একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে

ড. মো. আনোয়ার হোসেন

একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ক মোটেই নতুন নয়। তবে সময়ের পরিক্রমায় সম্পর্কে মাত্রাগত পরিবর্তন এসেছে। একাডেমিয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ক মিথজীবী বা সিমবায়োকিট সম্পর্ক। অর্থাৎ স্ব স্ব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তারা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান শর্ত হলো দ্রুত শিল্পায়ন। এমনকি জাতীয় অগ্রগতি অসম্ভব শিল্পায়ন ছাড়া। পৃথিবীতে এমন একটিও দেশ নেই, যা শিল্পায়ন ছাড়া উন্নত হয়েছে। কারণে আমরা উন্নত দেশের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করি শিল্পোন্নত দেশ। কিন্তু শিল্পায়ন নির্ভর করে প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিকাশের ওপর। যেকোনো দেশের অনগ্রসরতার মূল কারণ বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে পশ্চাত্পদতা। যেকোনো দেশে বিজ্ঞান প্রযুক্তি গবেষণায় যত বেশি বরাদ্দ থাকে, সে দেশ তত বেশি উন্নত। প্রযুক্তির চাহিদা নিরূপণ হয় সংশ্লিষ্ট দেশ বা জনগণের সমস্যার ওপর। যেকোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান তখনই সফল হয় যখন সেটি মার্কেটের চাহিদা নিরূপণ করতে সে চাহিদার আলোকে পণ্য বা সেবা প্রস্তুত এবং সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।

মার্কেটের চাহিদা নিরূপণ সে অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনউভয় ক্ষেত্রে প্রয়োজন গবেষণা। আর এক্ষেত্রে একাডেমিয়া তাদের গবেষণা দ্বারা শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করবে। আবার একজন গবেষকের গবেষণা করার জন্য প্রয়োজন গবেষণা ফান্ড। আর ফান্ডের জন্য প্রয়োজন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা। এছাড়া গবেষকের গবেষণালব্ধ কোনো প্রযুক্তি ব্যবসাসফল না হলে সে প্রযুক্তি টিকে থাকতে পারে না। যেকোনো প্রযুক্তি ব্যবসাসফল করার জন্য প্রয়োজন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা। তাই একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যকার সম্পর্ক অনস্বীকার্য অপরিহার্য।

নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন বা উদ্ভাবিত প্রযুক্তির উন্নতি সাধনে যেমন একাডেমিয়ার সাহায্য প্রয়োজন, তেমনি নতুন পণ্য উৎপাদন, বিপণন শিল্পপ্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় প্রয়োজন সুদক্ষ জনবল, যা বিশ্ববিদ্যাগুলো সরবরাহ করে থাকে। কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানুষের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের চাহিদার নিরিখে নতুন প্রযুক্তি পণ্য উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা পরিচালনার পাশাপাশি দেশের জন্য দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির কাজ করে। মানুষের চাহিদা নিরূপণে যে গবেষণা সেটাও পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট দ্বারা। গবেষণার জন্য উন্নত গবেষণাগার গবেষণা-সহায়ক সামগ্রী প্রয়োজন হয়, যা ব্যয়বহুল। ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। আবার শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজেই যদি এরূপ গবেষণা পরিচালনা, প্রযুক্তি উদ্ভাবন গ্র্যাজুয়েট তৈরির দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করে তাহলে সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে উঠবে। কারণ, দুটি ক্ষেত্র একই সূত্রে গাঁথা হলেও তাদের কর্মধারা পরিধি আলাদা। কারণে একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করবে, চাহিদা নির্ণয় পূরণে একে অন্যের পরিপূরক ভূমিকা রাখবে।

উন্নত বিশ্বে একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক: প্রতিটি উন্নত দেশের চিত্র লক্ষ করলেই দেখা যাবে, শিল্পায়নের প্রয়োজনেই উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণায় বিপুল ব্যয় করা হয়েছে। প্রথমদিকে বিনিয়োগের পুরোটাই এসেছে সরকারি কোষাগার থেকে। কিন্তু শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা যখন গবেষণার সুফল ঘরে তুলতে শুরু করলেন, নিজেরাও গবেষণায় মনোনিবেশ করলেন এবং মূল কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করলেন, ক্রমান্বয়ে কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পেল, যার ধারাবহিকতা আজও অব্যাহত আছে। কিন্তু শুরুতে চিত্র এমন ছিল না। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফান্ড সরবরাহ করবে আর একাডেমিয়া গবেষণা করবেএটাই হলো একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সহযোগিতার মূল ভিত্তি। কিন্তু একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি অন্যতম প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সেটি হলো যেকোনো উদ্ভাবনের স্বত্ব বা মালিকানা কার সেটি। আমেরিকার মতো দেশেও ১৯৮০ সালের আগে যখন The Stevenson-Wydler Act 1980 and The  Bayh–Dole Act or Patent and Trademark Law Amendments Act-1980 পাস হয়নি, যখন ফান্ড সরবরাহকারীই পেটেন্টের মালিক হতেন, তখন দেখা গেছে আমেরিকান সরকার ২৮ হাজার পেটেন্টের মালিক হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়-সফল হয়েছে শতাংশেরও কম। ১৯৮০ সালে যখন The  Bayh–Dole Act or Patent and Trademark Law Amendments Act-1980 পাস হয়, যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল উদ্ভাবকই সংশ্লিষ্ট পেটেন্টের মালিক হবেন। আইন একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার করে। আমেরিকান সরকার প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিজ্ঞান গবেষণায় বিনিয়োগ করে। সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেমন Department of Energy, NASA, Pentagon, The National Institutes of Health (NIH) তাদের নিজস্ব গবেষক ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করে। তারপরও NIH প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ শত শত বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মেডিকেল স্কুলগুলোতে বিনিয়োগ করে। ফেডারেল সরকার প্রতি বছর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মোট গবেষণা বরাদ্দের ৬০ শতাংশ বিনিয়োগ করে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ চীনের দিকে দৃষ্টি দিলেও আমরা একই চিত্র দেখব। চীনের মোট গবেষণা বাজেটের ৪০ শতাংশ আসে প্রাইভেট খাত থেকে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনে বিশ্ববিদ্যালয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান যৌথ গবেষণা বৃদ্ধির ফলে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০২ সালে পেটেন্ট ট্রান্সফারের সংখ্যা ২৯৮টি থেকে বেড়ে ৫৩২টিতে দাঁড়ায়। একই ধরনের চিত্র আমরা দেখব জাপান, থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ার উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশে বর্তমানে একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক: বাংলাদেশে একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক এখনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেনি। দেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো নতুন পণ্য উদ্ভাবন উৎপাদনের মাধ্যমে ব্যবসা করার মানস তৈরি হয়নি। আমরা এখনো অন্য দেশ কর্তৃক উদ্ভাবিত পণ্য উৎপাদন করি। ফলে পেটেন্ট রাইট সংরক্ষণ করে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্ববাজার থেকে ব্যাপক মুনাফা লাভের পরিবেশ তৈরি হয়নি। প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা দেশ-কালভেদে সমান নয়। প্রযুক্তি গবেষণা হয় সংশ্লিষ্ট দেশের সমস্যা সামনে রেখে। একেকটি দেশের সমস্যার প্রকার প্রকৃতি ভিন্ন। আর্থসামাজিক ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট ভিন্নতার কারণে প্রযুক্তির কার্যকারিতাও ভিন্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক। তার অর্থ নয়, বিদেশী প্রযুক্তির প্রয়োজন নেই। কিন্তু কোনো দেশে যদি শিল্পোদ্যাক্তাদের মাঝে ধারণা বদ্ধমূল থাকে যে, বিদেশী প্রযুক্তির ভিত্তিতেই শিল্পায়ন ঘটাবে তাহলে সেটা অসম্ভব। যথাযথ শিল্পায়ন ঘটানোর জন্য প্রয়োজন নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কার। বিদেশী প্রযুক্তি আত্মস্থকরণের পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কিন্তু ট্রিপস চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে আগামী দিনে শুধু কপি-প্রডাক্ট উৎপাদন করে ব্যবসা চালানো কঠিন হবে। ট্রিপস চুক্তির বর্ধিত মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের আগেই অকার্যকর হতে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য চুক্তির আওতায় মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার সুযোগ ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু অর্থনৈতিক অগ্রগতির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হবে উন্নয়নশীল দেশে এবং বছর আগেই অর্থাৎ ২০২৭ সালেই বাংলাদেশ সুযোগ হারাবে। ফলে বাংলাদেশে ওষুধের উৎপাদন খরচ দাম দুটিই বেড়ে যাবে। পরিস্থিতিতে দেশে যদি শিল্পায়নের প্রয়োজনকে সামনে রেখে গবেষণা বাড়ানো না হয়, তাহলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ধাক্কা সামলানো খুবই কঠিন। ফলে জায়গাটিতে অবশ্যই হাত দিতে হবে। তবে আশার কথা হলো, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে হেকেপ প্রজেক্টের মাধ্যমে গবেষণার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচিতি তৈরি হয়েছে। প্রস্তাবিত Higher Education Acceleration and Transformation (HEAT) প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে হেকেপ প্রজেক্টের মাধ্যমে একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক যতটুকু এগিয়েছে তা আরো ত্বরান্বিত হবে।

বর্তমান বিশ্ব যে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে ধাপিত হচ্ছে, আমরা চাই বা না চাই, বিপ্লবের ছোঁয়া আমাদের লাগবেই। এর জন্য চাই প্রস্তুতি। জননেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেয়ার সময়ই আমাদের নতুন বিপ্লবে শামিল হতে সুযোগ করে দেন। তার নেতৃত্বে সবার জন্য কানেকটিভিটি, জনগণের হাতের মুঠোয় সরকারি সেবা নিয়ে যাওয়া, বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরি আর তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ চার ক্ষেত্রেই গত বছরে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। আর এর যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক। 

একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কোন্নয়নে করণীয়: অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের ন্যায় বাংলাদেশও দারিদ্র বেকারত্বের কারণে উদ্ভূত সমস্যা মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। ফলে নীতিনির্ধারকরা ব্যয়বহুল এবং ফলপ্রাপ্তি দীর্ঘমেয়াদি অনিশ্চিত হওয়ার কারণে গবেষণাকে এক ধরনের বিলাসিতা অপচয় মনে করেন। আমাদের নীতিনির্ধারক শিল্পপতিরা রাতারাতি বিজ্ঞান গবেষণার সুফল পেতে চান। ফলে তারা ব্যয়বহুল দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় আগ্রহী নন। বিজ্ঞান গবেষণাকে তাত্ক্ষণিক লাভের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করা হলে সাফল্য নিশ্চিত। আরো একটি বিষয় হলো, গবেষকবৃন্দকে আগ্রহী করে তোলা। এজন্য প্রয়োজন কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন। The  Bayh–Dole Act 1980 এবং The Stevenson-Wydler Act 1980-এর আদলে বাংলাদেশে প্রচলিত Patent and Trademark Act এর সংশোধনী আনা হলে একজন উদ্ভাবক/গবেষক তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির পেটেন্টের অধিকারী হতে পারবেন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের অধিকার সংরক্ষণ করবেন, কারণ -সংক্রান্ত কোনো আইন বা নীতিমালা বাংলাদেশে নেই। ফলে যারা গবেষণা করছেন তারা মালিকানা প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতায় পড়ছেন যা গবেষকদের গবেষণাকর্মে নিরুৎসাহিত করছে। যদি গবেষণা-বান্ধব আইন প্রণয়ন করা যায়, গবেষকরা উৎসাহিত হবেন এবং নতুন নতুন উদ্ভাবন সম্ভব হবে। সাধারণত কোনো গবেষক স্বাভাবিকভাবেই কোনো প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বা তা ব্যবহার করে ব্যবসা করতে যাবেন না, কারণ ব্যবসা করার মতো মাইন্ডসেট, সময় মূলধন একজন গবেষকের থাকে না। ফলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রধান সুবিধাভোগী হবেন ব্যবসায়ীরা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে যৌথ গবেষণার জন্য। তাতে লাভবান হবে সর্বাগ্রে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোপরি দেশের অর্থনীতি এবং জনগণ।

প্রযুক্তি উদ্ভাবন পণ্য উৎপাদনের মধ্যবর্তী পর্যায়ে প্রযুক্তিকে অধিকতর ব্যবহারযোগ্য সহজলভ্য করে তোলার জন্য নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন, যেখানে দরকার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। আগামী -১০ বছরের মধ্যে যদি দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিকাশ তা শিল্প খাতে ব্যবহার নিশ্চিত করা না যায় তাহলে মেধাস্বত্ব প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথমে শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে এবং পরবর্তী সময়ে জনগণকে প্রচুর অর্থ পরিশোধ করতে হবে বিদেশী স্বত্ব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানকে, যার প্রত্যক্ষ বিরূপ প্রভাব পড়বে রাষ্ট্র এবং তার অর্থ ব্যবস্থার ওপর। কারণ তখন আর বিনা পয়সায় অন্যের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদন, বিপণন করা যাবে না। ফলে বিরূপ অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলা করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে একাডেমিয়া-শিল্পপ্রতিষ্ঠান সম্পর্ক শক্তিশালী করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ পৃষ্ঠপোষকতা। কারণ আমরা দেখি, আমেরিকার মতো দেশেও যেখানে প্রাইভেট সেক্টর অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অংশীদার সেখানেও গবেষণা বরাদ্দের ৬০ শতাংশ আসে ফেডারেল সরকার থেকে। চীন-জাপানের ক্ষেত্রেও একই চিত্র লক্ষ্য করা যায়। তাই আমাদেরকেও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল পেতে হলে একই মডেল অনুসরণ করতে হবে, সরকার তথা রাষ্ট্রকেও শক্তিশালী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

 

. মো. আনোয়ার হোসেন: উপাচার্য, যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধ্যাপক, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন