টানা তিন কার্যদিবস ধরে দরপতন

মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতায় বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা তিন কার্যদিবস ধরে দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। মূলত বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতার কারণে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে গেছে। এতে পুঁজিবাজারে সূচকের পতন ঘটেছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৯০ শতাংশ কমেছে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক উত্থানে তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানির শেয়ারদর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এরই মধ্যে এসব শেয়ারে ভালো মূলধনি মুনাফা এসেছে। ফলে একশ্রেণীর বিনিয়োগকারী এসব শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। এর মধ্যে বেশকিছু বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারও রয়েছে। আর কারণেই শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যাওয়ায় টানা তিনদিন ধরে পয়েন্ট হারাচ্ছে সূচক।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল লেনদেন শুরুর পর সূচক কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী ছিল। তবে ১০ মিনিট পর থেকেই শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে এবং পয়েন্ট হারাতে থাকে সূচক। যা লেনদেন শেষ হওয়া অবধি বজায় ছিল। গতকাল ডিএসইএক্স ৬৫ দশমিক পয়েন্ট কমে হাজার ২৪৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের কার্যদিবসে ছিল হাজার ৩১৪ পয়েন্টে। গতকাল সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড রেনাটা লিমিটেডের শেয়ারের।

পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মো. ছায়েদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, এটি স্বাভাবিক মূল্য সংশোধন। বিনিয়োগকারীরা তাদের পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যাস করছেন। এক খাতের শেয়ার বিক্রি করে অন্য খাতের শেয়ার কেনা পুঁজিবাজারের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা।

ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস গতকাল দিনশেষে ২৪ দশমিক পয়েন্ট কমে হাজার ৫৬৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে, যা আগের দিন ছিল হাজার ৫৯১ পয়েন্টে। ব্লু-চিপ সূচক ডিএস-৩০ দিনের ব্যবধানে ৩১ পয়েন্ট কমে গতকাল হাজার ৭১৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের দিন শেষে যা ছিল হাজার ৭৫০ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে হাজার ৯৫২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল হাজার ৮৬৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৭৬টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড করপোরেট বন্ডের মধ্যে দিনশেষে দর বেড়েছে ১০৬টির, কমেছে ২৪১টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৯টি সিকিউরিটিজের বাজারদর।

খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইর মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৮১ শতাংশ দখলে নিয়েছে চামড়া খাত। ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। দশমিক ৬৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাতের। আর দশমিক ২৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে জ্বালানি বিদ্যুৎ খাত।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে শীর্ষ সিকিউরিটিজ ছিল ফরচুন সুজ, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো লিমিটেড, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি (বিএটিবিসি), জেনেক্স ইনফোসিস, সোনালী পেপার মিল পাওয়ার গ্রিড।

গতকাল এক্সচেঞ্জটিতে দর বৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে এনআরবিসি ব্যাংক, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ডায়িং, জেনেক্স ইনফোসিস, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।

ডিএসইতে গতকাল সবচেয়ে বেশি দর কমেছে ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, তুংহাই নিটিং, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, দেশ গার্মেন্টস, পাওয়ার গ্রিড, এসিআই ফর্মুলেশন, মেট্রো স্পিনিং, মতিন স্পিনিং এইচ আর টেক্সটাইলের।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার সিএসইতে গতকাল সিএসসিএক্স সূচক দিনের ব্যবধানে প্রায় ১০৫ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ৭২৪- অবস্থান করছে। আগের কার্যদিবসে সূচকটির অবস্থান ছিল ১২ হাজার ৮২৯ পয়েন্টে। এদিন এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন হওয়া ৩১৫টি কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৯টির, কমেছে ২০৩টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির বাজারদর। গতকাল সিএসইতে মোট ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকার সিকিউরিটিজ হাতবদল হয়েছে, আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন