আয় বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি বিআইডব্লিউটিসির

আল ফাতাহ মামুন

প্রতি বছরই আয় বাড়ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সে তুলনায় সেবার মান বাড়াতে পারছে না সংস্থাটি। একটা সময় উৎসব-পার্বণে ফেরি পারাপারের জন্য দীর্ঘ লাইন থাকত। কখনো কখনো সে লাইন এক থেকে দুইদিনও গড়াত। সাম্প্রতিক সময়েও যানবাহন পারাপারে ১৮-২০ ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে ফেরির অপেক্ষায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে গাড়ির পরিমাণ বৃদ্ধির অনুপাতে নৌযান না বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থাটি। এদিকে সেবার মান বাড়াতে নতুন করে আরো ৩৫টি জলযান নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে বলে জানা গেছে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে সংস্থাটির রাজস্ব বেড়েছে ২৬ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মহামারীতেও সংস্থাটির আয় কমেনি বরং বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটি আয় করেছে মোট ৪০২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৩৬১ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সংস্থাটির আয় ছিল ৩৬৭ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৫২৭ টাকা। এর আগের তিন বছরে সংস্থাটির আয় ছিল যথাক্রমে ৩৭৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬০, ৩৬১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪৪ ৩৪৭ কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৮৭ টাকা।

বছর বছর আয় বাড়লেও সেবার মান বাড়েনি বিআইডব্লিউটিসির। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন ফেরিঘাটে যানবাহন পারাপারের জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিটি উৎসব-পার্বণেই চরম ভোগান্তির শিকার হন পথের যাত্রীরা।

শরীয়তপুরের বাসিন্দা লিমা আক্তার কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন। তিনি বণিক বার্তাকে জানান, ঈদের সময় বাড়ি যেতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ি। ভেদরগঞ্জের বাসিন্দা রাসেল শিকদার বলেন, ঈদ ছাড়াও ফেরি পারাপারে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বিশেষ করে যখন কাছাকাছি কোনো রুটে ফেরি কম থাকে বা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে, তখন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় ফেরির জন্য। এছাড়া কখনো কখনো পানি বাড়লে ফেরির জেটি ডুবে যাওয়ার বিষয়েও অভিযোগ করেছেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিসির কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ছয়টি রুটে মোট ৫৩টি ফেরি চলাচল করে। এর মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ১৮টি, আরিচা-কাজিরহাট রুটে তিনটি, শিমুলিয়া-বাংলা বাজার রুটে ১৩টি, চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে সাতটি, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে তিনটি এবং লাহারহাট-ভেদুরিয়া নৌরুটে পাঁচটিসহ মোট ৪৮ ফেরি নিয়মিত চলাচল করে থাকে। বাকি পাঁচটি ফেরি মেরামতের জন্য ডকইয়র্ডে রয়েছে।

জানা গেছে, যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে বিআইডব্লিউটিসি নামাচ্ছে ৩৫টি জলযান আটটি সহায়ক জলযান। কভিডে বিপর্যস্ত পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের বিলাসবহুল প্রমোদতরীও থাকছে প্রকল্পে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, হাজার ৩১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৫টি জলযান আটটি সহায়ক জলযান নির্মাণ প্রকল্প অধীনে ছয়টি ইম্প্রুভড ইউটিলিটি টাইপ ফেরি, ছয়টি ইম্প্রুভড কে টাইপ ফেরি, দুটি ২০০ ডিডব্লিউটি কোস্টাল অয়েল ট্যাংকার, দুটি স্লেভেগ কাম ফেরি ফাইটিং টাগ, চারটি মিডিয়াম অ্যান্ড ইউটিলিটি টাইপ পন্টুন, দুটি রকেট ঘাট পন্টুন, তিনটি মডার্নল্যান্ড প্যাসেঞ্জার ভেসেল, আটটি কোস্টাল সি-ট্রাক, একটি কেবিন ক্রুজার কাম ইনসপেকশন বোট, চারটি কোস্টাল প্যাসেঞ্জার ভেসেল তিনটি প্যাসেঞ্জার ক্রুজ ভেসেল নির্মাণ করবে সংস্থাটি।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সড়কে গাড়ি বাড়লেও নৌযানের সংখ্যা সে হারে বাড়েনি। তাই সেবার মান বাড়াতে প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কভিডের আঘাতে বিপর্যস্ত পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক মানের প্রমোদতরী বানানোর কাজও চলমান রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে প্রথম প্রমোদতরী এগুলো। গত বছরের জুলাই চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড প্রমোদতরী নির্মাণের টেন্ডার পায়। এর এক মাস পর ওয়ার্ক অর্ডারও হয়ে যায়। চুক্তি অনুযায়ী দুই বছরের মধ্যে প্রমোদতরীগুলো হস্তান্তর করবে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড।

প্রজেক্ট পরিচালক বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রমোদতরী নির্মাণকাজের অগ্রগতি এখনো শূন্য শতাংশ। তবে পুরো প্রজেক্টের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ২২ শতাংশ। এছাড়া সেবার মান ধরে রাখতে আমরা নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটি বাস্তবায়ন হলে সেবায় গতি আসবে। পাশাপাশি পর্যটন খাতেও ব্যাপক সাফল্য আসবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন