শেষ হলো ২০২১ সালের নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা। সুইডিশ রয়্যাল একাডেমি ১১ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেল স্মারক পুরস্কার ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হলো এবারের আসর। অর্থনীতিতে এবারের পুরস্কার উঠেছে কানাডায় জন্ম নেয়া মার্কিন অর্থনীতিবিদ ডেভিড কার্ড, মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোশুয়া অ্যাংগ্রিস্ট ও ডাচ বংশোদ্ভূত মার্কিন অর্থনীতিবিদ গুইডো ইমবেনসের হাতে। বর্তমানে তারা যথাক্রমে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত।
নোবেল
কমিটি তাদের
বক্তব্যে বলেছে,
এ অর্থনীতিবিদদের উদ্ভাবিত প্রাকৃতিক পরীক্ষা
পদ্ধতি অর্থনীতির অনেক জটিল এবং
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের বাস্তবসম্মত ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ।
জোশুয়া ডি
অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস
তাদের কাজের
মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরীক্ষা পদ্ধতির যৌক্তিকতা প্রমাণ করেন। ডেভিড
কার্ড মূলত
এসব পদ্ধতি
প্রয়োগ করে
শ্রমবাজারের বিভিন্ন
দিক বিশ্লেষণ করেন।
পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত,
আর সম্পদের
ব্যবহারের ক্ষেত্র
বা চাহিদা
অসীম। সীমিত
সম্পদ দ্বারা
মানুষের অসীম
চাহিদা একসঙ্গে
পূরণ করা
সম্ভব নয়।
তাই মানুষকে
সিদ্ধান্ত নিতে
হয় কোন
চাহিদাটা আগে
পূরণ করবে
এবং কোনটা
পরে। এক্ষেত্রে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার
পূর্বশর্ত হলো
বর্তমান সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ ফলাফল আন্দাজ
করতে পারা।
এ যুক্তি
একজন সাধারণ
মানুষের জন্য
যতটুকু প্রযোজ্য, রাষ্ট্র বা সরকারের
জন্যও সমভাবে
প্রযোজ্য। ধরা
যাক, রাষ্ট্রের যে সীমিত সম্পদ
আছে, তা
দিয়ে শিক্ষা
ক্ষেত্রে অধিকতর
বিনিয়োগ করা
যায়, আবার
পদ্মা সেতুর
মতো আরেকটা
সেতু নির্মাণ
করা যায়
বা নতুন
কোনো একটা
আধুনিক সরকারি
হাসপাতাল নির্মাণ
করা যায়।
সুতরাং সরকারকে
এখানে বেছে
নিতে হবে
কোন প্রকল্পটা মানুষের জন্য সর্বোচ্চ উপযোগ নিশ্চিত করবে।
যেমন শিক্ষা
ক্ষেত্রে অধিক
বিনিয়োগ ভবিষ্যৎ
প্রজন্মকে শিক্ষিত
করে তুলবে
এবং তাদের
বাড়তি আয়ের
মাধ্যমে দেশের
কল্যাণ সাধন
হবে। আবার
হাসপাতাল নির্মাণ
করলে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, মানুষ
সুস্থ থাকবে
এবং বেশি
কর্মক্ষম হবে,
যা আদতে
ব্যক্তিগত এবং
সর্বোপরি দেশের
মঙ্গল বয়ে
আনবে। অনুরূপভাবে, একটি সেতু নির্মাণ
করলে মানুষ
ও পণ্যসামগ্রী যাতায়াত সহজতর হবে,
যা দেশের
উন্নয়নে প্রভূত
ভূমিকা রাখবে।
উপরের
উদাহরণগুলোর মধ্যে
সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে দরকার
‘কারণ এবং
প্রভাবের’ মধ্যে
সঠিক সম্পর্ক
স্থাপন করা।
অর্থাৎ স্বাস্থ্য খাতে অধিক বিনিয়োগের কারণে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে
কী প্রভাব
পড়বে বা
শিক্ষা খাতে
ব্যয় বাড়ানোর
কারণে শিক্ষার
মানোন্নয়নে কতটুকু
প্রভাব ফেলবে,
এ সম্পর্ক
স্থাপন করা
অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্ক স্থাপনের ভিত্তি কী? ফলিত
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিষয়টা পরিষ্কার। যেমন
ধরুন, করোনার
টিকা আবিষ্কারের পর কয়েক ধাপে
তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে
প্রাণী ও মানবদেহে প্রয়োগের মাধ্যমে। যাদের শরীরে
নভেল করোনাভাইরাস ছিল তাদের শরীরে
টিকা প্রয়োগ
করে দেখা
হয়েছে টিকা
কতটুকু কার্যকর। আমরা এখন কম-বেশি বলে
দিতে পারি
বিভিন্ন কোম্পানির আবিষ্কৃত টিকার মধ্যে
কোনটার কার্যকারিতা কম এবং কোনটার
বেশি।
কিন্তু
অর্থনীতির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটাই ভিন্ন।
যেমন শিক্ষা,
স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ালে মানুষের
জীবনযাত্রার মানের
যে উন্নয়ন
হবে, তা
কার্যকরভাবে পরীক্ষা
করা সূক্ষ্ম
ও জটিল
একটি ব্যাপার। ব্যাপারটা আরেকটু খোলাসা
করে বলি।
কেউ একজন
স্নাতক পাস
করে ভাবছেন
স্নাতকোত্তর পড়বেন
নাকি চাকরিতে
যোগ দেবেন।
কীভাবে তিনি
সিদ্ধান্তটা নেবেন?
আপাতদৃষ্টিতে মনে
হচ্ছে সহজ।
যারা স্নাতকোত্তর করে চাকরিতে যোগ
দিয়েছেন, তাদের
মাসিক গড়
আয় যারা
শুধু স্নাতক
করে চাকরিতে
যোগ দিয়েছেন
তাদের মাসিক
গড় আয়ের
চেয়ে কতটুকু
বেশি, এটা
নির্ণয় করলেই
হবে। কিন্তু
যারা স্নাতক
করে চাকরিতে
যোগ দিয়েছেন
তাদের গড়
আয় শিক্ষা
ছাড়াও অন্য
অনেক নিয়ামকের ওপর নির্ভরশীল, যা
আনুষ্ঠানিক শিক্ষার
সঙ্গে সরাসরি
সম্পর্কযুক্ত নয়।
উদাহরস্বরূপ, যারা
শুধু স্নাতক
সম্পন্ন করে
চাকরিতে যোগ
দিয়েছেন, তাদের
গড় আইকিউ,
কাজ করার
ক্ষমতা, ধৈর্যশক্তি বা অন্য কোনো
শারীরিক ও মানসিক নিয়ামক,
যারা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে চাকরিতে
যোগ দিয়েছেন,
তাদের চেয়ে
কম। তাই
পূর্বোক্ত শ্রেণীর
লোকের আয়ও
কম। এমনও
হতে পারে,
যারা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন, তারা
পড়াশোনায় আগ্রহী
এবং কাজকর্মে সমানতালে দক্ষ। সুতরাং
এ শ্রেণীর
লোক পড়াশোনা
কম করলেও
আয়ের দিক
থেকে যারা
শুধু স্নাতক
সম্পন্ন করেছেন,
তাদের চেয়ে
বেশি হতো।
সুতরাং সনাতন
পদ্ধতিতে শুধু
আয়ের পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে
আয়ের ওপর
শিক্ষার প্রভাব
নির্ণয় করা
প্রশ্নসাপেক্ষ।
পদ্ধতিগত এ ত্রুটির একটা
সমাধান হলো,
দৈবচয়ন ভিত্তিতে বিষয় নমুনা নির্বাচন। কিন্তু অর্থনীতির অনেক
বিষয় আছে,
যেখানে দৈবচয়ন
সম্ভব নয়
বা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। যেমন
আয়ের ওপর
শিক্ষার প্রভাব
নির্ণয়ে আমরা
সমগোত্রের কিছু
লোককে দুটি
দলে ভাগ
করে একদল
লোককে লেখাপড়া
শেখাব, আরেক
দল লোককে
ইচ্ছা করেই
শিক্ষা থেকে
দূরে রাখব।
তারপর দুই
দলের আয়ের
পার্থক্য দেখে
সহজেই বুঝতে
পারব আয়ের
ওপর শিক্ষার
প্রভাব। কিন্তু
এটা বাস্তবে
সম্ভব নয়।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য জোশুয়া ডি
অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস
প্রাকৃতিক পরীক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তাদের মতে, পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে অনেক ঘটনা
ঘটে, যা
দৈবচয়নের সঙ্গে
সাদৃশ্যপূর্ণ। অর্থনীতিবিদদের এমন সব ঘটনা
নমুনা হিসেবে
নিয়ে কারণ
এবং প্রভাবের সম্পর্ক নির্ণয় করতে
পারলেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রশ্নের বাস্তবিক ও যুক্তিসংগত উত্তর খুঁজে পাওয়া
সম্ভব।
জোশুয়া
ডি অ্যাংগ্রিস্ট এবং তার সহকর্মী
অ্যালান ক্রুগার
(ধারণা করা
হচ্ছে যে
প্রয়াত অ্যালান
ক্রুগার বেঁচে
থাকলে হয়তো
নোবেল পেতেন)
১৯৩০ থেকে
১৯৫৯ সাল
পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া কিছু
লোককে দুটি
দলে ভাগ
করেছেন। প্রথম
দলে আছে
যারা একটি
পঞ্জিকাবর্ষের শুরুর
দিকে জন্মগ্রহণ করেছে। আর দ্বিতীয়
দলে আছে
যারা একই
পঞ্জিকাবর্ষের শেষের
দিকে জন্মগ্রহণ করেছে। এ দুই
দল একসঙ্গে
বিদ্যালয়ে পাঠ
শুরু করবে,
যেহেতু তারা
উভয়েই একই
পঞ্জিকাবর্ষে জন্ম
নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাধ্যতামূলক শিক্ষার কার্যক্রম অনুযায়ী ১৬ বছর
পূর্ণ হওয়ার
আগে (কোনো
কোনো অঙ্গরাজ্যে ১৭ বছর) কেউ
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
ছেড়ে যেতে
পারবে না।
সুতরাং প্রথম
দলের সদস্যরা
(পঞ্জিকাবর্ষের শুরুর
দিকে যাদের
জন্ম) দ্বিতীয়
দলের সদস্যদের (যাদের জন্ম পঞ্জিকাবর্ষের শেষে) আগেই ১৬
বছর পূর্ণ
করবে এবং
বিদ্যালয় ছেড়ে
যেতে পারবে
ইচ্ছে করলেই।
কিন্তু দ্বিতীয়
দলের সদস্যরা
যেতে পারবে
না ইচ্ছে
করলেও, যদিও
দুই দলের
সদস্যরা একই
শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অর্থাৎ দ্বিতীয় দলের
সদস্যরা অনিচ্ছুক হলেও প্রথম দলের
সদস্যদের চেয়ে
এক শ্রেণী
বেশি পড়তে
হবে। অ্যাংগ্রিস্ট ও ক্রুগার দেখান
যে দ্বিতীয়
দলের সদস্যদের গড় শিক্ষা এবং
আয় প্রথম
দলের সদস্যদের চেয়ে বেশি। যেহেতু
জন্মের ওপর
কারো হাত
নেই, দুই
দলের সদস্যদের মধ্যে শিক্ষা ছাড়া
অন্যান্য গুণাবলি
গড়ে প্রায়
একই। সুতরাং
তাদের মধ্যে
আয়ের যে
পার্থক্য, সেটা
শিক্ষার কারণে।
তারা দেখান
যে প্রতি
এক বছর
বেশি পড়াশোনার জন্য আয়ের তারতম্য
হয় প্রায়
১০ শতাংশ।
তাদের
দেখানো এ পথে অর্থনীতির দরকারি অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মার্কিন
অর্থনীতিবিদ ডেভিড
কার্ড। বিশেষ
করে ন্যূনতম
মজুরি নিয়ে
কার্ডের গবেষণা
প্রচলিত চিন্তাধারা পাল্টে দিয়েছে। অনেক
দেশেই শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা থাকে। যেমন
বাংলাদেশের শ্রম
আইন অনুযায়ী
পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি (গ্রেড
৭) নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার টাকা।
শ্রমিকের দরকষাকষির ক্ষমতা যখন একেবারেই কম তখন মজুরি
নির্ধারণে চাহিদা
ও জোগানের
ওপর নির্ভর
করলে শ্রমিকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়।
তাই সরকার
ন্যূনতম মজুরি
নির্ধারণ করে
দেয়।
প্রচলিত
ধারণা মতে,
ন্যূনতম মজুরি
নির্ধারণ বাজারের
নীতির পরিপন্থী। অনেক সময় ন্যূনতম
মজুরি নিয়োগকর্তার সামর্থ্যের বাইরে চলে
যায়। ফলে
নিয়োগকর্তা কম
জনবল নিয়োগ
দেন। এতে
বেকার সমস্যা
বেড়ে যায়।
প্রচিলত এ ধারণাকে প্রশ্ন
করার জন্য
প্রাকৃতিক পরীক্ষা
পদ্ধতি প্রয়োগ
করেন ডেভিড
কার্ড ও অ্যালান ক্রুগার। ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে ন্যূনতম
মজুরি ঘণ্টায়
৪ দশমিক
২৫ মার্কিন
ডলার থেকে
বাড়িয়ে ৫ দশমিক শূন্য
৫ মার্কিন
ডলারে উন্নীত
হয়। কার্ড
ও ক্রুগার
দেখার চেষ্টা
করেন যে
ন্যূনতম মজুরি
বেকার সমস্যা
বাড়ায় কিনা।
এজন্য তারা
নিউ জার্সি
এবং তার
পার্শ্ববর্তী পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে ৪১০টি ফাস্টফুডের দোকানে ন্যূনতম মজুরি
বাড়ানোর আগের
ও পরের
কর্মসংস্থানের চিত্র
পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রথমত, ফাস্টফুডের দোকান পর্যবেক্ষণ করার
অর্থ হলো,
এগুলো অল্প
মজুরির কাজ,
মজুরির সামান্য
পরিবর্তনে কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব পড়বে।
দ্বিতীয়ত, ফাস্টফুডের দোকানগুলো দুই অঙ্গরাজ্যের সীমান্ত এলাকা থেকে
নির্বাচন করা
হয়েছে, যাতে
অন্য কোনো
নিয়ামকের প্রভাব
প্রায় সমান
থাকে। প্রাকৃতিক এ দৈবচয়নের ভিত্তিতে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা
যায়, ন্যূনতম
মজুরি বৃদ্ধির
পর নিউ
জার্সিতে পার্শ্ববর্তী পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের তুলনায়
কর্মসংস্থান বেড়েছে
১৩ শতাংশ।
গবেষণার এ ফলাফলের ভিত্ততে
তারা দেখান
যে ন্যূনতম
মজুরি বেকারের
সংখ্যা বাড়ায়
না, বরং
কমাতে সাহায্য
করে। এর
কারণ হিসেবে
কার্ড ও ক্রুগার উল্লেখ
করেন, বাড়তি
মজুরি বাবদ
খরচ দোকানিরা খুব সহজেই ক্রেতার
ওপর চাপিয়ে
দিতে পারেন।
ডেভিড কার্ডের আরেকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা হলো, কোনো দেশ বা রাজ্যের কর্মসংস্থানের ওপর অভিবাসীর (শরণার্থী) প্রভাব। প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী শরণার্থী প্রবেশের আগে ও পরে সেই দেশ বা রাজ্যের বেকারত্বের হার দেখলে সহজে জানা যাবে বেকারত্বের ওপর শরণার্থীর প্রভাব। কার্ড দেখলেন প্রচলিত এ পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত নয়। কারণ যেখানে কাজের সুযোগ বেশি বা বাড়ন্ত, অভিবাসী বা শরণার্থী সেখানেই বসতি স্থাপন করে। সুতরাং শরণার্থী প্রবেশের আগে ও পরের বেকারত্বের সংখ্যা বেকারত্বের ওপর অভিবাসীর প্রভাব প্রকাশ করে না।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য কার্ড একটি
প্রাকৃতিক পরীক্ষা
পদ্ধতির সাহায্য
নেন। ১৯৮০
সালে কিউবার
তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো ঘোষণা
করেন, কেউ
যদি কিউবা
ছেড়ে অন্য
কোথাও যেতে
চায়, তাহলে
তারা যেতে
পারে। এ ঘোষণার পর
প্রায় ১ লাখ ২৫
হাজার অভিবাসী
কিউবা ছেড়ে
যুক্তরাষ্ট্রে চলে
আসে এবং
এদের প্রায়
সবাই মিয়ামি
অঙ্গরাজ্যে বসতি
স্থাপন করে।
কিউবান অভিবাসনের পর কার্ড মিয়ামিতে বেকারত্ব ও মজুরির
চিত্র বিশ্লেষণ করেন এবং অন্য
চারটি অঙ্গরাজের সঙ্গে এসব নিয়ামকের পরিবর্তন পর্যালোচনা করে
দেখান যে
অন্য রাজ্যের
তুলনায় মিয়ামি
অঙ্গরাজ্যে বেকারত্বের হারও বাড়েনি এবং
মজুরিও কমেনি।
কারণ হিসেবে
কার্ড দেখান,
যেহেতু মার্কিনদের মতো কিউবানদের ইংরেজি
ভাষাগত দক্ষতা
নেই, তাই
যেসব কাজে
ইংরেজি ভাষার
দক্ষতা প্রয়োজন,
মার্কিনরা সেখানে
স্থানান্তর হয়েছে,
আর যেসব
কাজে ভাষাগত
দক্ষতার খুব
একটা দরকার
নেই, কিউবানরা সেখানে কাজ নিয়েছে।
অর্থনীতি একটি গতিশীল ক্ষেত্র। মানুষের কাজকর্মের ধরন
পরিবর্তনের সঙ্গে
সঙ্গে অর্থনীতির বিশ্লেষণ কাঠামোরও পরিবর্তন হয়। প্রাকৃতিক পরীক্ষা
পদ্ধতি তারই
একটা ধারাবাহিকতা। এ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থনীতির মৌলিক প্রশ্নের উত্তর
জানা আরো
সহজ হলো।
অদূরভবিষ্যতে এ পদ্ধতি প্রয়োগের আওতা বাড়লে সীমিত
সম্পদের অধিকতর
অর্থপূর্ণ ব্যবহার
নিশ্চিত হবে।
ড. মোহাম্মদ দুলাল মিয়া: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
ফাইন্যান্স ও অর্থনীতি বিভাগ, নিজওয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ওমান