২০৫০ সাল

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৬০ শতাংশ পিছিয়ে থাকবে বিশ্ব

বণিক বার্তা ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোর। যদিও বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয় বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) সংস্থাটির মতে, এসব পরিকল্পনার আওতায় প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য পূরণে বিশ্ব ৬০ শতাংশ পিছিয়ে থাকবে। এজন্য আসন্ন কপ২৬ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের শক্তিশালী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে আইইএ।

দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্লাসগোয় অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের জন্য বছর আইইএ তার বার্ষিক ওয়ার্ল্ড এনার্জি আউটলুক পরিবর্তন করে গাইডবুক হিসেবে প্রকাশ করেছে। সেখানে আইএ পূর্বাভাস দিয়েছে, দেশগুলো তাদের বর্তমান প্রতিশ্রুতি মেনে চললে শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রার কেবল ৪০ শতাংশ অর্জিত হবে। সংস্থাটি বলছে, বর্তমান পরিকল্পনা এবং নিট শূন্য লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্যটি বিশাল। এজন্য আগামী দশকে লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।

আইইএর নির্বাহী পরিচালক ফাতিহ বিরল বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর বিপর্যয় থেকে পুনরুদ্ধার হওয়া প্রধান অর্থনীতিগুলো এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ হারিয়েছে। আমরা মহামারী থেকে অস্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের সাক্ষী হচ্ছি। মহামারীর মধ্যেও জোরালোভাবে বাড়ছে কয়লার ব্যবহার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

বিরল বিশেষ করে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য কার্বন নিঃসরণ কমাতে জোরালো প্রতিশ্রুতি দেয়ার আহ্বান জানান। তবে তিনি বলেন, ধনী দেশগুলোর নেতারা বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে উদীয়মান অর্থনীতিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ না করলে এটি অর্জন করা সম্ভব নয়। আমি দেখতে চাই, কপ২৬ সম্মেলনে একত্র হয়ে বিশ্বকে একটি রাজনৈতিক বার্তা দিন যে, আমরা একটি পরিষ্কার জ্বালানির ভবিষ্যৎ পেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

বিরল বলেন, বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বিশ্বনেতাদের বলা উচিত, আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আপনি যদি পুরনো জ্বালানি উৎস কিংবা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জ্বালানি উৎস বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনি আপনার অর্থ হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন। অন্যদিকে আপনি যদি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনি অধিক মুনাফা পাবেন।

আইইএ পূর্বাভাস দিয়েছে, কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামাতে লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং বিনিয়োগের ৭০ শতাংশই উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে প্রবাহিত হতে হবে। ফাতিহ বিরলের মতে, এক্ষেত্রে বিশ্বনেতারা বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থাগুলোকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করতে পারে।

এদিকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপজুড়ে গ্যাসের মূল্য রেকর্ড ছুঁয়েছে। এমন উচ্চমূল্য ভোক্তাদের শীতকালীন ব্যয় বাড়ানো, কারখানা বন্ধ করা এবং খাদ্য খুচরা খাতের সরবরাহ চেইনে আরো জটিলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সংকট জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর অতিনির্ভরশীলতার বিপদকে তুলে ধরেছে। আইইএর মতে, সংকট নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ধীর অগ্রসরের ঝুঁকি সম্পর্কে আগাম সতর্কতা দিচ্ছে। সংকটের কারণ হিসেবে কেউ কেউ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে স্থানান্তরের বিষয়টি তুলে ধরলেও আইইএর নির্বাহী পরিচালক দাবিগুলোকে ভুল বিভ্রান্তিকর বলে নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিশ্বে জ্বালানি তেল গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হওয়ার ফলে যে ধাক্কা আসবে, তা ভোক্তারা খুব কম অনুভব করবেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন