রাজবাড়ীতে বিদ্যালয় ভবন পদ্মায় বিলীন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী

রাজবাড়ী সদর উপজেলার চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন গতকাল পদ্মার পেটে চলে যায় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চর সিলিমপুর এলাকায়। গতকাল সকাল থেকে শুরু হওয়া ভাঙনে বিকাল পর্যন্ত রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধের স্থায়ীভাবে নির্মিত সিসি ব্লকের অন্তত ১০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়। এছাড়া বিকাল সাড়ে ৪টার সময় ভাঙনের কারণে দেবে গিয়ে পদ্মার পেটে চলে যায় চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি। এখনো ভাঙন ঝুঁকিতে অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি রাজবাড়ী শহর রক্ষাবাঁধ।

এর আগে ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে বিদ্যালয়সংলগ্ন পদ্মা নদীর ডানতীর রক্ষাবাঁধে ভাঙন শুরু হয়। এতে প্রায় ৪০-৫০ মিটার সিসি ব্লক নদীতে বিলীন হয়। হঠাৎ সিসি ব্লক ভেঙে নদীতে চলে যাওয়ায় চরম হুমকিতে পড়ে বিদ্যালয়টিসহ মসজিদ অর্ধশতাধিক বসতভিটা। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি টিনশেড ঘরে পাঠদান শুরু করে।

সরেজমিনে গতকাল বিকালে চর সিলিমপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে উত্সুক জনতা ভিড় করে ভাঙনের চিত্র দেখছে। আর প্রমত্তা পদ্মার ভাঙনে বড় বড় চাপ ভেঙে পড়ছে। সেই সঙ্গে চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটিও আস্তে আস্তে নদীতে দেবে যায়। চোখের সামনে এলাকার বিদ্যালয় ভবনটি নদীতে চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অনেকে আফসোস করতে থাকেন। আবার অনেকে কেঁদে ফেলেন।

চর সিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা আছিয়া বেগমের কান্না যেন থাকছেই না। কান্নার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামী নেই। প্রমত্তা পদ্মা দুবার গিলে খেয়েছে বসতবাড়ি। এখন যেখানে বসবাস করছি সেটিও যায় যায় অবস্থা। তাই কান্না ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

একই এলাকার বাসিন্দা সেলিম হোসেন বলেন, গত সপ্তাহের দুই দিনে অন্তত ৪০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলার পরও তারা জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যে কারণেই আজকের (গতকাল) ভাঙন।

ভাঙনে চর সিলিমপুর বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ায় এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে কোনো ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, সেজন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইমান আলী ফকির বলেন, পদ্মার ভাঙনে পাকা ভবনটি নদীতে। ভাঙন যেভাবে অব্যাহত আছে তাতে টিনশেড ঘরটিও বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দু-তিন মাস আগে স্থায়ীভাবে সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধ দিয়েছে। সে ব্লক ভেঙে যাচ্ছে। কাজের গাফিলতি বা মান নিয়ে কোনো ত্রুটি ছিল কিনা, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন তিনি।

এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমি মো. সায়েফ, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর।

সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজবাড়ীর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, হঠাৎ পদ্মার পানি কমে যাওয়ার কারণে রাজবাড়ীর বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে আমরা সকাল থেকে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছি। আর আগামীকাল (আজ) সকাল থেকে জিও টিউব দ্বারা বালির ব্যাগ ফেলা শুরু হবে। ভাঙন রোধে যা যা করণীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড তা গ্রহণ করবে। এলাকার বসতবাড়ি রক্ষায় যত জিও ব্যাগ ফেলা প্রয়োজন, তত পরিমাণ জিও ব্যাগ ফেলার নির্দেশনা আছে বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন