দরবৃদ্ধি নিয়ে নির্বিকার স্টক এক্সচেঞ্জ

ব্যবসা কমলেও চার মাসে ইউনিক হোটেলের শেয়ারদর বেড়েছে শতভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা সংক্রমণের কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতের ব্যবসায়। এতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ভ্রমণ অবকাশ খাতের কোম্পানি ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেডের ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির ব্যবসা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৭ শতাংশ কমে গেছে। ব্যবসা কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়লেও সময়ে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের শেয়ারদর বেড়েছে প্রায় শতভাগ।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বছরের জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩১ টাকা ২০ পয়সা। ওইদিন কোম্পানিটির মাত্র ৯৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এরপর থেকেই ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের শেয়ারদর ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী। সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এর মধ্যে বছরের ২১ জুন ১৫ লাখ, ১৯ সেপ্টেম্বর ২৩ লাখ, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৬ লাখ সর্বশেষ গতকাল কোম্পানিটির ১০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গতকাল লেনদেন শেষে ইউনিক হোটেলের শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৬২ টাকা ২০ পয়সা। গত চার মাসে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৯৯ শতাংশ।

সাধারণত কারণ ছাড়াই কোনো কোম্পানির শেয়ারদর বাড়লে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে সেই কোম্পানির কাছে চিঠি পাঠিয়ে শেয়ারদর বাড়ার পেছনে কোনো ধরনের মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। তবে ইউনিক হোটেলের শেয়ারদর গত কয়েক মাসে প্রায় দ্বিগুণ হলেও বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে কোম্পানিটির কাছে কোনো কারণ জানতে চাওয়া হয়নি। অন্তত বিষয়ে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ইউনিক হোটেলের নিউজ আর্কাইভে কিছু পাওয়া যায়নি।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বণিক বার্তাকে বলেন, কোম্পানির শেয়ারদর বাড়া-কমার পেছনে কোনো ধরনের আইনবিরুদ্ধ কার্যক্রম রয়েছে কিনা সেটি কমিশন দেখে থাকে। এক্ষেত্রে ধরনের কোনো কিছু ঘটলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির আয় হয়েছে ৫০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ১৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির আয় কমেছে ১০২ কোটি টাকা। ২০২০-২১ হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের কোটি ৭০ লাখ টাকা কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ৩৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছিল। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ১৯ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে তাদের শেয়ারপ্রতি আয় ছিল টাকা ১৯ পয়সা। বছরের ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৭৯ টাকা পয়সায়। করিম অ্যাসোসিয়েটসের কাছ থেকে পাওনা কোটি ৭১ লাখ টাকার পুরোটাই সঞ্চিতি হিসেবে রাখতে হয়েছে ইউনিক হোটেলকে। এর ফলেও কোম্পানিটির মুনাফা ইপিএসে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এদিকে কভিড পরিস্থিতির কারণে বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে চলাচলে বিধিনিষেধ বিরাজমান ছিল। ফলে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের শেষ প্রান্তিকেও (এপ্রিল-জুন) ইউনিক হোটেলের ব্যবসা ভালো যায়নি।

২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে উদ্যোক্তা-পরিচালক ছাড়া অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৯৫ পয়সা, যা এর আগের হিসাব বছরে ছিল টাকা পয়সা।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের এপ্রিলে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের সাবসিডিয়ারি ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ শেয়ার কাতারের দোহাভিত্তিক কোম্পানি নিবরাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভির কাছে বিক্রির বিষয়ে একটি ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। চার ধাপে শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানির বড় অংকের অর্থ আয় হবে। এছাড়া গত এপ্রিলে জমি বিক্রি থেকে কোম্পানির মূলধনি মুনাফা অর্জন-সংক্রান্ত একটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে কভিড পরিস্থিতির উন্নতির কারণে বর্তমানে ওয়েস্টিন হোটেলের অতিথিদের সমাগমও বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে এসব কারণে কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে পাবে বলে মনে করছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন