বাড়লেও করোনা-পূর্ব অবস্থায় ফিরবে না বৈশ্বিক তুলা উৎপাদন

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলতি বছর তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে ২ কোটি ৫৭ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে ছবি: রয়টার্স

২০২১-২২ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন শতাংশ বাড়তে পারে। উৎপাদন প্রবৃদ্ধিতে জ্বালানি জোগাবে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি ২০২১-২২ মৌসুমের জন্য করা তুলা উৎপাদন মজুদ প্রক্ষেপণ প্রতিবেদনে তথ্য জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কটন অ্যাডভাইজরি কমিটি (আইসিএসি)

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর তুলার বৈশ্বিক উৎপাদন বেড়ে কোটি ৫৭ লাখ টনে উন্নীত হতে পারে। এটি গত বছরের তুলনায় শতাংশ বৃদ্ধি। তবে উৎপাদন বাড়লেও তা মহামারী-পূর্ব উৎপাদনের নিচে অবস্থান করবে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুতা উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে তুলার প্রতিযোগিতা বাড়ছে। একই সঙ্গে তুলা উৎপাদনে বাধ্যতামূলক শ্রম জলবায়ু দূষণসংক্রান্ত নানা বিষয়ও সামনে আসতে শুরু করেছে। এসব বিষয় পণ্যটির সরবরাহ ধারাকে সংকুচিত করে তুলতে পারে।

আইসিএসি জানায়, ২০২০-২১ মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক মজুদ কমে দুই কোটি টনে নেমে যায়। এটি ২০২১-২২ মৌসুমের সরবরাহ চক্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। সময় সরবরাহ দাঁড়াবে প্রায় কোটি ৫৮ লাখ টনে। বিশ্বজুড়ে কোটি ৫৯ লাখ টন তুলা ব্যবহার হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইসিএসি।

সরবরাহের বিপরীতে চাহিদা বৃদ্ধি মজুদ ঘাটতির আশঙ্কাকে আরো তীব্র করে তুলছে উৎপাদনের পূর্বাভাস। চলতি বছর পণ্যটির উৎপাদন বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে তার হার অত্যন্ত সীমিত। ইনডেক্সবক্স বলছে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ তুলা উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর করোনার প্রভাবে উৎপাদন তলানিতে নেমে আসে। বছর বাড়লেও তা মহামারী-পূর্ববর্তী রেকর্ড সীমা স্পর্শ করতে পারবে না।

এক নোটে আইসিএসি জানায়, ২০২০-২১ মৌসুমে তুলার বিশ্ব বাণিজ্য রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছে। নতুন মৌসুমে কোটি ২৯ লাখ টন বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ ২০২১-২২ মৌসুমও ইতিবাচক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শেষ হবে। বিশেষ করে অনেক উন্নত দেশে টেক্সটাইল পণ্যের খুচরা বিক্রি নতুন মাত্রা পাবে। বিষয়টি পণ্যটির বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রধান ভূমিকা রাখবে।

আইসিএসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে তুলার গড় বাজারদরে ঊর্ধ্বমুখিতা অব্যাহত থাকবে। সময় প্রতি পাউন্ড তুলার দাম ৮২-১২৭ সেন্টের মধ্যে ওঠা-নামা করতে পারে।

বিশ্বজুড়ে তুলার ব্যবহারে উল্লম্ফন দেখা দেয়ায় আগস্টের শুরুর দিকেই পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন ঘুরে দাঁড়ানোর ইংগিত দিয়েছিল আইসিএসি। ভারতে তুলা উৎপাদনে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। দ্য ট্রেডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১-২২ মৌসুমে ভারতে ৩৯৫ লাখ বেল (প্রতি বেলে ১৭০ কেজি) তুলা উৎপাদন হতে পারে। ২০২০-২১ মৌসুমে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৫৬ লাখ বেল। ভারতে সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয় গুজরাটে। অতিবৃষ্টি বন্যা সত্ত্বেও রাজ্যের উৎপাদন পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।

শীর্ষস্থানীয় পণ্যবাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সবক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেক্সটাইল খাতে তুলার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্যটির বৈশ্বিক মজুদ কমে তিন বছরের সর্বনিম্নে নেমে গেছে। যদিও চলতি বছর তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিও। তবে সরবরাহের অনুপাতে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তুলার মূল্যবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

গ্লোবাল ট্রেড ম্যাগাজিন বলছে, বৈশ্বিক জনসংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পোশাকের প্রয়োজনীয়তা। এছাড়া অন্যান্য টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখী। মূলত এসব কারণেই তুলার চাহিদা ফুলেফেঁপে উঠছে। এতে পণ্যটির বাজারদর নতুন মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বৈশ্বিক তুলা উৎপাদনে তৃতীয় যুক্তরাষ্ট্র। ইনডেক্সবক্সের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বছর দেশটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় সর্বাধিক তুলা উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় লাখ ২৩ হাজার টন। ব্রাজিলে উৎপাদিত হবে প্রায় লাখ ৩৬ হাজার টন। অস্ট্রেলিয়ায় উৎপাদিত হবে লাখ ৩৯ হাজার টন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন