহী রন ড্রপার বলেন, বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ উৎপাদন ২০১৯ সালের স্তরে উন্নীত হলে যন্ত্রাংশ ঘাটতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। বোয়িং এয়ারবাস যদি জেট উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে, তাহলে বৃহত্তম উড়োজাহাজ নির্মাতারা অনেক বেশি সরবরাহের দখল নেবে। সেই সময় আমরা বড় ধরনের সরবরাহ সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ব।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন