চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলান। গতকাল বুধবার রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোরান কে হ্যানসন এ তথ্য জানান। গত বছরের মতো এবারো করোনা মহামারী পরিস্থিতির কারণে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী স্টকহোমে এক সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতায় তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এ সময় নোবেল কমিটির সদস্য ছাড়া আর কাউকে অনুষ্ঠানস্থলে রাখা হয়নি।
নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়া বেঞ্জামিন লিস্ট জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর কোল রিসার্চের পরিচালক। তিনি ১৯৬৮ সালে ফ্রাংকফুর্টে জন্মগ্রহণ করেন। অন্য বিজ্ঞানী ডেভিড ম্যাকমিলান যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। তিনি ১৯৬৮ সালে যুক্তরাজ্যের বেলশিলে জন্মগ্রহণ করেন।
নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে তাদের নাম ঘোষণা করে জানানো হয়, রসায়নে নোবেল পুরস্কার ২০২১ পেয়েছেন জার্মান বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন লিস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড ম্যাকমিলান। তাদের অবদান সম্পর্কে বলা হয়, অ্যাসিমেট্রিক অরগানোক্যাটালিস্ট উন্নয়নে তাদের পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অপ্রতিসম অরগানোক্যাটালিস্ট বা জৈব অনুঘটক বিক্রিয়া আবিষ্কার করেছেন এ দুই বিজ্ঞানী। এ পদ্ধতিতে নতুন ধরনের অনুঘটন ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে অণু গঠন করা সম্ভব। বলা হয়, তাদের এ আবিষ্কারের ফলে ওষুধ শিল্প ও গবেষণা খাত আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
বেঞ্জামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলানের আবিষ্কারের আগে সব প্রভাবককে দুই ভাগে ভাগ করা যেত। এগুলো হলো ধাতু ও এনজাইম। এই দুই বিজ্ঞানীর আবিষ্কারে তৃতীয় ধরনের অনুঘটন প্রক্রিয়া জানা গেল। অ্যাসিমেট্রিক অর্গানোক্যাটালাইসিস বা অপ্রতিসম জৈব অনুঘটন প্রক্রিয়ায় অতিক্ষুদ্র জৈব অণু প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার হয়।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকীগুলো জানিয়েছে, তাদের কাজের ফলে শুধু ওষুধ নয়, সোলার সেল বা সৌরকোষে আলো ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অণু দ্রুত ও কার্যকরভাবে বানানো সম্ভব হচ্ছে। এ কারণেই বেঞ্জামিন লিস্ট ও ডেভিড ম্যাকমিলানের কাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
নোবেল কমিটি ফর কেমিস্ট্রির প্রধান জোয়ান একভিস্ট বলেন, অনুঘটনের জন্য এ ধারণা সিম্পলি অসাধারণ। অনেকে জেনে খুব অবাক হবে এ কারণে যে, বিষয়টি কেন আগে আমাদের মাথায়ই এল না।
পুরস্কার হিসেবে দুজন মিলে পাবেন ১ কোটি ক্রোনার (১১ লাখ ডলারের বেশি) ও স্বর্ণপদক। এ টাকা দেয়া হবে নোবেলের প্রবর্তক ও উদ্ভাবক আলফ্রেড নোবেলের সম্পদ থেকে। তিনি মারা যান ১৮৯৫ সালে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে।
গত বছর ডিএনএ নিয়ে কাজ করে রসায়নে নোবেল জিতেছিলেন ফ্রান্সের এমানুয়েল শার্পেন্তিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার ডাউডনা নামে দুই বিজ্ঞানী।
এর আগে গত মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী তিনজনের নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী সিউকুরো মানাবে ও ক্লাউস হেসেলমান এবং ইতালির বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি জিতেছেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল। তাদের অবদান সম্পর্কে বলা হয়, জলবায়ু পরিস্থিতির ফিজিক্যাল বা ভৌত মডেল তৈরি, পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি অনুমানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন সিউকুরো মানাবে ও ক্লাউস হেসেলমান। সংস্থাটির বিবেচনায় পারিসির অবদান হলো পারমাণবিক ও গ্রহীয় পরিসরে ভৌত ব্যবস্থা বা ফিজিক্যাল সিস্টেমের বিশৃঙ্খলা ও ফ্লাকচুয়েশন পরস্পরের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা আবিষ্কার।
গত সোমবার মানবদেহ কীভাবে তাপমাত্রা ও স্পর্শ অনুভব করে, তার রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড জুলিয়াস ও লেবাননের আরডাম পাটাপুটান পান এ বছরের চিকিত্সাবিজ্ঞানের নোবেল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই দুই বিজ্ঞানীর অবদান হলো তারা দেখিয়েছেন কীভাবে মানবদেহ সূর্যের উত্তাপ কিংবা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা অনুভব করে।
পুরস্কার ঘোষণা করে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের আবিষ্কার মানবজাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথার চিকিত্সায় তাদের উদ্ভাবন নতুন পথের সন্ধান দেবে।
আজ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি। এছাড়া চলতি বছর শান্তিতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি দেয়া হবে আগামীকাল। সবশেষে ঘোষণা দেয়া হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম। এটি জানানো হবে আগামী সোমবার।