জ্বালানি সংকট সত্ত্বেও চীনের বাণিজ্যে উল্লম্ফন

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০২০ সালের মাঝামাঝিতে কভিডজনিত বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছিল চীন। কয়েক দশকের মধ্যে শীর্ষে উঠেছিল রফতানি প্রবৃদ্ধি। তবে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে নানা সংকট জেঁকে ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিকে। কারখানাগুলোয় বিদ্যুৎ ঘাটতি, সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধকতা কভিড-১৯ সংক্রমণ পুনরুত্থানের মতো বিষয়গুলো চীনের বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা তৈরি করে। যদিও সবকিছু পেছনে ফেলে সেপ্টেম্বরেও দেশটির বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও গত মাসে চীনের রফতানি আমদানি বাণিজ্যে পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত দেশটির কাস্টম তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে চীনের রফতানি আয় ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আয়ের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক শতাংশ বেশি।

গত মাসে চীনের রফতানি প্রবৃদ্ধি আগস্টে ২৬ শতাংশ এবং অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সময়ে দেশটির আমদানিতে কিছুটা শ্লথগতি দেখা গেছে। গত মাসে চীনের আমদানি ১৭ দশমিক শতাংশ বেড়ে ২৪ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। প্রবৃদ্ধি আগস্টে ৩৩ শতাংশের চেয়ে কম।

চীনা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ২০২০ সালের মার্চে কভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এর পরই দেশটির বাণিজ্যে রেকর্ড ভাঙা প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়। সময় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো কভিড-১৯ সংক্রমণে পর্যুদস্ত থাকায় ফুলেফেঁপে ওঠে চীনের রফতানি।

দেশটির শুল্ক সংস্থার মুখপাত্র লি কুইয়েন বলেন, বিশ্বের প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে চীনের বৈদেশিক বাণিজ্য নেতৃত্বের পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি চীনের আন্তর্জাতিক বাজারের পরিধিও বেড়েছে।

এদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর, জোরালো শিল্প চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক বিদ্যুৎ ঘাটতিতে পড়ে চীন। ঘাটতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে যে, গত মাসের শেষ দিকে অ্যাপল টেসলার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান চীনজুড়ে অসংখ্য কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। দেশটির সাম্প্রতিক শিল্প উৎপাদনেও মন্দাভাব দেখা গেছে। উৎপাদন খাতে পিএমআই সেপ্টেম্বরে অপ্রত্যাশিতভাবে কমে গেছে।

জাপানি আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান নোমুরার প্রধান চীনা অর্থনীতিবিদ টিং লু বলেন, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বিদ্যুৎ ঘাটতি এখনো রফতানিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির টেকসই পণ্যের চাহিদা কমে যাচ্ছে। আমরা মনে করছি, অক্টোবরে চীনের রফতানি মাঝারি আকারের ধীর হবে এবং ডিসেম্বরে প্রায় ১০ শতাংশ সংকুচিত হবে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, উন্নত অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রণোদনা এবং মহামারীজনিত কারণে ভোগের ধরন পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে চাহিদা বেড়েছে। ফলে চীনের রফতানিতে এমন প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে।

সেপ্টেম্বরে চীনের বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হাজার ৮০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যেখানে আগস্টেও উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল হাজার ২০০ কোটি ডলার। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত আগস্টে হাজার ৮০০ কোটি ডলার থেকে গত মাসে হাজার ২০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে শুল্কযুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় শুরু হওয়া যুদ্ধ জো বাইডেনের সময়ে শিথিলেরও কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে।

গত মাসে চীনের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে দেশগুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তৃত করেছে। গতকাল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে যানবাহন, মোবাইল ফোন, ভোক্তা ইলেকট্রনিকস গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন