রহস্যজনক কারণে ছয় মাসে ডেল্টা লাইফের শেয়ারদর বেড়েছে ১৯৯%

নিজস্ব প্রতিবেদক

বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে অ্যাকচুরিয়াল বেসিস অনুমোদন না পাওয়ার কারণে দুই বছর ধরে নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারছে না ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ফলে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়নি, ঘোষণা হয়নি লভ্যাংশ। নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভেঙে দেয়া হয় পর্ষদ, নিয়োগ দেয়া হয় প্রশাসক। আবার চার মাসের মাথায় প্রশাসক পরিবর্তনও করা হয়। এসব অনিশ্চয়তা বিতর্কের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছয় মাসে ১৯৯ শতাংশ বেড়েছে।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ডেল্টা লাইফের শেয়ারদর ছিল ৬২ টাকা ৪০ পয়সা। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির ১১ হাজার ৪৮২টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকেই ডেল্টা লাইফের শেয়ারদর বাড়তে শুরু করে। বছরের ২৮ জুন কোম্পানিটির সবচেয়ে বেশি কোটি লাখ শেয়ার লেনদেন হয়। সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৮৬ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এদিন ডিএসইতে কোম্পানিটির ১৬ লাখের বেশি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে ডিএসইর পক্ষ থেকেও চিঠি দেয়া হয়েছে। এর জবাবে গতকাল কোম্পানিটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি শেয়ারের লেনদেন বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্যসংবেদনশীল তথ্য নেই।

আইডিআরএর কাছ থেকে ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ করতে পারেনি ডেল্টা লাইফ। এতে ২০২০ হিসাব বছরের অনিরীক্ষিত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের বিষয়টিও ঝুলে গেছে। এমনকি চলতি ২০২১ হিসাব বছরের প্রথম দুই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে পারেনি কোম্পানিটি। ডেল্টা লাইফ সর্বশেষ ২০১৯ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। আর্থিক প্রতিবেদনের পাশাপাশি কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনের বিষয়টিও আটকে রয়েছে। এতে কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা দুই বছর ধরে কোনো ধরনের লভ্যাংশও পাচ্ছেন না। অবস্থায় ডেল্টা লাইফের শেয়ারদরে উল্লম্ফনের বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, পুঁজিবাজারের কতিপয় আলোচিত বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ারে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছেন। তারা রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) কাছ থেকেও কোম্পানিটির বড় অংকের শেয়ার কিনেছেন। এসব কারণে আর্থিক পারফরম্যান্স দৃশ্যমান না হলেও ডেল্টা লাইফের শেয়ারদর বাড়ছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কারণ ছাড়াই ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেনকোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের নজরদারির আওতায় রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার কারা কিনছেন সে তথ্য আমাদের কাছে আছে। এরই মধ্যে আইসিবি কর্তৃক ডেল্টা লাইফের শেয়ার বিক্রির বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ আইনের কোনো ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে কমিশন ব্যবস্থা নেবে।

পলিসিহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায় বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ দেয় বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) অবশ্য পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে গিয়েছে কোম্পানিটির পর্ষদ। পাশাপাশি কোম্পানির পক্ষ থেকে আইডিআরএর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এখন বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখছে। অন্যদিকে আইডিআরএ চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকেও কোম্পানিটির পর্ষদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে কোম্পানিটির ওপর আইডিআরএর পক্ষ থেকে বিশেষ অনুসন্ধানমূলক নিরীক্ষা করানো হয়েছে, যাতে বেশকিছু অনিয়মও উঠে এসেছে। বিএসইসিও কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকেও ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে বড় অংকের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চতুর্মুখী সমস্যায় জর্জরিত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যদিও কোম্পানির এসব সমস্যার কোনো প্রতিফলন নেই শেয়ারদরে।

বিষয়ে জানতে চাইলে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক পরিচালক জিয়াদ রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, আইডিআরএ কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই আমাদের অ্যাকচুরিয়াল বেসিস অনুমোদন আটকে রেখেছে। এতে আমরা আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারছি না। এজন্য এজিএমও আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে কোম্পানির পলিসিহোল্ডার শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির শেয়ার কেন বাড়ছে তা আমিও জানি না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন