আলোকপাত

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময় বেআইনি কাজ বন্ধ করতে হবে

আর এম দেবনাথ

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস শেষ হলো সেপ্টেম্বরে। এখন অক্টোবর। সামনে আসছে পাট অগ্রহায়ণী ধান ঘরে তোলার সময়। চারদিকে বেশকিছুটা স্বস্তি। নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা বেশ কম। মৃত্যুও কম। অফিস-আদালত খোলা, মিল-ফ্যাক্টরি খোলা, দোকানপাট খোলা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলা। পরিবহন চলছে। ট্রেন চলছে। বলা যায়, মোটামুটি স্বস্তির পরিবেশ। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখলাম, উপলক্ষে সারা দেশে সাজ সাজ রব। কিছু বিধি নিষেধের মধ্যে এবার পূজা হবে। সম্প্রদায়ের লোকেরা কেনাকাটায় মত্ত এখন। জামাকাপড়, শাড়ি-ব্লাউজ, সালোয়ার-কামিজ, জুতা-মোজা, প্রসাধনসামগ্রীর বাজার বহুদিন পর সামান্য স্বাভাবিক হয়েছে। গত ঈদে পূজায় তা ছিল না। জামাকাপড়ের সঙ্গে টিভি, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক সামগ্রীর বাজারেও একটু কেনাকাটার হাওয়া লেগেছে। বিনোদনকেন্দ্রগুলো খুলছে। সেখানেও বুকিং চলছে। অনেকেই ছুটি নিয়ে কক্সবাজার, সিলেট, সুন্দরবন ইত্যাদি অঞ্চলে যাচ্ছেন। কাঁচাবাজারে শীতকালীন সবজি উঠেছে, শীতের মাছও পাওয়া যাচ্ছে। মুদিসামগ্রীর চড়া বাজার। পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, সয়াবিন ইত্যাদির বাজার আবার চড়া। এসব জেনে-শুনে কী মনে হয়? সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচি কাজে লেগেছে? অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে? ২০২১-২২ অর্থবছরের দশমিক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার অর্জনে নতুন করে আশা জাগাচ্ছে? বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান যে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করছে, তা অর্জনে কি আমরা এগিয়ে চলেছি?

পুরো অর্থবছরের আরো আট মাস বাকি। এত আগে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এখনো কভিড-১৯-এর শঙ্কা রয়েছে, যদিও টিকা প্রদান কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। তবে লোকমনে আশা যে কভিড-১৯ আর হয়তো মহামারী হিসেবে দেখা দেবে না। ভরসাতেই তিন মাসের একটা অর্থনৈতিক জরিপ করা হয়। অর্থনৈতিক জরিপে কয়েকটি সূচক আমরা ব্যবহার করতে পারি। রাজস্ব আহরণ, আমদানি রফতানি বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, শেয়ারবাজার, শিল্প উৎপাদন, ব্যাংক-ব্যবসা ইত্যাদি। প্রথমেই আমরা রাজস্ব আহরণের দিকে নজর দিতে পারি। কথা জানা, ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো চললে, আমদানি-রফতানি ব্যবসা ভালো হলে, বাজারে কেনা-বেচা ভালো হলে, মানুষের আয়-রোজগার থাকলে রাজস্ব আপনাতেই বাড়বে। বলা যায়, সেটিই এখন ঘটতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এক দশকের মধ্যে এক মাসে রাজস্বে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। দারুণ খবর, তাই না? কাস্টম ডিউটি বা শুল্ক কর আদায়ে দারুণ উন্নতি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে শুল্ক কর আদায়ে আশাব্যঞ্জক  প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। দুই মাসে শুল্ক কর প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৫ শতাংশ। শুধু আগস্টে ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি শুল্ক কর আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এটা অবশ্যই আগের বছরের (২০২০-২১) আলোচ্য দুই মাসের তুলনায় থেকে সাড়ে হাজার কোটি টাকারও বেশি। শুধু শুল্ক কর নয়, একটি রিপোর্ট দেখলাম, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট সম্পূরক শুল্কসহ অন্যান্য শুল্ক আদায়ের পরিমাণ জুলাই-আগস্টে বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। পরিমাণে তা ১২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। লোকের আয়-রোজগারেও কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। এর প্রমাণ আয়কর আদায়। আয়কর আদায়ের পরিমাণ জুলাই-আগস্টে ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বেশ। আশা করা যায়, সেপ্টেম্বরের তথ্যও একই রকম হবে। প্রশ্ন, রাজস্ব বৃদ্ধি কিসের লক্ষণ?

রাজস্ব বৃদ্ধির একটা বড় কারণ আমদানি রফতানি বাণিজ্য বৃদ্ধি। আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। তৈরি পোশাক কয়েকটি পণ্য বাদে আমাদের অনেক কিছু আমদানি করে ভোগ করতে হয়। তাই শিল্পপণ্য, মধ্যবর্তী পণ্য, কাঁচামাল নয়, অনেক ভোগ্যপণ্যও আমাদের আমদানি করতে হয়। কভিড-১৯-এর মধ্যে আমদানি বাণিজ্য চলে কোনোমতে। নতুন শিল্প নেই যে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি হবে। শিল্পের উৎপাদন পর্যায় ঠিক নেই যে প্রচুর কাঁচামাল আমদানি হবে। কভিড-১৯ পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হওয়ায় আমদানি বাণিজ্যে হাওয়া লেগেছে। তথ্যে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ঋণপত্র (এলসি) খোলার হার প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এটা বেশ বড় খবর। আমদানি ঋণপত্র বেশি বেশি খোলার কারণে বেশি বেশি ডলার লাগবে, ব্যাংকের ডলার যে তারল্যের (লিকুইডিটি) চাপ আছে, সেটাও কিছুটা কমবে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে যদি তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ে তাহলে ডলার খরচ বেশি বেশি হবে। আর সেটা হলে তা স্বস্তির খরচ হবে না। আমদানির পাশাপাশি রফতানির খবরও বেশ ভালো। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এর পরিমাণ দাঁড়ায় হাজার ১০২ কোটি ডলার ( ডলার সমান ৮৫-৮৬ টাকা) ঘটনাক্রমে সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ পণ্য রফতানির রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। তবু সেপ্টেম্বরেই রফতানির পরিমাণ ছিল ৪১৭ কোটি ডলার। বলা বাহুল্য, প্রবৃদ্ধির কৃতিত্ব তৈরি পোশাক খাতের। তৈরি পোশাক রফতানি থেকে গত মাসে পাওয়া গেছে ৩৪২ কোটি ডলার। আর তিন মাসে তৈরি পোশাক রফতানির পরিমাণ হচ্ছে ৯০৫ কোটি ডলার। গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। একমাত্র পাট পাটজাত পণ্য বাদে আর সব খাতেই রফতানি বেড়েছে। কৃষি কৃষিজাত পণ্যের রফতানি সময়ে বেড়েছে ২৬ দশমিক শতাংশ। হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি বেড়েছে ১০ শতাংশের ওপর। চামড়া চামড়াজাত পণ্যসামগ্রীর রফতানি বেড়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। এসব তথ্যের ওপর নির্ভর করে আমরা কি বলতে পারি, রফতানি খাতে, রফতানিমুখী শিল্প খাতে প্রদত্ত সরকারি প্রণোদনা কাজে লেগেছে? এদিকে দেখা যাচ্ছে, ওভেন নিট পোশাকের রফতানি আদেশ সমানে আসছে। সমস্যা একটা আছে, কাঁচামালের। অধিকাংশ কাঁচামালই আসে চীন থেকে। সেখানে কোনো অনিশ্চয়তা দেখা দিলে রফতানির ক্ষতি হবে। রফতানির অন্যান্য অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল। অনুমান কার যায়, যদি বর্তমান প্রবণতা ঠিক থাকে তাহলে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা খুব সহজেই বাস্তবায়ন হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমদানি রফতানি বাণিজ্য যথারীতি গতি পেয়েছে। বস্তুত রফতানি হলেই আমদানি বাড়বে আবার আমদানি বাড়লেই রফতানি বাড়বে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, দুইয়ের মধ্যে গ্যাপ খুব বড়। আমাদের আমদানির পরিমাণ বরাবরই বেশি, রফতানির পরিমাণ কম। তৈরি পোশাক বাদে রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি দিন দিন বড়ই হচ্ছে। আমরা আমদানি বেশি করি চীন থেকে, আর রফতানির বাজার আমেরিকা ইউরোপের দেশগুলো। ভাগ্যক্রমে ইউরোপীয় দেশগুলো আমেরিকা বলে না যে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে। যেমন আমাদের দাবি করতে হচ্ছে ভারত চীনের কাছে। কারণ ওই দুই দেশই আমাদের আমদানি বাণিজ্যের উৎস দেশ। কথা বলাই দরকার যে বহুদিন বন্ধ থাকার পর সারা বিশ্ব স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ায় ক্রয়াদেশ বাড়ছে। প্রবণতা চিরকাল অব্যাহত থাকবে তা বলা যায় না। অবস্থায় যেটি দরকার, রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্য নতুন বাজার। দুটো বিষয়ে কথা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবাই তৈরি পোশাকেই ব্যস্ত, নতুন উদ্যোক্তারাও তৈরি পোশাকেই যাচ্ছেন। পরিচিত শিল্পতাই না? আরেকটা ক্ষেত্র আছে, যেখানে বড় বড় উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে ধরনের উল্লম্ফন অর্থনীতিতে শক্তির লক্ষণ। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে কি উল্লম্ফন শক্তির লক্ষণ? আমি নিশ্চিত নই। আমি বলছি শেয়ারবাজারের কথা। শেয়ারবাজারে প্রায় প্রতিদিন রেকর্ড হচ্ছে। সূচকের রেকর্ড, লেনদেনের রেকর্ড। মুশকিল হলো, বাজারে কারা এত বড় বড় লেনদেন করছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। অনেক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়মের বাইরে গিয়ে টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে নেমেছে। মধ্যবিত্ত তার টাকা-পয়সা নিয়ে শেয়ারবাজারে নেমেছে এমন লক্ষণ নেই। মধ্যবিত্ত এখনো তাদের টাকা ব্যাংকেই রাখছে। কারণে সরকারি বেসরকারি ব্যাংকে আমানতের ছড়াছড়ি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এত বদনাম, তার পরও আমানতকারীরা সেখানেই টাকা রাখছেন। নিরাপত্তার জন্য। আমানতকারীরা শত বাধা-বিপত্তি, নিয়মকানুন সত্ত্বেও যাচ্ছেন সঞ্চয়পত্রের দিকে। তাও নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য। তাহলে শেয়ারবাজারে কারা টাকা নিয়ে নেমেছেন? বাজারে নতুন শেয়ার নেই। পুরনো শেয়ারের হাতবদল হচ্ছে মাত্র। তাও দেখা যাচ্ছে যত বাজে শেয়ার, তার দামই বাড়ছে বেশি বেশি। এর অর্থ কী? ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়লে বুঝতাম অর্থনীতি শক্ত হচ্ছে। কিন্তু তা নয়। অবস্থায় শেয়ারবাজারের শক্তির সঙ্গে অর্থনীতির শক্তির তুলনা করাটা যুক্তিসংগত মনে করি না। বাজারে নতুন শেয়ার দরকার। ফটকাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হওয়া দরকার। নিয়ন্ত্রণ বিধি আরো শক্ত হওয়া দরকার।

বলতে হয় রেমিট্যান্সের কথা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের আগে অর্থাৎ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্সে একটা জোয়ার এসেছিল। কী কারণে জানি না, জুলাই থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণে টান পড়েছে। জুনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৯৪ কোটি ডলার ( ডলার সমান ৮৫-৮৬ টাকা) সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স কমে আসে ১৭২ কোটি ডলারে। কেউ কেউ বলেন, আগে বেড়েছিল, কারণ তখন হুন্ডিওয়ালাদের ব্যবসা ছিল বন্ধ অথবা তাদের কার্যক্রম ছিল সীমিত করোনা মহামারীর কারণে। এখন হুন্ডিওয়ালারা আবার মাঠে। তারা রেমিট্যান্সের ডলারে আবার হাত দিয়েছে। কারণেই রেমিট্যান্স তিন মাস ধরে কমছে, যদিও সরকার প্রতি ডলারে রেমিট্যান্স প্রাপকদের টাকা বেশি করে দিচ্ছে, যাকে ভর্তুকি বলা যায়। একে ডলারের বাজারে টাকার প্রবর্তন বলা যায়। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমাটা অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষে ভালো লক্ষণ নয়। পুরো কভিড-১৯-এর তীব্র সংক্রমণকালে রেমিট্যান্স গ্রামীণ অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। শত হোক এর ওপর নির্ভরশীল চার-পাঁচ কোটি লোক। তারা বাঁচলে, ভালো থাকলে গ্রামীণ অর্থনীতির মঙ্গল। এখন ঘুরে দাঁড়ানোর সময়, অর্থনৈতিক সংস্কার করার সময়, পুনর্গঠনের সময়। এমন সময়ে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমলে তা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। আবার রেমিট্যান্সের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক আমদানি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের। আমদানির একটা অংশ রেমিট্যান্সের টাকার ওপর নির্ভরশীল। মুহূর্তে আমদানি বাড়ছে, রফতানিও বাড়ছে কিন্তু রেমিট্যান্সে টান পড়েছে। সম্ভবত কারণেই বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ( বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি) ডলার থেকে সেপ্টেম্বরে তা ৪৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

ভালো একটা খবর আছে। শিল্প-ব্যবসার খাতে নতুন একটা খাত যোগ হচ্ছে বলে একটা খবর পড়লাম। সরকারি বেসরকারি খাতে বেশ বড় বড় অবকাঠামো এখন গড়ে উঠছে। এসবে প্রচুর বিনিয়োগ হচ্ছে। এতে লাগে ভারী যন্ত্র, যা আমাদের দেশে তৈরি হয় না। এগুলো আমাদের আমদানি করতে হয়। প্রবল চাহিদা দেখে অনেকেই নতুন ব্যবসায় নামছেন। কেউ কেউ আবার এসব ভারী যন্ত্রপাতির মধ্যে কোনোটা এখানে তৈরি করা যায় কিনা, তা নিয়েও ভাবছেন। একটা খারাপ খবর হচ্ছে -কমার্সের, অনলাইন বেচাকেনার। করোনার ফলে প্রসঙ্গটি বেশ গতি পেয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, খাতে ব্যবসা বাড়বে এবং করোনা-উত্তর অর্থনীতিতে ব্যবসা অবদান রাখবে। কিন্তু হা হতোস্মি প্রতারণা লোভ ব্যবসাকে ডুবিয়েছে। ব্যবসার মাধ্যমে লাখ লাখ ক্রেতার হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে একশ্রেণীর স্টার্টআপ ব্যবসায়ী অর্থনীতির বারোটা বাজিয়েছেন। বস্তুত ধরনের ব্যবসা, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং, বীমা, সমবায় এবং নানা ধরনের নতুন নতুন ফড়িয়া ব্যবসা অর্থনীতির বেশ ক্ষতি করছে। ঘুরে দাঁড়ানোর সময় দরকার হবে পুঁজি বিনিয়োগ। সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয়ের জায়গা সংকুচিত হয়ে আসায়, বিনিয়োগের কোনো জায়গা না থাকায় তারা নানা প্রলোভনে পড়ে তাদের টাকা বিনিয়োগে বিকল্প পন্থা খুঁজছেন। খুঁজতে গিয়ে পড়ছেন ফটকাবাজ, প্রতারক একশ্রেণীর ভুঁইফোঁড় ব্যবসায়ীর খপ্পরে। বিদেশ থেকে শিখে এসে তারা জ্ঞান বাংলাদেশে ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, এসব টাকা তারা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর কাজে ব্যস্ত অর্থনীতির সময়ে ধরনের বেআইনি কাজ বন্ধ করতে না পারলে অর্থনীতির সমূহ ক্ষতি হবে। বিশেষ করে সঞ্চয়ের। কথা তো ঠিক যে দেশে এখন সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ সঞ্চয় আমাদের দরকার। ভোগ-বিলাসী জীবন আমাদের জন্য কতটুকু কল্যাণকর হবে, তাও ভেবে দেখতে হবে।  

 

আর এম দেবনাথ: অর্থনীতি বিশ্লেষক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন