বাংলাদেশের ফিল্ম আর্কাইভের জন্য ‘চন্দ্রাবতী কথা’ সম্পদ হয়ে থাকবে

ইমতিয়াজ বর্ষণ ২০১১ সালে টিভি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় প্রবেশ করেন।   চন্দ্রাবতী কথার আগে গত বছর মুক্তি পায় ঊনপঞ্চাশ বাতাস। অভিনয় দিয়ে নজর কেড়েছেন

দর্শক-সমালোচকদের। আজ মুক্তি পাচ্ছে চন্দ্রাবতী কথা। পিরিয়ডিক্যাল ফিল্মটি নির্মিত হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতীর গল্পের ওপর ভিত্তি করে। সিনেমা আমাদের নিয়ে যাবে ৪০০ বছর আগের বাংলায়। এসব নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

আজ আপনার চন্দ্রাবতী কথা মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হয়েছিলেন?

চন্দ্রাবতী কথা একটা অনুদানের ছবি। সিনেমার শুটিং হয়েছিল ২০১৫-১৬ সালে। আমি অডিশনের মাধ্যমে সিনেমায় যুক্ত হয়েছিলাম।

চন্দ্রাবতী কথা মুক্তির আগেই ঊনপঞ্চাশ বাতাস মুক্তি পেয়েছিল। সবাই আপনার অভিনয়ের প্রশংসা করেছে। সেই জায়গা থেকে চন্দ্রাবতী কথা নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?

চন্দ্রাবতী কথা নিয়ে আমার একটা অন্য রকম প্রত্যাশা আছে। কারণ বাংলাদেশে এর আগে তেমন পিরিয়ডিক্যাল সিনেমা হয়নি। পরিপূর্ণ পিরিয়ডিক্যাল সিনেমার রেফারেন্স আমাদের নেই। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশের ফিল্ম আর্কাইভের জন্য একটা সম্পদ হয়ে থাকবে। ৪০০ বছর আগের গল্প বাস্তবসম্মত করে তুলতে যা যা দরকার তা চন্দ্রাবতীর কথা সিনেমায় আছে। প্রজেক্টে কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। ভবিষ্যতে পিরিয়ড ফিল্ম-এর রেফারেন্স হিসেবে সিনেমার ছাত্রদের কাজে লাগবে। ধরনের একটা প্রজেক্টে কাজ করতে পারার অনুভূতিটা অসাধারণ। সেদিক থেকে আমি খুবই ভাগ্যবান।

চন্দ্রাবতী কথায় আপনার চরিত্র নিয়ে বলেন।

আমার চরিত্রের নাম জয় আনন্দ। জয় আনন্দ একজন কবি ছিলেন। তিনি দ্বীজ বংশীর শিষ্য। দ্বীজ বংশী চন্দ্রাবতীর বাবা। চন্দ্রাবতীও কবি। ছোটবেলা থেকেই তারা একসঙ্গে থাকতে থাকতে প্রেমের একটা সম্পর্ক হয়ে যায়। তাদের বিয়েও ঠিক হয়। ওই সময় জয় আনন্দ একটা মুসলমান মেয়ের প্রেমে পড়ে। চন্দ্রাবতীকে রেখে ওই মেয়েটাকেই বিয়ে করে। সেই শোকে চন্দ্রাবতী সারা জীবন বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। লেখালেখি এবং শিব পূজায় নিজেকে সমর্পণ করে দেয়। পরে জয়ানন্দ ফিরে আসে। কিন্তু প্রতিজ্ঞার কারণে জয়ানন্দকে গ্রহণ করে না চন্দ্রাবতী। এরপর জয়ানন্দের জীবনে একটা ট্র্যাজেডি নেমে আসে।

এখানেও ট্র্যাজেডি? ঊনপঞ্চাশ বাতাসেও দেখেছি আপনাকে ট্র্যাজেডির শিকার হতে।


হ্যাঁ, আমার দুটো সিনেমার সমাপ্তিতে কিছুটা মিল আছে।

আপনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, কিন্তু আপনার কাজের সংখ্যা কম, কারণ কী?

এর কারণ হলো আমি একটু রয়েসয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। প্রতিদিন শুটিংয়ের মধ্যে থাকার অভ্যস্ততা আমার মধ্যে নেই।

কাজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্ক্রিপ্টকে কত গুরুত্ব দেন?

স্ক্রিপ্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। কম কাজ করার পেছনে এটাও একটা কারণ বলতে পারেন।

ঊনপঞ্চাশ বাতাসে আপনি যখন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চরিত্রে অভিনয় করলেন, তখন আপনাকে দেখে মনে হলো সত্যিই আপনি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। চরিত্রের সঙ্গে আপনি দারুণভাবে মিশে যান। পরিপূর্ণ জয় আনন্দ হতে আপনাকে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে?

জয় আনন্দ সাজতে আমার বড় চ্যালেঞ্জটা হলো, আমাদের হাতে কোনো রেফারেন্স ছিল না। ৪০০ বছর আগে কোনো সংবাদপত্র ছিল না। ছবি ভিডিওর তো প্রশ্নই আসে না। কিছু বই আছে, ওগুলো থেকে অল্প রেফারেন্স পাওয়া যায়। পুরনো কিছু উপন্যাস থেকে অল্পস্বল্প পাওয়া যায়। মৈমনসিং গীতিকার আলাদা একটা টোন আছে। ডিরেক্টরের সঙ্গে আলোচনা করে যতটুকু বুঝেছি সেভাবে আমরা নতুন কিছু একটা তৈরির চেষ্টা করেছি। মানুষ সাদরে গ্রহণ করলেই বুঝব আমি সার্থক।

৪০০ বছর আগের বাংলা ভাষা আর এখনকার ভাষা নিশ্চয় এক নেই? ভাষাগত পরিবর্তন কতটা পার্থক্য ছিল আর এটা কীভাবে সমন্বয় করলেন?

মৈমনসিং গীতিকা যেভাবে লেখা হয়েছে, আমাদের স্ক্রিপ্টের ভাষা পুরোপুরি সেটাও না আবার বর্তমান সময়ের ভাষাও না। মাঝামাঝি একটা সময়ের ভাষা রাখা হয়েছে, যাতে মানুষ সহজে কানেক্ট করতে পারে।

চন্দ্রাবতী কথা থেকে দর্শক কী পাবে?

দর্শক ৪০০ বছর আগের মানুষের জীবনধারা কেমন ছিল সেটা দেখতে পাবে। বঙ্গের মানুষের আচার-আচরণের একটা ধারণা পাবে। সিনেমাটা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরো বাড়িয়ে দেবে। আমাদের পুরনো সাহিত্যের যে গুপ্তধন আছে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এটার দেখাদেখি অন্য নির্মাতারাও সাহস পাবেন। ভবিষ্যতে যারা ধরনের কাজ করবেন তাদের জন্য চন্দ্রাবতী অনেক বড় একটা রেফারেন্স হবে।

চন্দ্রাবতী কথার পর কী পাচ্ছি আপনার থেকে?

আমি এখন সিলেটে। ওরা সাতজন সিনেমার শুটিংয়ে আছি। এটা মুক্তিযুদ্ধের গল্প। আগামী বছর মুক্তি পাবে।

তার মানে সিনেমা মুক্তির দিন আপনি সিলেটে?

হ্যাঁ, এর শিডিউল অনেক আগেই ঠিক করা ছিল। এজন্য চন্দ্রাবতীর কথার প্রচারেও অংশ নিতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে।

ঊনপঞ্চাশ বাতাসে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ, চন্দ্রাবতীর কথায় কবি এবং ওরা সাতজনে মুক্তিযোদ্ধাআপনার প্রতিটি চরিত্রে আলাদা লেয়ার থাকে। তাহলে কি এমন ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রেই কাজ করতে চান?

ধরনের ব্যতিক্রমী চরিত্র যে সবসময় পাব তাও না। আমি সব ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।

২০১১ সালে প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। ২০২১ চলে। ১০ বছরে কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে?

কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে বলতে পারব না। তবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে গেলে প্রথম দিন যে উত্তেজনা কাজ করত এখনো তা- করে।

দর্শকদের উদ্দেশে যদি কিছু বলতে চান...

আমরা এত পরিশ্রম করে কাজগুলো করি, শুধু আপনাদের জন্য। আপনারা হলে যাবেন। যেভাবে পারেন আমাদের কাজগুলো দেখেন এবং এগুলো নিয়ে আওয়াজ তোলেন। নিজে দেখেন অন্যকে দেখতে উৎসাহিত করেন। কারণ আমাদের দর্শকরা সারা বিশ্বের ভালো ভালো সিনেমা কনটেন্ট দেখেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কনটেন্টগুলো না দেখলে পরিচালকদের সিনেমা বানানোর উৎসাহ কমে যায়। আপনারা হলে গিয়ে সিনেমা দেখলে ভালো সিনেমা নির্মাণের উৎসাহ বাড়বে।

 

শ্রুতলিখন: সায়মা শারমিন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন