চিপ স্বল্পতায় ধুঁকছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত কম্পিউটার বাজার

বণিক বার্তা ডেস্ক

মহামারীর প্রভাবে সাপ্লাই চেইনে সংকটের কারণে সৃষ্ট চিপস্বল্পতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তিগত কম্পিউটার (পিসি) বাজারে। সর্বশেষ প্রান্তিকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) উভয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পিসি বাজার কিছুটা সম্প্রসারিত হলেও তা গত বছরের চেয়ে কম ছিল। খবর টেক টাইমস।

গত বছর ধরে চলা মহামারীতে অনেক গ্রাহকই নতুন পিসি কিনেছেন। ঘরে থেকে কাজ এবং ক্লাস নির্ভরতা বৃদ্ধিতে দেড় বছর ধরেই পিসি বিক্রিতে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। তবে এতে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাপ্লাই চেইনে সংকট চিপস্বল্পতা। যার কারণে কাঙ্ক্ষিত পিসি সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে পিসি নির্মাতা কোম্পানিগুলো। এছাড়া যারা একবার পিসি কিনে ফেলেন তারা সাধারণত দীর্ঘ সময়ের জন্য নতুন পিসি কেনেন না। কারণে সাম্প্রতিক দুই প্রান্তিকে পিসি ক্রয় প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক থেকেই ভোক্তারা পিসি অন্যান্য শিক্ষামূলক উপকরণে বিনিয়োগ কমানো শুরু করেছে। এতে পিসির চাহিদা কমেছে। এতে প্রথম প্রান্তিকে ক্রোমবুকসহ ল্যাপটপের বিক্রি ১৭ শতাংশ কমেছে। গার্টনার বলছে, তৃতীয় প্রান্তিকে পিসি বিক্রি হয়েছে কোটি ৪১ লাখ ইউনিট। অন্যদিকে সময়ে কোটি ৬৭ লাখ ইউনিট পিসি বিক্রির দাবি আইডিসির।

আইডিসিসহ অপর বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের দাবি, সাপ্লাই চেইনে সংকটের প্রধান কারণ করোনা মহামারী। আইডিসির মোবাইল অ্যান্ড কনজ্যুমার ডিভাইস ট্র্যাকারসের গবেষণা ব্যবস্থাপক জিতেশ উবরানি বলেন, সাপ্লাই লজিস্টিকস বিড়ম্বনায় বছরজুড়েই ভুগছে পিসি শিল্প। দুঃখজনক বিষয় হলো, গত কয়েক মাসেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তবে আর্স টেকনিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেস্কটপের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ল্যাপটপ খাত। সাপ্লাই চেইনে তীব্র সংকট সত্ত্বেও ডেস্কটপে তুলনামূলক শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।

ক্যানালিস বলছে, ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে পিসি বাজারে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পিসি বাজারের প্রবৃদ্ধি হয়েছে শতাংশ। আইডিসি বলছে, গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক শতাংশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার বছরওয়ারি সংকুচিত হয়েছে শতাংশ।

ক্যানালিস আইডিসি উভয়ের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তৃতীয় প্রান্তিকে সর্বোচ্চ পিসি বিক্রি করেছে চীনা কোম্পানি লেনোভো। তার পরই রয়েছে এইচপি, ডেল অ্যাপল।

গার্টনারের পূর্বাভাস, ২০২২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চিপস্বল্পতা বহাল থাকবে। আগামী বছরও অনুভূত হবে চিপ সংকটের প্রভাব। এনভিডিয়া, মাইক্রোসফট, টিএসএমসির সতর্কবাণীর পর পূর্বাভাস গার্টনারের। বৈশ্বিক চিপস্বল্পতার কারণে পিসি অন্যান্য গ্যাজেটের দাম বাড়বে।

মাইক্রোসফট যখন তাদের লেটেস্ট উইন্ডোজ ১১ উন্মুক্ত করেছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের পিসি বাজারে শ্লথগতি নেমে এসেছে। গত সপ্তাহ থেকে লেনোভো, এইচপি আসুসের মতো ল্যাপটপ নির্মাতা কোম্পানি উইন্ডোজ ১১সহ নতুন মডেলের বেশ কয়েকটি ল্যাপটপ ছেড়েছে। স্যামসাং, এসার ডেলের মতো অন্যান্য পিসি নির্মাতা কোম্পানিও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে উইন্ডোজ ১১ সংবলিত পিসি বাজারে আনবে। সামনে যেহেতু ছুটির মৌসুম আসছে, তখন উইন্ডোজ ১১ সংবলিত নতুন পিসি পাওয়া গ্রাহকদের জন্য কঠিন ঠেকতে পারে। এছাড়া সাপ্লাই চেইন সংকটের কারণে বিদ্যুৎ সার্কিট, ওয়াই-ফাই মডিউলস অন্যান্য যন্ত্রাংশ তৈরিতেও সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে পিসি, গাড়ি অন্যান্য গ্যাজেটে ক্রমবর্ধমান চিপের চাহিদা মাথায় রেখে জাপানে একটি সেমিকন্ডাক্টর কারখানা স্থাপনে এক সঙ্গে কাজ করছে সনি টিএসএমসি। জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় কুমামতো প্রিফ্যাকচারে স্থাপিত কারখানাটির বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ থাকবে তাইওয়ানভিত্তিক সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা জায়ান্ট টিএসএমসির। তবে সনির ইমেজ সেন্সর কারখানার নিকটবর্তী হওয়ায় পরিচালনায় জাপানি প্রযুক্তি জায়ান্টটিরও উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অর্ধেকের সংস্থান করবে জাপান সরকার। জাপানের বিশাল গাড়ি শিল্পের পাশাপাশি ক্যামেরা অন্যান্য গ্যাজেটের জন্যও চিপ সরবরাহ করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন