ফেনী ও হিলিতে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতেও রোগীদের ঠাঁই ইেন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, ফেনী ও হিলি

২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। এসব ওয়ার্ডে বেশির ভাগ রোগী ঠাণ্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত জেলার হাসপাতালের তিনটি ওয়ার্ডে ৭৮ জন রোগীর আসনে ২০৫ জন ভর্তি রয়েছে। শয্যার অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক নার্সরা। শয্যা না পেয়ে অনেক রোগী হাসপাতালের বারান্দা মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে সেখানেও প্রয়োজন অনুযায়ী ঠাঁই মিলছে না অনেকের। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী স্বজনরা। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ ভ্যাপসা গরম, রাতের শেষ ভাগে শীত অনুভূত কুয়াশা পড়ার কারণে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মূলত মৌসুমি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এসব রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গতকাল ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ড মেডিসিন ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগী গাদাগাদি করে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। রোগীর চাপে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভেতর মেঝেতেও ফোম দিয়ে বাড়ানো হয়েছে শয্যা। কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। ওয়ার্ডের ভেতরে স্থান না পেয়ে অনেক রোগী বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় গাদাগাদি অবস্থায় রেখে শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের বারান্দায় চিকিৎসা নেয়া দেড় মাস বয়সী শিশু ফারিয়া সুলতানার মা মর্জিনা আক্তার জানান, পাঁচ-ছয়দিন আগে ফারিয়ার জ্বর সর্দি দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ খেয়ে কোনো কাজ হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে সোমবার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে ভর্তি হই।

হাসপাতালের নার্স ইনচার্জ নিলুফা সুলতানা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী বেড়েছে। প্রতিদিনই ছাড়পত্রের তুলনায় নতুন ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। অধিক রোগীর চাপ সামাল দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার পরও চিকিৎসক-নার্সরা কষ্ট হলেও সাধ্যানুযায়ী সেবা দিয়ে আসছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, গতকাল ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ২৬ জনের শয্যায় ৭৪ জন ভর্তি রয়েছে। এছাড়া পুরুষ মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ৫২ জনের শয্যায় ১৩১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতশত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের অধিকাংশই ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।

এদিকে দিনাজপুরের হিলিতে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়া নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক শিশুরা। অতিরিক্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, হিলিতে এক সপ্তাহের বেশি বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। দিনে প্রচণ্ড গরম আবার শেষ রাতে ঠাণ্ডা। আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত এমন কারণে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়া নিউমোনিয়া রোগী। এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ৫০-৬০ জন করে -সংক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে।

হাসপাতালে শিশুকে নিয়ে আসা আসমা খাতুন বলেন, কয়েক দিন ধরে আমার বাচ্চার পাতলা পায়খানা হয়, কিছুতেই কমছিল না, বাচ্চা আমার খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়, খেলাধুলা সবকিছু বন্ধ করে দেয়। অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাচ্ছিল। যার কারণে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।

হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. হামিদুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে। কারণেই ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের কিছু জটিলতা নিয়ে শিশুরা ভর্তি হচ্ছে সঙ্গে বড়রা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন