সাড়ে ৩ হাজার কোটি ডলারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ফ্রান্সের

বণিক বার্তা ডেস্ক

পাঁচ বছর মেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করা হবে সাড়ে হাজার কোটি ডলার। মূলত উদ্ভাবনী প্রযুক্তি শিল্প খাতের কর্মকাণ্ড বিকাশে অর্থ ব্যয় করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট পারমাণবিক চুল্লি, বৈদ্যুতিক গাড়ি পরিবেশবান্ধব উড়োজাহাজ। এপির খবরে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। মূলত চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে আগামী দশকে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতেই সরকারের উদ্যোগ। আগামী বছর থেকেই উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মাখোঁ।

তিনি বলেন, যদি ইউরোপীয়রা, বিশেষ করে ফ্রান্সের মানুষ যদি নিজেদের ভবিষ্যৎ বেছে নিতে চায় তাহলে উন্নত জীবনযাত্রার জন্য যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।

প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় ৯২০ কোটি ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে এমন জ্বালানি প্রযুক্তির জন্য, যা গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করবে। মাখোঁ বলেন, অর্থায়নের মাধ্যমে ছোট মডুলার পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ করা হবে। ফ্রান্সের ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ পারমাণবিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল।

২০৫০ সাল নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কার্বন নিরপেক্ষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জোটের নেতারা। দেশগুলো তাদের বিদ্যুত্শক্তি উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবে বলেও সম্মত হয়েছেন নেতারা। ফলে ইইউভুক্ত ২৭টি দেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে মিশ্র পদ্ধতি অবলম্বন শুরু করেছে। তবে শুরুতে বিষয়টি নিয়ে জোটের ভেতরেই বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়। জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ যুক্তি দেখায় যে, পারমাণবিক শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হচ্ছে না। কারণ তারা পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাতে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে পারমাণবিক শক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এর থেকে পাওয়া দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয় বর্জ্য পরিবেশের ক্ষতি করবে।

চলতি সপ্তাহে ঘোষিত পরিকল্পনায় ইমানুয়েল মাখোঁ জানিয়েছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ ফ্রান্সকে পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন শক্তির প্রধান দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। গ্রিন হাইড্রোজেন শক্তির এমন একটি রূপ, যেটি ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গত করে না এবং ইস্পাত রাসায়নিক উৎপাদন শিল্পে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব শিল্পে এখন মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়।

পরিকল্পনায় ৪৬০ কোটি ডলার খরচ করা হবে ২০ লাখ বৈদ্যুতিক হাইব্রিড গাড়ি উৎপাদনে। দশকের শেষ নাগাদ এসব গাড়ি উৎপাদন করা হবে। এছাড়া বিশ্বের প্রথম স্বল্প কার্বন নিঃসরণকারী উড়োজাহাজ তৈরিতে আগ্রহী ফ্রান্স। খাতে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। ২০৩০ সালের মধ্যে এর বাস্তবায়ন ঘটাতে চায় তারা। তবে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব উড়োজাহাজ তৈরি করা হবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

পরিবেশবান্ধব এসব প্রকল্প ছাড়াও ফ্রান্সের কৌশলের মধ্যে রয়েছে খাদ্য প্রস্তুত শিল্প, চলচ্চিত্র ওষুধ শিল্প খাতের বিভিন্ন উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করা। মোট কথা, মাখোঁ সরকার দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন দিকে বিনিয়োগ করতে চায়। সেজন্যই নতুন পরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছেন মাখোঁ। তবে আগামী বছরের পুনর্নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা সে ঘোষণা এখনো দেননি তিনি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিনি হয়তো অংশ নেবেন। আর সেজন্যই এত বিস্তর পরিকল্পনার ঘোষণা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন