প্রখ্যাত নাট্যকার, অভিনেতা, লেখক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ইনামুল হকের জামাতা লিটু আনাম বণিক বার্তাকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল দুপুরের খাবার খেয়ে চেয়ারে বসে রেস্ট নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায়ই তার মৃত্যু হয়। তার কোনো শারীরিক জটিলতা ছিল না। সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।’
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে লিটু আনামের কথা হয় গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায়। লিটু আনাম জানান, হাসপাতাল থেকে মরদেহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে আনা হয়েছে গোসল করানোর জন্য। তবে কোথায় কখন জানাজা ও দাফন করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
ড. ইনামুল হকের দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন বরেণ্য নাট্যজন লাকী ইনাম। তাদের সংসারে দুই মেয়ে হূদি হক ও প্রৈতি হক। ইনামুল ১৯৪৩ সালে ফেনীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৫ সালে প্রভাষক হিসেবে বুয়েটের রসায়ন বিভাগে যোগ দেন। একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেতা ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন আন্দোলনমুখী নাটকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে আইয়ুব খানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তত্কালীন অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেন নাট্যচর্চাকে হাতিয়ার করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সৃজনীর ব্যানারে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পথনাটক করেন। নটর ডেম কলেজে পড়াকালীন ড. ইনামুল হক প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। ফাদার গাঙ্গুলীর নির্দেশনায় তার প্রথম নাটক ‘ভাড়াটে চাই’। ১৯৬৮ সালে বুয়েট ক্যাম্পাসে ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’-এর যাত্রা হয়। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন ড. ইনামুল হক। এ দলের হয়ে প্রথম তিনি মঞ্চে অভিনয় করেন আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। টেলিভিশনের জন্য প্রায় ৬০টি নাটক লিখেছিলেন ড. ইনামুল হক। তার লেখা আলোচিত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘সেইসব দিনগুলি’
(মুক্তিযুদ্ধের নাটক), ‘নির্জন সৈকতে’
ও ‘কে বা আপন কে বা পর’। মঞ্চের জন্য ড. ইনামুল হকের লেখা প্রথম নাটকের নাম ‘বিবাহ উৎসব’। তার নিজ দল নাগরিক নাট্যাঙ্গনের জন্য প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘গৃহবাসী’। ঢাকার মঞ্চে বেশ আলোচিত নাটক এটি।
ড. ইনামুল হকের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।