বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের পরিকল্পনা মেক্সিকোর

বণিক বার্তা ডেস্ক

দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে পরিবর্তন আনতে একটি বিল উত্থাপন করেছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে শতাধিক ব্যক্তিমালিকানার বা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ সংকুচিত হয়ে পড়বে। পাশাপাশি মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাভিত্তিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে পড়বে। খবর এপি।

প্রেসিডেন্ট উত্থাপিত পন্থায় সাংবিধানিক সংস্কার হলে ৩৪টি ব্যক্তিমালিকানার বিদ্যুৎকেন্দ্র, যারা জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তাদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি শেষ হয়ে যাবে। পরিকল্পনার আলোকে অবৈধ হয়ে যাবে ২৩৯টি ব্যক্তিমালিকানার বা বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র। যারা সরাসরি মেক্সিকোর করপোরেট গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে। পাশাপাশি অনেক দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ চুক্তি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ক্রয় পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যাবে, যা মেক্সিকোতে বিনিয়োগ করা বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

পরিকল্পনায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য প্রায় শেষের দিকে রাখা হয়েছে ব্যক্তিমালিকানার প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে। এর আগে আছে কেবল সরকারি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। যদিও ব্যক্তিমালিকানার কেন্দ্রগুলোতে ২৪ শতাংশ কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সরকারি যেসব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জ্বালানি তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, সেগুলোকেও ব্যক্তিমালিকানার বায়ু সৌরচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মেক্সিকোর জ্বালানিমন্ত্রী রোসিও নাহলে বলেন, বেসরকারি বা ব্যক্তিমালিকানার প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারের ৪৬ শতাংশের দখল নিতে চলেছে। তারা জাতীয়করণে মোটেও আগ্রহী নয়। তবে একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কার্যকরভাবে বন্ধ করা জাতীয়করণ করার মধ্যে পার্থক্যটা কী, সেটি তিনি ব্যাখ্যা করেননি।

দুই ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের কোনো লাভ হবে না। আবার থেকে উত্তরণও আসলে সম্ভব নয়। মোট কথা, পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ফেডারেল ইলেকট্রিসিটি কমিশনের মার্কেট শেয়ার অন্তত ৫৪ শতাংশ করতে চায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মেক্সিকোর জ্বালানি তেল রিফাইনারিগুলোয় উপজাত হিসেবে যা উৎপাদন হয়, সেগুলোকে পোড়ানোর জন্য সরকারি ইউলিটি কোম্পানি প্রয়োজন। সেজন্যই এসব অতিরিক্ত নোংরা তেল ব্যবহার করা হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। পেট্রল ডিজেল পরিশোধনের পর যে উপজাত তৈরি হয়, সেগুলো এতটাই নোংরা থাকে যে আর কেউ তা কিনতে চায় না। তাই সেগুলো ব্যবহারের জায়গা খুঁজছেন প্রেসিডেন্ট।

প্রেসিডেন্ট লোপেজ ওব্রাদর বলেন, যদি সংবিধান সংস্কারের বিলটি পাস না হয়, তাহলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গোটা বিদ্যুতের বাজারকেই দখল করে নেবে। এতে মেক্সিকোর অবস্থা হবে স্পেনের মতো। যেখানে বিদ্যুতের দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

তবে একটি পরিসংখ্যান বলছে, মেক্সিকোর বেসরকারি খাতে উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম খুব কমই বেড়েছে। ফলে এটিকে কেন স্পেনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে, তা অনেকের কাছেই বোধগম্য হচ্ছে না। বেশির ভাগ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, যেগুলো ২০১৩ সালের জ্বালানি সংস্কার কর্মসূচির সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলোর মালিকানা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হাতে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউএসএমসিএ বাণিজ্য চুক্তির আওতায় এসব বিনিয়োগকারী মেক্সিকো সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারেন। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য না করার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার সেটি মানছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন