ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশ্বে আদর্শ বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি আদর্শ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সম্মানটা ভবিষ্যতেও যেন বজায় থাকে সে ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা চাই দেশটা এগিয়ে যাক। এটা মাথায় রেখেই সবাইকে কাজ করতে হবে।

গতকাল ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫০ বছরে পদার্পণ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস ২০২১ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা মাঠ কক্সবাজার প্রান্তও সংযুক্ত ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটা আমাদের। কাজেই যত ঝুঁকি আসুক দেশের উন্নয়ন আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে। দারিদ্র্যের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষকে দুর্যোগ নিরাপত্তা দেয়াসহ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। আগামীতে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে, সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি।

সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের আওতায় একটি অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে, যা দুর্যোগ মোকাবেলা, ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পাশাপাশি ২০২১-২৫ সাল মেয়াদের জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

ডেল্টা প্ল্যানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে বদ্বীপ, আমরা ২১০০ সালের জন্য একটি ডেল্টা প্ল্যান করেছি। ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ আমরা শুরু করেছি। এক্ষেত্রে নদীভাঙন রোধ পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। কারণ প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বন্যা হবে। বন্যা আমাদের পলি দেবে, জমি উর্বর করবে। কাজেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা বন্যার সঙ্গে বসবাস করার অভ্যাস আমাদের তৈরি করতে হবে। তবে বন্যায় মানুষের বা সম্পদের যেন ক্ষতি না হয়, সেভাবেই আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে।

দুর্যোগ ঝুঁঁকি কমাতে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, সরকার সারা দেশে ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ৩২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। আরো ২২০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ৪২৩টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৬৪ জেলায় ৬৬টি জেলা ত্রাণ গুদাম কাম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম চলমান।

এছাড়া ভূমিকম্প নগর এলাকায় রাসায়নিক দুর্যোগসহ অগ্নিকাণ্ড ঝুঁকিহ্রাস সাড়াদান কার্যক্রমে নতুন করে আরো হাজার ২৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ সহযোগী সংস্থার সক্ষমতা বাড়াতে যথাক্রমে ৬৯ কোটি ২৩৪ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়। এখন যেসব বহুতল ভবন হচ্ছে, সেগুলোতে যেন পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকে, সেদিকে নজর রাখতে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি জানান, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে সরকার।

দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনে ব্যক্তিগত স্থাপনা তৈরির সময় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঘর-বাড়ি, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যা- করা হোক না কেন সেটা করার সময় অগ্নিকাণ্ড, ঝড়, বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হবে। বিল্ডিং কোড মেনেই ভবন তৈরি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চারটি ইউনিটের উদ্বোধন করেন। এগুলো হচ্ছে দ্রুত সাড়াদান ইউনিট, পানি থেকে উদ্ধার ইউনিট, অতি জোয়ার মনিটরিং সাড়াদান ইউনিট এবং খেলায় খেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি ইউনিট। এছাড়া দুর্যোগ সহনশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনা শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

পাট খাতে রাশিয়ার বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশ রাশিয়ার মধ্যকার সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশের পাট খাতে রাশিয়াকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবনে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেন্তিয়েভিচ ম্যান্টিটস্কির সঙ্গে আলোচনায় আহ্বান জানান তিনি। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের সম্পর্কে ব্রিফিং করেন।

ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, বাংলাদেশ পাট শিল্পে রুশ বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে। সময় উভয়ে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তৃত করার ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি কৃষি খাতের সুযোগ অন্বেষণে সম্মত হন।

প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সহযোগিতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধকালে যে দেশ আমাদের দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছে তারা আমাদের হূদয়ের বিশেষ জায়গায় রয়েছে। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বাংলাদেশ সফরে এলে আমরা খুশি হব।

সময় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ভিকেন্তিয়েভিচ ম্যান্টিটস্কি জানান, তিনি ২০ বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন। বর্তমানে বাংলাদেশের অগ্রগতি উন্নয়ন দেখে তিনি মুগ্ধ। বাংলাদেশে দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তার দেশের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেন তিনি। দুই দেশের মধ্যকার বিভিন্ন চুক্তির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত এগুলো হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এছাড়া তিনি প্রতিরক্ষা খাতে দুই দেশের সহযোগিতা জোরদারের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

সময় অ্যাম্বাসেডর অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব . আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন