৬ গ্রামের মানুষের চলাচলে ভরসা বাঁশের সাঁকো

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বগুড়া

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ভেলাবাড়ী এলাকাবাসীর নির্মিত সাঁকো ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

জেলার সারিয়াকান্দির ছয় গ্রামের মানুষের নদী পারাপারে সমস্যা দীর্ঘদিনের। দুর্ভোগের মধ্যেও কৃষিপণ্য, পরিবহন, সদর উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ, মানুষ পারাপার, ছোট যানবাহন পারাপার করতে এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটিও এলাকাবাসী নির্মাণ করেছে নিজেরাই চাঁদা তুলে।

নিজেদের দুর্ভোগ লাগবে স্থানীয়রা কারো বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ সংগ্রহ, কেউ লোহা, কেউ রশি এবং বাকিটা যে যার মতো চাঁদা তুলে নদী পারাপারে নির্মাণ করেছে বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো দিয়ে পাঁচ বছর ধরে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের ছয় গ্রামের মানুষ পারাপার হচ্ছে। স্থানীয়রা ওই এলাকায় স্থায়ীভাবে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে আসছে কয়েক দশক ধরে।

জানা যায়, বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলাটি যমুনা নদী বাঙালি নদী দিয়ে ঘেরা। উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব জোড়গাছা, সোনাপুর, ধামাচামা, বড়িয়া, কড়িতলা, জোড়গাছা গ্রামের প্রায় আট হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র পথ বাঙালি নদীর ওপর দিয়ে। বর্ষাকাল ছাড়া পানি থাকে না বলে এলাকাবাসীর চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ধান, পাট, মরিচসহ কৃষিপণ্য পরিবহনে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। বিকল্প হিসেবে সড়কপথ থাকলেও প্রায় তিন কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। সারিয়াকান্দি উপজেলা সদর হতে দক্ষিণে অবস্থিত ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের গ্রামে প্রবেশে বাঙালি নদীতে খেয়াঘাট ছিল। ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের সঙ্গেই জেলার গাবতলী উপজেলার আরো তিনটি গ্রামের মানুষও পথ দিয়ে চলাচল করত। কিন্তু খেয়াঘাটে টোল আদায় নিয়ে দুই উপজেলার গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পর এখানে নির্মাণ করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। প্রায় পাঁচ বছর আগে এলাকাবাসী খেয়াঘাটের পরিবর্তে বাগানের বাঁশ আর চাঁদা তুলে খেয়াঘাটে নির্মাণ করে একটি বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটিই এখন এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র সহজ পথ। হালকা যান চলতে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। আহত হচ্ছে পথচারী। সাঁকোটি ভেঙে গেলে গ্রামবাসী প্রতি বছর তাদের নিজস্ব অর্থায়নে মেরামত করে। সাঁকোর দুই পাশেই রয়েছে প্রায় দুই কিলোমিটার করে কাঁচা সংযোগ সড়ক। বর্ষাকালে হাঁটু সমান কাদা ডিঙিয়ে তারপর বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে সীমাহীন কষ্টে পার হতে হয় হালকা যানগুলোকে। যানগুলোর চাকাতে কাদা লেগে থাকার কারণে সাঁকোর বাঁশের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে চাকা স্লিপ করে দুর্ঘটনায় পড়ে। আর সাঁকোর ওপর কাদা ছড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া সাঁতার না জানা শিশু এবং নারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিনিয়ত। গ্রামগুলোতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য, ধান, পাট, শুকনা মরিচসহ অন্যান্য সবজিও পরবিহন হয় বাঁশের সাঁকো দিয়ে।

সাঁকোটিতে চলাচলকারী সাহিদুর রহমান জানান, সাঁকোটি দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। মোটরসাইকেল পার করতে হয় অতি সাবধানে। স্লিপ করলে নদীতে গিয়ে পড়তে হবে। এখানে হালকা যানগুলো পার করতে প্রায়ই দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, সমস্যাটি দুই উপজেলার জনসাধারণের দীর্ঘদিনের। তবে সেখানে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রুবেল উদ্দিন জানান, সমস্যাটি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। সরকারিভাবে এখানে সেতু নির্মাণ না করায় গ্রামবাসী তাদের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতি বছর সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল করে। বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তারা দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাঁকোটির বেশির ভাগ অংশই গাবতলী উপজেলার মধ্যে। তবে সারিয়াকান্দি উপজেলার লোকজনই এতে বেশি যাতায়াত করে। এখানে একটি সেতু নির্মাণের চেষ্টা চলছে। বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন